জেরুজালেমকে দখলদার ইসরাইলের রাজধানী’ ট্রাম্পের এ ঘোষণার প্রতিবাদে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মার্কিন দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর শান্তিনগরে তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। এ সময় দলটি আগামী শুক্রবার সারাদেশের জেলায় জেলায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়।
এর আগে সকোলে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে থেকে মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে মিছিল বের করে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
উল্লেখ্য, গত ৬ ডিসেম্বর রাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার বক্তৃতায় জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেন এবং তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস সেখানে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানান।
এ ঘোষণার পর ফিলিস্তিনসহ মুসলিম বিশ্বে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। গাজার প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস নতুন করে ইন্তিফাদার ডাক দেয়।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানানো হয়েছে এবং এই অঞ্চলের শান্তি নষ্টের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী দলগুলো ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন থেকে ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
রাজনৈতিক আত্মহননে ট্রাম্প কেনো এ সময়টাকে বেছে নিলেন?
ঢাকা: মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস তথা জেরুজালেমকে দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্বীকৃতি দেওয়ার পর ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ আবারও মুসলিম বিশ্বের প্রধান আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
ঢাকা: মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস তথা জেরুজালেমকে দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্বীকৃতি দেওয়ার পর ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ আবারও মুসলিম বিশ্বের প্রধান আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
মুসলিম বিশ্বের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে গত বুধবার জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই শহরে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের প্রক্রিয়াও শুরু করার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তার ওই ঘোষণার পর বিশ্বজুড়ে মার্কিন ও ইসরাইল বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয় এবং ফিলিস্তিন ও মুসলিম বিশ্বের নেতৃবৃন্দ ট্রাম্পের ওই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
মার্কিন কংগ্রেস ১৯৯৫ সালের ২৩ অক্টোবর তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে আমেরিকার দূতাবাস স্থানান্তরের প্রস্তাব পাস করেছিল। কিন্তু সেই থেকে এ পর্যন্ত তথা ২২ বছর পর্যন্ত মার্কিন সরকারগুলো ওই প্রস্তাব বাস্তবায়নের সাহস করেনি।
জেরুজালেম তথা আলকুদসকে ইসরাইলের দখল করা ভূখণ্ড বলে মনে করে জাতিসংঘ। তাই এ দখলদারিত্ব পুরোপুরি অবৈধ। জাতিসংঘের প্রস্তাবে জেরুজালেমসহ ১৯৬৭ সালে ইসরাইলের দখল-করা সব ভূখণ্ড ফিলিস্তিনিদের কাছে ফিরিয়ে দিতে বলা হয়েছে। আর ইসরাইলের এমন একটি অবৈধ দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে ট্রাম্প আগুন নিয়ে খেলা শুরু করেছেন বলে বিশ্বের বহু নেতা ও বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন।
প্রশ্ন হল ট্রাম্প কেনো এমন একটি ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বর্তমান সময়কে বেছে নিলেন? ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন ছিল এর অন্যতম কারণ। এ ছাড়াও পশ্চিম-এশিয়াসহ মুসলিম বিশ্বের পরিস্থিতি এবং মার্কিন ঘরোয়া রাজনীতিও তার এ সিদ্ধান্তে প্রভাব রেখেছে। কারণ, রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প ও তার ঘনিষ্ঠদের গোপন যোগাযোগ ফাঁস হওয়ার কেলেঙ্কারিকে ম্লান করার চিন্তাও ট্রাম্পের এই ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।
রাশিয়া বিষয়ক এই কেলেঙ্কারির কারণে ট্রাম্প ঘরোয়া রাজনীতিতে ব্যাপক চাপের শিকার হন এবং এর ফলে অনাস্থার শিকার হয়ে ট্রাম্প ক্ষমতা হারাতে পারেন বলেও বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছিলেন।
ট্রাম্প আগামী মার্কিন নির্বাচনেও রিপাবলিকান দলের বিজয় নিশ্চিত করতে এ দলের ভোট-ব্যাংক হিসেবে খ্যাত ইহুদিবাদী খ্রিস্টানদের ভোটও আকৃষ্ট করতে চান। তাই জেরুজালেমকে দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ইহুদিবাদী খ্রিস্টানদের খুশি করতে চেয়েছেন ট্রাম্প।
কোনো কোনো আরব শাসকের বিশ্বাসঘাতকতাও ট্রাম্পকে মুসলিম-বিদ্বেষী ও ইসরাইল-বান্ধব এই পদক্ষেপ নিতে উৎসাহ যুগিয়েছে।
ট্রাম্প গত মে মাসে সৌদি আরব সফর করে সৌদি রাজাসহ এ অঞ্চলের কয়েকজন আরব শাসকের কাছ থেকে এ নিশ্চয়তা পান যে ওয়াশিংটন পবিত্র জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে এবং এই পবিত্র শহরে আমেরিকার দূতাবাস স্থানান্তরের উদ্যোগ নিলে এই আরব সরকারগুলো জোরালো কোনো প্রতিবাদ করবে না।
কিন্তু বাস্তব বিষয় হল ইসরাইলি সম্প্রসারণকামীতার মোকাবেলায় ফিলিস্তিন ও জেরুজালেম ইস্যুকে এখন পর্যন্ত জীবন্ত রেখেছে ফিলিস্তিন এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিরোধ আন্দোলন ও সংগ্রামী দলগুলো। সৌদি সরকারসহ বিশ্বাসঘাতক আরব শাসকদের কোনো ভূমিকা তাতে নেই।
তাই আরব ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষকদের মতে ট্রাম্প যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন তা নেভানোর ক্ষমতা তার নেই এবং এ আগুনেই পুড়ে মরবে নেতানিয়াহু ও তার দলবল।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক আত্মহননের সঙ্গেই তুলনা করেছেন ইরানের নেতৃবৃন্দ। তার এ পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতি-অবস্থানকে অতীতের চেয়েও ব্যর্থ করে তুলবে এবং তা শেষ পর্যন্ত ইসরাইলের পতন-প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
No comments:
Post a Comment