হাসপাতালে শুয়ে সে হাসছে। অথচ, চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে জল। আবার কখনও তর্জনী দিয়ে শূন্যে আঁকিবুকি কাটছে।
হাবরার বছর চোদ্দোর হাসিখুশি মেয়েটির এই অবস্থা দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না তার পড়শিরা।
দিন বারো আগে গণধর্ষণের শিকার হয় নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীটি। প্রথমে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কথা। তার পরে কথা ফিরলেও তা অসংলগ্ন। তার মধ্যেও সে বাড়ির লোককে বুঝিয়েছিল তার উপরে নির্যাতনের কথা। কিন্তু তার পরে মেয়েটির অবস্থার আরও অবনতি হয়। আপাতত তার ঠিকানা বারাসত হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগ। চিকিৎসকদের কাছ থেকে তার বাড়ির লোকজন জেনেছেন, মেয়েটি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে।
ওই ছাত্রীকে পাঁচ জন গণধর্ষণ করেছে বলে তার কাকা বৃহস্পতিবার হাবরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গণধর্ষণের মামলা রুজু করে দুই কিশোরকে ধরেছে। শুক্রবার সল্টলেকের জুভেনাইল আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাদের হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বাকি অভিযুক্তের খোঁজ চলছে।
বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল জানান, পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি। একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে কিশোরীর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। তবে আতংকে ওই কিশোরী মানসিকভাবে এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে যে, ঠিক মতো কথা বলতে বা পরিচিতদের চিনতে পারছে না।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায, মাতৃহারা মেয়েটির বাবা অসুস্থ। বাড়িতে দাদি এবং কাকা-কাকিমা আছেন। গত ১২ জুন বাড়িতে দাদির সঙ্গে ছিল মেয়েটি। কাকা-কাকিমা ছিলেন না। সন্ধ্যায় পাঁচজন তাকে ডেকে বাড়ির কাছের একটি বাগানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে এবং সে কথা গোপন করার জন্য এতটাই ভয় দেখায় যে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। দিন চারেক মেয়েটি পাথরের মতো চুপ করে ছিল। পরে ঘটনার কথা বাড়ির লোককে জানায়।
মেয়েটিকে প্রথমে ভর্তি করা হয় হাবরা হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতেই পাঠানো হয় বারাসত হাসপাতালে। সেখানেই ডাক্তারি পরীক্ষা হয় মেয়েটির। ওই রাতেই ঘটনার তদন্তে হাবরায় আসেন জেলা পুলিশের কর্তারা। মেয়েটির শারীরিক ও মানসিক অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় শুক্রবার তাকে পাঠানো হয় ওই হাসপাতালেরই মনোরোগ বিভাগে।
সেখানেই এ দিন মেয়েটির কাকা বলেন, জামাইষষ্ঠীর জন্য সে দিন শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি, ও একেবারে চুপ মেরে গিয়েছে। এরপর ওর শরীর থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হলে হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাই। তখনও কিছু জানি না। আস্তে আস্তে ও কেমন যেন অস্বাভাবিক আচরণ করা শুরু করল।
মেয়েটির কাকিমা বলেন, অনেক কষ্ট করে ওর কাছ থেকে সব জানতে পারি।
মেয়েটির এমন অবস্থায় ভেঙে পড়েছেন পড়শিরাও। এ দিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মেয়েটি কখনও অসংলগ্ন কথা বলছে, কখনও কাঁদছে। তার চোখের জল মুছিয়ে দিচ্ছিলেন পড়শি সবিতাদেবী।
তিনি বলেন, এমন হাসিখুশি, উজ্জ্বল, পড়াশোনায় ভালো মেয়েটির এই অবস্থা সহ্য করতে পারছি না।
হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন বারাসত চাইল্ড লাইনের জেলা আহ্বায়ক শিবাশিস দাস। তিনি বলেন, ভয়ংকর ঘটনা। মেয়েটির পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। বিষয়টি জানার পর থেকেই ওকে নিয়ে আমরা একবার থানা, একবার হাসপাতালে ছুটে যাই। সমস্ত অপরাধী ধরা না পড়া পর্যন্ত আমরা থামছি না।
সূত্র: আনন্দবাজার
Saturday, June 25, 2016
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment