দুই বছর আগে ‘শ্যাটো লুইস ফোরটিন’ যখন ৩০ কোটি ডলারে (প্রায় ২৪০০ কোটি টাকায়) বিক্রি হয় তখন ফরচুন ম্যাগাজিন একে ‘বিশ্বের সবচেয়ে দামি বাসভবন’ বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
এখন কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, প্রাসাদটি কিনেছিলেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি সৌদি আরবের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী এবং তার বহু পদক্ষেপে সৌদি আরব যেমন বদলে যাচ্ছে তেমনি মধ্যপ্রাচ্যে কম্পনের সৃষ্টি হচ্ছে।
মোহাম্মদ বিন সালমানের বেশ কয়েকটি অমিতব্যয়ী কেনাকাটার একটি হচ্ছে ওই শ্যাটো বা দুর্গসম প্রাসাদ। এ ছাড়া তিনি ৫০ কোটি ডলারে ইয়াট এবং প্রায় ৪৫ কোটি ডলারে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির একটি চিত্রকর্ম কিনেছেন। অথচ তিনি তার দেশে নজিরবিহীন দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালিয়ে প্রিন্স ও এলিটদের গ্রেফতার করছেন। সরকারি ব্যয় সংকোচন নীতিও অনুসরণ করছেন তিনি।
সিআইএর সাবেক পরিচালক এবং লেখক ব্রুস ও লেইডেল বলেন, ‘তিনি নিজের সাফল্যমণ্ডিত ভাবমূূর্তি গড়ার চেষ্টা করছেন। তিনি দেখাতে চাচ্ছেন তিনি আলাদা চরিত্রের, তিনি একজন সংস্কারক, অন্তত সমাজ সংস্কারক এবং তিনি দুর্র্নীতিবাজ নন। তবে এটা (এসব বিলাসী কেনাকাটা) তার ভাবমূর্তির ওপর একটি ভয়াবহ আঘাত।’
শ্যাটো লুইস ফোরটিনের কাহিনী জানতে নিউইয়র্ক টাইমস সাক্ষাৎকার নিয়েছে, তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে। ফ্রান্সের ভার্সেইলিসের কাছে লুভসিনের শ্যাটোটির মালিকানার তথ্য নিয়ে ফ্রান্স ও লুক্সেমবার্গের কোম্পানিগুলো অতি সতর্ক। এসব কোম্পানির মালিক এইট ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি নামে একটি সৌদি প্রতিষ্ঠান। মোহাম্মদ বিন সালমানের ব্যক্তিগত ফাউন্ডেশনের প্রধান এটির দেখভাল করেন। রাজপরিবারের উপদেষ্টারা বলছেন, শ্যাটোটির মালিকানা চূড়ান্ত বিচারে ক্রাউন প্রিন্সের।
এইট ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানিই ২০১৫ সালে রুশ ভোদকা প্রস্তুতকারক এক ধনকুবেরের কাছ থেকে মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য ৪৪০ ফুট দীর্ঘ ইয়াটটি কেনার ব্যবস্থা করেছিল। এই কোম্পানি প্যারিস থেকে এক ঘণ্টা ড্রাইভের দূরত্বে লে রুভরে নামের ৬২০ একরের জমিদারি কিনেছে। শ্যাটোর স্থপতি দিয়েই সেখানে ভবন তৈরিসহ নানা কাজ করানো হচ্ছে বলে স্থানীয় টাউন হলের অনুমতিপত্রে দেখা গেছে।
সপ্তদশ শতকে নির্মিত প্রাসাদটিতে একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তির মিশেলে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এখানে রয়েছে মদপানের কক্ষ, মুভি থিয়েটার, পানির নিচে স্বচ্ছ চেম্বারসহ নানা বিনোদনমূলক ব্যবস্থা। এর ঝরনা, সাউন্ড সিস্টেম, লাইট এবং নিঃশব্দের এয়ার কন্ডিশনারগুলো আইফোনের মাধ্যমে দূর নিয়ন্ত্রিত।
দেশে ব্যয় সংকোচন, বিদেশে বিলাসী জীবন : গত মাসে দুর্নীতির অভিযোগে ডজন খানেক প্রিন্স ও বিখ্যাত ব্যবসায়ীকে আটক করেন ক্রাউন প্রিন্স। তাদেরকে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বন্দি রাখা হয়েছে। এটাকে বলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল কারাগার। তাদের কাছ থেকে ১০ হাজার কোটি ডলার উদ্ধারের আশা করছেন মোহাম্মদ বিন সালমান।
এ অভিযানের আগেই বাদশা সালমানের পরিবারের অমিতব্যয়ী খরচের কথা জানা যায়। তবে তাদের আয়ের উৎসব অজ্ঞাত। ফলে প্রশ্ন উঠছেই। দেশটির প্রধান সম্পদ তেলের দাম গত এক দশকে কমে যাওয়ায় বাজেট ঘাটতি কমিয়ে অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার হিমশিম খাচ্ছে। বাজেট ঘাটতি কমাতে গত বছর সরকার প্রায় ২৫ হাজার কোটি ডলারের প্রকল্প বাতিল করে দেয়। তবে ওই সময়টায়ই সৌদি বাদশাহ মরক্কোর উপকূলে অবকাশযাপনের জন্য একটি বিলাসবহুল প্রাসাদ তৈরি শুরু করেন।
মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স নিয়োগ দেয়ার পরপরই গত বছর তিনি ফ্রান্সে অবকাশযাপন করেন। এ সময় তিনি একটি বিলাসবহুল ইয়াট কেনেন যাতে দুটি সুইমিং পুল ও একটি হেলিকপ্টার রয়েছে। ওই ইয়াটের দাম বর্তমান মূল্য প্রায় ৫০ কোটি ডলার।
গত মাসে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির ‘সালভেটর মুন্ডি’ নামের একটি চিত্রকর্ম অজ্ঞাতনামা একজন ক্রেতা ৪৫ কোটি ডলারে কেনেন। পরে নিউইয়র্ক টাইমসের অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই ক্রেতা আসলে মোহাম্মদ বিন সালমান। লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবের কাছেই বাদশাহ সালমানের পরিবারের সাড়ে তিন কোটি ডলারের অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। সালমানের আরেক ছেলে সুলতান বিন সালমান একটি বিলাসবহুল বোয়িং বিমান কিনেছেন, যার দাম ১০ কোটি ডলার ( প্রায় ৮০০ কোটি টাকা)। দক্ষিণ স্পেনের উপকূলে বাদশাহ সালমানের রয়েছে বিশাল কম্পাউন্ড। এ রিপোর্টের ব্যাপারে চেষ্টা করেও সৌদি সরকার ও যুবরাজের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।
No comments:
Post a Comment