Social Icons

Friday, March 25, 2016

অজানা আতংক পোস্টমর্টেম বা ময়না তদন্ত! ( ভিডিও সহ ) ১৮+

অজানা আতংক পোস্টমর্টেম বা ময়না তদন্ত!

পোস্টমর্টেম আমাদের কাছে একটি পরিচিত শব্দ। পোস্টমর্টেমকে বাংলায় বলা হয় ময়না তদন্ত। পোস্টমর্টেমের আরেকটি নাম রয়েছে, আর সেটি হচ্ছে ‘অটপসি’। অটপসি শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ অটপসিয়া থেকে। সাধারণভাবে অটপসি হলো আইনানুগ ভাবে মৃতদেহ পরীক্ষা করে মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করা। পোস্টমর্টেম বা ময়না তদন্ত করা হয় মৃত মানুষের শরীরে। তবে এটি অন্যান্য জীবের শরীরে করাও সম্ভব।
ময়না তদন্তের মাধ্যমে মৃত শরীর পরীক্ষা করা হয় এবং তার মৃত্যুর কারণ উদ্ধার করা হয়। কেউ অপঘাত, আত্মহত্যা, দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণে মারা গেলে বা এক কথায় অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে তার মৃত দেহকে ময়না তদন্ত করা হয়। বহু প্রাচীনকাল থেকেই পোস্টমর্টেমের সঙ্গে ধর্ম, রাজনীতি, যৌক্তিক মতবাদ, আধিভৌতিক জাদুবিদ্যা প্রভৃতি নিবিড়ভাবে জড়িত ছিল।
পারিভাষিক সংজ্ঞা প্রদান করতে গেলে বলতে হয়, কোনও ব্যক্তি কখন, কিভাবে, কোথায়, কিসের দ্বারা মৃত্যু বরণ করেছে বা তার মৃত্যু কি স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক এই সকল তথ্য জানার জন্য মৃতদেহকে যে বিশেষ পরীক্ষা করা হয় তাকে পোস্টমর্টেম বা ময়না তদন্ত বলে।
ময়নাতদন্ত চিকিৎসাবিজ্ঞানের দীর্ঘ সাধনা ও গবেষণার সোনালি ফসল। ময়না তদন্তের ইতিহাসও ছোট নয়। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে মিসরীয়রা মমি তৈরির জন্য মৃতদেহকে ব্যবচ্ছেদ করত। তবে তারা শুধু ধর্মীয় কারণেই তা করত। মূলত মৃত্যুর কারণ জানার জন্য মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদের কথা জানা যায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে গ্রিসে। রোমান সাম্রাজ্যে এটি চালু হয় খ্রিস্টপূর্ব ১৫০ অব্দে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, জুলিয়াস সিজারের মৃত্যুর পর তার অফিসিয়াল পোস্টমর্টেম হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৪৪ অব্দে। এ ছাড়া আরবদের মধ্যে আন নাফিসের কথা উল্লেখযোগ্য। আধুনিক পোস্টমর্টেম ব্যবস্থা চালু করেন ইভোননি মরগাগনি। যাকে পোস্টমর্টেম ব্যবস্থার জনক বলা হয়। ময়না তদন্ত ব্যবস্থার উপর ঐতিহাসিক কিছু বইয়েরও ইতিহাস জানা যায়। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে মিসরের ফারাও জোসের আমলে প্রধান চিকিৎসক হেব্রিয়ন ও ইমহোটেপ, খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০-৩৬৫ অব্দে গ্রিসের হিপোক্রেট, ১১৭-১৩৮ খ্রিস্টাব্দে মিসরীয় চিকিৎসক হেব্রিয়ন, ১২০০-১২৫০ খ্রি. চীনে এবং ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে ইতালির চিকিৎসক ফরচ্যুনিতো ফেদেলে পোস্টমর্টেমের উপর পুস্তক রচনা করেন।
মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ধারণ, মৃত্যুর ধরন, মৃত্যুকাল, মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্য-প্রমাণাদি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, কোনও বহিঃ বস্তুর উপস্থিতি যেমন বুলেট, বোমার স্প্রিন্টার ইত্যাদি থাকলে তা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হলে তা কী বিষ, কীভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে, কখন প্রয়োগ করা হয়েছে তা নির্ধারণ ও অজ্ঞাত পরিচয় মৃতদেহ হলে ভবিষ্যৎ শনাক্তকরণের জন্য তার মোটিভ সংরক্ষণ সহ প্রভৃতি পোস্টমর্টেমের উদ্দেশ্য। ময়নাতদন্ত বা পোস্টমর্টেম চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি উচ্চ পেশাগত ও কারিগরি মরদেহ পরীক্ষা। আতশ কাচের সাহায্যে দেখে, লাশের প্রয়োজনীয় প্যাথলজিক্যাল, কেমিক্যাল, রেডিওলজিক্যাল, সেরোলজিক্যাল প্রভৃতিসহ সব জৈবাঙ্গ পরীক্ষণের মাধ্যমে মানুষের মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটন করা এর কাজ।
বর্তমানে বিশ্বে তিন ধরনের পোস্টমর্টেম বা ময়নাতদন্ত প্রচলিত আছে। যথা:
# মেডিক্যাল: কোনও ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটলে তাকে মেডিকেল পোস্টমর্টেম করা হয়।
# ক্লিনিক্যাল: কোনও ব্যক্তি অসুস্থতাজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করলে তাকে ক্লিনিক্যাল পোস্টমর্টেম করা হয়।
# একাডেমিক: মেডিকেল বা ডাক্তারি পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের অধ্যয়নের জন্য মৃতদেহ পোস্টমর্টেম করা হয়।
ময়না তদন্তের নিয়ম সাধারণের কাজে ভয়ংকর মনে হতে পারে। যে স্থান বা গৃহে ময়না তদন্ত করা হয় সেই গৃহকে প্রচলিত ভাবে ‘লাশ কাটা ঘর’ বলে। প্রথমে মৃতদেহকে এই লাশকাটা ঘরে নিয়ে আসা হয়। এরপর যে ডাক্তার লাশ ময়না তদন্ত করবেন তিনি ময়না তদন্তের প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রাদি পরীক্ষা করেন এরপর তিনি সুরতহাল রিপোর্ট পরীক্ষা করেন। ময়না তদন্তের প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রাদির মধ্যে থাকে সুরতহাল রিপোর্ট, সংশ্লিষ্ট থানার চালান, নির্ধারিত ময়না তদন্ত রিপোর্ট ফরম ইত্যাদি। কাগজ পত্রাদি পরীক্ষা করার পর ডাক্তার বাহ্যিক ভাবে মৃতদেহকে পরীক্ষা করেন। বাহ্যিক পরীক্ষা শেষ করার পরই শুরু করা হয় আসল কাজ। এ পর্যায়ে মৃতদেহকে ব্যবচ্ছেদ করা হয়। মৃতদেহ যিনি ব্যবচ্ছেদ করেন তাকে ‘ডোম’ বলা হয়ে থাকে। ব্যবচ্ছেদ করার সময় মৃত দেহের গলা থেকে নাভির নিচ পর্যন্ত চিরে ফেলা হয় এবং মাথার করোটি খুলে ফেলা হয়। মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ করার পর তার অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো যেমন স্টমাক, কিডনি, হার্ট, লাঞ্চ, লিভার, ব্রেইন ইত্যাদি বাহির করে লবণ পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। এরপর এই অঙ্গগুলো ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে পুনরায় মৃতদেহের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয় এবং পরিশেষে মৃতদেহের শরীর সেলাই করে দেয়া হয়।
কোনও মানুষের অপমৃত্যু হলেই তাকে দাফনের আগে তার পোস্টমর্টেম করা হয়। দেহের যে কোনও অঙ্গের পোস্টমর্টেম হতে পারে। এমনকি থেঁতলানো বা মণ্ডে পরিণত দেহাবশেষের, নরকঙ্কাল, একটি একক হাড়, দেহ বিচ্যুত যে কোনও অঙ্গ, এমনকি একটি আঙ্গুলেরও ময়নাতদন্ত হতে পারে। লাশ পচা বা-গলিত হলেও তার পোস্টমর্টেম হতে পারে। ময়না তদন্ত কাজে সরকারের চারটি বিভাগ সম্মিলিত ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংশ্লিষ্ট থাকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ফরেনসিক চিকিৎসা বিভাগ, আইনজীবীগণ তথা আইন মন্ত্রণালয়, বিচার বিভাগ এবং সর্বোপরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ বিভাগকে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকতে হয় ময়নাতদন্ত কার্যে।
পোস্টমর্টেম বিচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পোস্টমর্টেমের ভুলের কারণে একজন নিরপরাধ লোকের শাস্তি হতে পারে, আবার একজন অপরাধী ছাড়াও পেতে পারে। তাই খুব সতর্কতার সঙ্গে এই রিপোর্ট তৈরি এবং আদালতে উপস্থাপন করা হয়। যে ডাক্তার মৃতদেহের ময়না তদন্ত করে থাকেন তাকে মামলা চলার সময় আদালতে ময়না তদন্ত সম্পর্কে স্বীকারোক্তি দিতে হয়

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates