পাকিস্তানে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সিলর (রাজনৈতিক) মৌসুমী রহমানকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে ইসলামাবাদ। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ ও বাংলাদেশে পাকিস্তানি কূটনীতিকদের জঙ্গি সম্পৃক্ততা নিয়ে দুই দেশের অব্যাহত টানাপড়েনের মধ্যে পাকিস্তান সরকার গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশের হাইকমিশনার সোহরাব হোসেনকে তলব করে এ অনুরোধ জানায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, পাকিস্তান সরকার গত ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে পাকিস্তান হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব ফারিনা আরশাদকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশি নারী কূটনীতিককে প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে। ফারিনা আরশাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততার সুস্পষ্ট অভিযোগ ওঠায় বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ফিরিয়ে নিতে পাকিস্তানকে অনুরোধ করেছিল। ফারিনা আরশাদ প্রায় এক বছর ধরে বাংলাদেশ কর্তৃক্ষের নজরে ছিলেন। পাকিস্তান সরকার তাঁকে ফিরিয়ে নেওয়ার পর অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশ সুস্পষ্ট অভিযোগের কথা পাকিস্তান সরকারকে জানিয়ে ফারিনা আরশাদকে প্রত্যাহারের অনুরোধ জানালেও পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশি কূটনীতিক মৌসুমী রহমানের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলতে পারেনি। পাকিস্তানি কূটনীতিকের জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়টি ভিন্ন রূপ দিতে ও কূটনৈতিক টানাপড়েনকে আরো তীব্র করতে ইসলামাবাদ এ উদ্যোগ নিয়েছে।
পাকিস্তানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সোহরাব হোসেন গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাকিস্তানের ওই অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। পাকিস্তান সরকার এর আগে ফারিনা আরশাদ ইস্যুতে বাংলাদেশি হাইকমিশনারকে দুই দফা তলব করে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার মৌসুমী রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবে না। তাঁকে ইতিমধ্যে পর্তুগালে বদলি করা হয়েছে। ৪৮ ঘন্টা শেষ হওয়ার আগেই তিনি পর্তুগালের উদ্দেশ্যে পাকিস্তান ছাড়বেন।
প্রসঙ্গত, যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের সঙ্গে টানাপড়েনের সময় বাংলাদেশের হাইকমিশনার সোহরাব হোসেন ছুটিতে ঢাকায় ছিলেন। সে সময় ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মৌসুমী রহমান। তলবের জবাবে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার হিসেবে তিনি দুই দফায় পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
এদিকে বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাইকমিশনার সোহরাব হোসেনও শিগগিরই ইসলামাবাদ থেকে ঢাকায় ফিরছেন। আগামী জুলাই মাসে তাঁর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই সরকার তাঁকে ফিরিয়ে আনছে।
সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধাপরাধের দায়ে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর বাংলাদেশি দোসরদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে পাকিস্তান বিচলিত ও বিরক্ত হয়েছে। ১৯৫ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিও বাংলাদেশে জোরালো হচ্ছে। পাকিস্তানি বাহিনীর আরেক দোসর জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের চূড়ান্ত রায়ের আগের দিন গতকাল পাকিস্তান বাংলাদেশি কূটনীতিককে ফিরিয়ে আনার অনুরোধ জানালো।


No comments:
Post a Comment