Social Icons

Thursday, March 31, 2016

ফারুকের একাল আর সেকাল

ঢাকাই চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক ফারুক। একসময়ের পর্দা কাঁপানো এ নায়ক একজন মুক্তিযোদ্ধা। সম্প্রতি তিনি চলচ্চিত্রের একাল সেকালের গল্প শুনিয়েছেন 



আমার কিন্তু কখনই চলচ্চিত্রে আসার কোনোরকম পরিকল্পনা ছিল না। পাকিস্তান আমলেই আমার বিরুদ্ধে নানা কারণে ৩৭টি মামলা হয়েছিল। এক সময় এগুলো থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য চলচ্চিত্রে কাজ করা শুরু করি। মুক্তিযুদ্ধ করলাম, দেশ স্বাধীন হল। আবার পুরোদমে চলচ্চিত্রে কাজ করছি আমি। তখন ‘ওরা ১১ জন’, ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ছবির শুটিং চলছিল। সেই সময় বঙ্গবন্ধুর কাছে যেতে আমার কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো না। কারণ আমার চেহারাই ছিল বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যাওয়ার সিল। তো একবার আমি ধানমণ্ডি ৩২-এ বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে প্রবেশ করলাম। তিনি দূর থেকে আমাকে দেখেই বলে উঠলেন, ‘কিরে তুই নাকি এখন রং মাইখ্যা ঢং করা শুরু করছোস?’ মনটা আমার এত খারাপ হল যে, মুখ লুকিয়ে ফেললাম। পেছন থেকে কোনোরকম শব্দ ছাড়া তিনি আমার কাঁধে হাত রাখলেন। আর বললেন, ‘আরে পাগল আমি কী একটু হাসিঠাট্টাও করতে পারব না।’ এরপর তিনি আমাকে বললেন, ‘তুই আসলে এমন একটি জায়গায় আছিস যেখান থেকে তুই অনেক বিপ্লব ঘটাতে পারবি।’ তার সেই কথা আজও কানে ভেসে আসে প্রায়শই। অনেকের কাছে আমাকে বলতে হয় কেন আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার একবার পাওয়ার পর আর পাইনি। আজ সবাইকে বলছি সে ঘটনা। বঙ্গবন্ধুই কিন্তু মূলত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রবর্তন করেছিলেন ১৯৭৫ সালে। জীবদ্দশায় তিনি সেটা দেখে যেতে পারেননি। ১৯৭৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রথা চালু হল। ‘লাঠিয়াল’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য আমি পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাই। তখন থেকে সেই যে পাশে থাকা শুরু হল আমার, আমি আর পুরস্কারই পেলাম না। একটি কথাই শুধু বলব ‘লাঠিয়াল’ ছবির প্রধান লাঠিয়াল ছিলাম আমি। কী করে আমি পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের জন্য পুরস্কার পাই! লবিং না করার কারণে পরবর্তীতে ভালো ভালো ছবিতে অভিনয় করেও আমার ভাগ্যে আর কোনোদিনই জুটলো না জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। গত কয়েক বছরে এমন অনেক ছবিই নির্মিত হয়েছে যা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আওতাধীন আনাও অযোগ্য। আমাদের দেশের ছবির উন্নতি হয় না কেন? এমন প্রশ্ন আমাকে প্রায়ই শুনতে হয়। কখনই কাউকে কিছু বলিনি। সিনিয়র শিল্পী কিংবা সিনিয়র পরিচালকদের একের পর এক চলে যাওয়ার কারণে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা কোনোদিনই পূরণ হওয়ার নয়। কারণ সিনিয়র শিল্পী-পরিচালকদের মধ্যে পারস্পরিক যে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সময়ের প্রতি সচেতনতা ছিল তার কোনোকিছুই এখনকার শিল্পী-পরিচালকদের মধ্যে নেই। চলচ্চিত্র আর ভালো হবে কীভাবে? এখন আর মৌলিক গল্প নেই। পাশের দেশ ভারতের বিভিন্ন ছবি দেখে দেখে একটি গল্প দাঁড় করানোর চেষ্টা চলে। কাহিনীকারই যদি চোর হয় তাহলে ভালো ছবি তৈরি করা কখনোই সম্ভব নয়। 

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates