পৃথিবীর জনপ্রিয় ভ্রমন স্থানগুলোর মধ্যে জাপান অন্যতম। এশিয়ার এই উন্নত দেশটি ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলের অপূর্ব নিদর্শন। এখানে যেমন প্রাচীন ভবন ও মন্দির আছে তেমনি আধুনিক স্থাপত্য ও প্রকৌশল প্রযুক্তির অসামান্য সাফল্যও দেখতে পাওয়া যায়। ঐতিহাসিক স্থানগুলো তাদের মূল উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হলেও সেগুলো জনসাধারণের জন্য খোলা রাখা হয়েছে। সারা বছরই জাপানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তাছাড়া জাপান পৃথিবীর সবচেয়ে কম অপরাধ প্রবণ দেশ। তাই পর্যটকদের জন্য জাপান আদর্শ স্থান। জাপানের কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে নিই চলুন।
১। গোল্ডেন প্যাভিলিয়ন
জাপানের জনপ্রিয় পর্যটন স্থান হচ্ছে গোল্ডেন প্যাভিলিয়ন মন্দির। যাকে কিনকাকু-জি ও বলা হয়। এই প্যাভিলিয়নটি নির্মাণ করা হয় ১৪ শতকে শোগান আশিকাগা ইয়োশিমিটসু এর অবসর যাপনের জন্য। এই পটমন্ডপটি ১৯৫০ সালে একজন তরুণ সন্ন্যাসী পুড়িয়ে ফেলে। পাঁচ বছর পরে এটি পুনরায় নির্মাণ করা হয়। এই ভবনটি এবং এর চারপাশের বাগানটির একে অপরের সাথে সঙ্গতি রেখেই নির্মাণ করা হয়েছে। এই প্যাভিলিয়নটি সোনার পাত দিয়ে আচ্ছাদিত। যার ফলে পুকুরে এর প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত হয়।
২। ফুজি পর্বতমালা
জাপানের সর্বোচ্চ পর্বতমালা এই মাউন্ট ফুজি। যার উচ্চতা ১২৩৮৮ ফুট। এর ব্যাতিক্রমি আগ্নেয়গিরিটি জাপানের প্রতীক হিসেবে সুপরিচিত। এটি পর্বতারোহী ও দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় একটি স্থান। প্রতিবছর ২ লক্ষ মানুষ এই পর্বত আরোহণের জন্য যায় যার মধ্যে ৩০% ই বিদেশী পর্যটক। এই পরবতে আরোহণ করতে ৩ থেকে ৮ ঘন্টা সময় লাগে এবং অবতরণের জন্য সময় লাগে ২ থেকে ৫ ঘন্টা।
৩। টোকিও ইম্পেরিয়াল প্যালেস
জাপানের সম্রাটের বাসভূমি এই টোকিও ইম্পেরিয়াল প্যালেস। এটি প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং মিউজিয়াম হিসেবেও ব্যবহৃত হয় যেখানে জাপানের শিল্প ও ইতিহাসের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। এই প্রাসাদের পুরনো ভবনটি আগুন লেগে বা যুদ্ধের সময় ধ্বংস হয়ে যায়। নতুন প্রাসাদটিতে পুরনো যুগের নকশার উপাদান ব্যবহার করা হয়। প্রাসাদটি ঐতিহ্যগত জাপানী বাগান দিয়ে ঘেরা। অতিথি ও দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাতে বিভিন্ন অভ্যর্থনা কক্ষ আছে প্রাসদটিতে।
৪। টোকিও টাওয়ার
প্রযুক্তির অগ্রগতি ও আধুনিক জীবনের সাক্ষী এই টোকিও টাওয়ার। আইফেল টাওয়ারের নকশা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাণ করা হয় এটি। এটি জাপানের দ্বিতীয় উচ্চতম মানুষ দ্বারা নির্মিত টাওয়ার যা যোগাযোগ ও পর্যবেক্ষণের কাজে ব্যবহার হয়। দর্শনার্থীরা এই টাওয়ারে চড়ে টোকিও ও এর আশেপাশের অঞ্চলের দৃশ্য অবলোকন করতে পারে এবং এর দোকান ও রেস্টুরেন্টে ঘুরতে পারে।
৫। হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমাতে আনবিক বোমায় নিহত মানুষদের স্মরণে নির্মাণ করা হয়েছে এই স্মৃতিসৌধ। গম্বুজাকার এই স্মৃতি সৌধটি একটি পার্কে অবস্থিত। বোমা বিস্ফোরনের পর এই অঞ্চলে শুধুমাত্র একটি ভবন দাড়িয়ে ছিল। যুদ্ধের বিধ্বংসিতা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য এবং নিহতদের প্রতি সম্মান জানাতেই এই সৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। মানুষের জীবনের মূল্য উপলব্ধি করতে পারেন এই স্থানটির দর্শনার্থীরা।
তাছাড়া জিগোকুডানি মাংকি পার্ক, কিয়োমিজু ডেরা, হিমেজি ক্যাসেল, গ্রেট বুদ্ধা অফ কামাকুরা, টুডাইজি মন্দির, ঐতিহাসিক কায়োটো শহর, মন্দিরের শহর নারা, অসাকা ক্যাসেল, নাগুয়া শহরের আটসুটা মন্দির এবং টোকিওর মধ্যে শিঞ্জুকু, গিঞ্জা, শিবুয়া ও হারাজুকু ইত্যাদি স্থানগুলো জাপানের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান।
No comments:
Post a Comment