Social Icons

Tuesday, March 22, 2016

সোহাগী জাহান তনু ধর্ষণ ,এ লজ্জা রাখব কোথায়?



মেয়েটার স্বপ্ন ছিল উড়বে পাখির মতো, হাওয়ায় হাওয়ায় ভাসিয়ে দেবে ইচ্ছেগুলো যত। ইচ্ছের ঘুড়ি তার হাওয়ায় ভাসানো হলো না আর। তার আগে নিজেই ভেসে গেল, বিষে নীল হয়ে গেল এক বা একাধিক কাল সাপের ছোবলে। স্বপ্নগুলো বুকের ভেতর লুকিয়ে রেখে তলিয়ে গেল অন্ধকারের অতল গহ্বরে।
না! সে ইচ্ছে করে তলিয়ে যায়নি। তাকে জোড় করে তলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু। পারিবারিক অসচ্ছলতা তাকে দমাতে পারেনি একটুও। বরং পরিবারের অনেকটা দায়িত্ব নিজের কাঁধেই যেন তুলে নিয়েছিল মেয়েটা। নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করে স্বপ্ন বুনত একটু একটু। বড় হওয়ার স্বপ্ন। আকাশটাকে হাতের মুঠোয় পুরার স্বপ্ন। সেই জন্যই আর্থিক অনটনকে দু-পায়ে দলে নাচত গাইত বন্ধুদের সাথে। সমাজ পরিবর্তনের তাগিদে নাম লিখিয়েছিল কলেজ থিয়েটারে। নাটক, গান কবিতার মাধ্যমে বলবে পরিবর্তনের কথা। আস্তে আস্তে সমাজ থেকে বিদায় নেবে অন্ধকার। এই ছিল স্বপ্ন যার সেই সোহাগীকেই কি না খেয়ে ফেলল এই সমাজ। দেশের সবচেয়ে নিরাপদ মনে করা হয় যে ক্যান্টনমেন্ট এলাকাকে, তার মধ্যেই হায়েনার দল হামলে পড়ল তার ওপর। নিষ্পাপ শরীরটাকে ধর্ষণ করল বিভৎসভাবে। এতেও মিটল না ক্ষুধা। গলা কেটে রক্তাক্ত করে জঘন্যভাবে একেবারে চিরবিদায় করে দেওয়া হলো সোহাগীকে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে।
গত ২০ মার্চ বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে টিউশনিতে গিয়েছিল সোহাগী। ছোট্ট একটা বাচ্চাকে পড়াতো হয়তো। হয়তো পড়াত বাংলা, অঙ্ক কিংবা ইংরেজি। সেদিন হয়তো পড়িয়েছিল আমার বাংলা তৃতীয় পাঠ হতে কোনো একটি কবিতা। হয়তো হেলে দুলে জোড় গলায় উচ্চারণ করে করে পড়াচ্ছিল এইভাবে- বাঁশ বাগানের মাথার ওপর চাঁদ উঠেছে ওই, মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই? সোহাগীর সে কাব্যমাখা স্বর স্তব্ধ হয়ে গেল সেদিনই। টিউশনির বাসা থেকে বের হলো ঠিকই, বাড়ি আর ফিরল না। তার আগেই মানুষরূপী হায়েনার মুখে পড়ে ত্যাগ করল এই পৃথিবীর মায়া।
সোহাগী তো মরে গিয়ে বাঁচল বরং! আমরা বেঁচে আছি কেন? মানুষ বেঁচে আছে কেন? এভাবে বেঁচে থাকাকে কী বেঁচে থাকা বলে? মানুষ কী এভাবে বেঁচে থাকে? একের পর এক আমাদেরই নাকের ডগার ওপর দিয়ে এভাবে হারিয়ে যাচ্ছে সোহাগী, সামিয়া, আঁখি, সাহেরা বানু! আমরা মরি না কেন? আমাদের মরে যাওয়াই উচিত! এসব প্রতিরোধ/প্রতিকার করতে না পারলে আমাদের মরে যাওয়াই উচিত! বেঁচে থাকার অন্তত কোনো অধিকার আমাদের নেই।
খুন ধর্ষণ এখন দেশে তেমন কোনো বড় ব্যাপার নয়। প্রতিদিন পেপার পত্রিকা খুললেই অহরহ ধর্ষণ, ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার সংবাদ চোখে পড়ে। এসব সংবাদও এখন আর তেমন একটা গুরুত্ব পায় না। পত্রিকার ভেতরের পাতায় ছোট করে ছেপে দেওয়া হয় কোনোমতে। তারপরও প্রতিদিন এ রকম অহরহ সংবাদ চোখে পড়ে। গত সপ্তাহেরই গোড়ার দিকে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের এক ছাত্রীকে জোর করে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গণর্ধষণ করা হলো। গতকাল বা পরশু কোনো এক মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণ শেষে হত্যার সংবাদ চোখে পড়ল। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই ধর্ষক ধরা পড়ছে, বা যথাযথ বিচার হচ্ছে সে রকম কোনো নজির চোখে পড়ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপরাধী ধরা পড়লেও বেরিয়ে আসছে জামিনে। আবার দ্বিগুণ শক্তিতে নেমে পড়ছে একই কাজে। ধর্ষিতার পরিবারকে প্রাণ নাশের হুমকি-ধমকি দেওয়াসহ নানা কুকর্মে জড়িয়ে পড়ছে আবার। দেখার কার্যত কেউ নেই।
দেখার থাকলেই বা লাভ কী। রক্ষক যখন ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তখন আর জনসাধারণের কী করার থাকতে পারে। বেশ কিছু বছর আগে দিনাজপুরে পুলিশ ভ্যানে ইয়াসমিন ধর্ষণের বিষয়টি বেশ চাঞ্চল্য তৈরি করে। তখনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নারী নির্যাতনের বিষয়টি খুব রুঢ় ভাবে সামনে আসে। তারপর আরো অনেক ঘটনা ঘটেছে কতিপয় দূষ্কৃতকারীর দ্বারা। কার কি বিচার হয়েছে নাগরিকরা সেই বিষয়ে অন্ধকারেই।
যদিও অপরাধী চিহ্তি না হওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না কুমিল্লা সেনানিবাসে সোহাগীকে আসলে কে বা কারা ধর্ষণ করে হত্যা করেছে। তবে আন্দাজ তো অন্তত করা যায় কিছুটা। সেনানিবাস এলকায় এমনিতেই সর্বসাধারণের তেমন চলাফেরার অধিকার থাকে না। যারাও বা প্রয়োজনে আসা-যাওয়া করে, সেই সংখ্যা খুব সীমিত এবং তারা কখন কোন কাজে সেনানিবাসে আসে, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অজানা থাকার কথা নয়। বাইরের লোক আসুক আর নাই আসুক সেনানিবাস এলাকায় কোনো নারী ধর্ষিত হলে বা খুন হলে সংশ্লিষ্ট কেউই সেই দায় কিছুতেই এড়াতে পারে না। যৌক্তিকভাবেই সন্দেহের প্রথম তীর সংশ্লিষ্টদের দিকেই যায়। এটাই বড় লজ্জার।
রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকরা যদি নিরাপদ না হন, বরং নির্যাতিত হন, ধর্ষিত হন, খুন হন, এর চেয়ে ঘৃণার, এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে! এ লজ্জার অবসান চাই। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের কাছে এটি আমাদের যৌক্তিক চাওয়া। নিরাপদে চলতে চাই। প্রাণের নিরাপত্তা চাই। নারীরা নিরাপদে চলবে সেই নিশ্চয়তা চাই। আর একজন সোহাগীও এভাবে ধর্ষিত হয়ে নীল আকাশে মিশে যাবে না তার নিশ্চয়তা চাই এবং রাষ্ট্রকে সেটা দিতেই হবে।
তোমার কাছে ক্ষমা চাইবার ভাষা আমাদের নেই সোহাগী। তুমি অবশ্য সেই ক্ষমা চাওয়ার তোয়াক্কাও করো না আর। তুমি এখন সবকিছুর ঊর্ধ্বে। পৃথিবীর কোনো কলুষতাই ছুঁতে পারবে না আর তোমাকে। কিন্তু আমরা তো বেঁচে আছি। বেঁচে থাকতেও হয়তো হবে। জানি আমরা অপরাধী, তুমি লজ্জানত মুখে মিনতি তোমার কাছে, ক্ষমা করো আমাদের! আমরা পাপী!
সোহাগী হত্যার বিচার চাই!  























1 comment:

  1. যারা অপরাধীন তাদের বিচার অবশ্যই করতে হবে। নইলে এদেশে বসবাস করা যাবে না। মানুষ এ দেশে মানুষের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। এই দেশে এ ধরনের অপরাধীদের দ্রুত বিচার আদালতের মাধ্যমে যথোপযুক্ত শাস্তি প্রদান করতে হবে। এ শাস্তি যেন সর্বোচ্চ হয়। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে।

    ReplyDelete

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates