বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার জঙ্গিবাদের নেটওয়ার্ক উচ্ছেদে অনাগ্রহী বলেই জঙ্গিরা নির্বিঘ্ন তাদের অপতৎপরতা চালু রেখেছে। এতেই প্রমাণিত হয়-জঙ্গিরা সরকারেরই সৃষ্টি। সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলকে জঙ্গিবাদের সাথে যুক্ত করার জন্যই নিজেরা জঙ্গি সৃষ্টি করে দেশব্যাপী খুনোখুনি করাচ্ছে। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জনগণের মনের আওয়াজের প্রতিধ্বনি করছেন বলে দাবি করেন তিনি।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাদারীপুরে শিক্ষককে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় গ্রেপ্তার জঙ্গি ফাইজুল্লাহ ফাহিম পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর তার জন্য খালেদা জিয়া কেন এতো মায়াকান্না করছেন? এ থেকেই বোঝা যায় গুপ্তহত্যার সঙ্গে তাদের একটা সম্পর্ক রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যর প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, একজন অভিযুক্ত আসামীকে রিমান্ডে থাকাকালীন কারাগারের থেকে নিরাবিচ্ছন্ন থাকে। ফাহিম সে রকম একজন অভিযুক্ত আসামী। রিমান্ডে সে অস্ত্র পেল কোথায়, আর যুদ্ধ করলো কিভাবে? সেখানে তাকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হলো। একজন লোককে বিনা বিচারে হত্যা কলা হলে জনগণের নেত্রী কথা বলবেন না। তাই বেগম খালেদা জিয়া জনগণের নিরাপত্তায় জনগণের মনের আওয়াজের প্রতিধ্বনি করছেন।
আজ দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এসময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বেই বাংলাদেশের রক্তধারা বৃষ্টিধারার স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। গোটা জাতিকে জিম্মি করতে গিয়ে যে সহিংস সন্ত্রাস কাঠামো নির্মান করেছেন শেখ হাসিনা। এখন ক্ষমতাসীন রাঘব-বোয়ালরা গোটা দেশটাকেই গিলে খাচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকার যেহেতু জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন অবৈধ, সেইজন্য তিনি জনগণকে শত্রুজ্ঞান করেন। আর সেই কারনেই শত্রু নিধনে (সাধারণ নিরীহ জনগণ) তিনি সবচাইতে পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন, হত্যা, গুপ্তহত্যা ও বিচারবহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি যে কর্মকান্ডই করুন না কেন মানুষ সেটি বিশ্বাস করেনা। দেশের যেকোন হত্যাকান্ডে আপনার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যে বিজ্ঞপ্তি দেয়, সেটিও মানুষ বিশ্বাস করেনা। কারন জনগণ মনে করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা অনুযায়ী বিবৃতি দেয়। যে কারনে উগ্রবাদ, জঙ্গীবাদসহ দেশের যেকোন হত্যাকান্ডে সরকারী বক্তব্যকে মানুষ মনে করে এটি একটি ধুর্মজাল সৃষ্টি করা।
সরকার তার অবৈধ স্বত্ত্বা নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, কখন কী ঘটে যায়-এই আশঙ্কায় সরকার সবসময় দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখতে চায়। নৈরাজ্য এবং অস্থিতিশীলতা সরকারের টিকে থাকার গ্যারান্টি। সেইজন্যই তথাকথিত বর্তমান সেক্যুলার সরকারের আমলেই সংখ্যালঘুদের জীবন সর্বকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশী বিপন্ন হয়ে পড়েছে। তাদের অঝোরে রক্ত ঝরছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপদে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই সারাদেশে তারা গডফাদার তৈরী করে। বর্তমানে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় গডফাদার তৈরী হয়েছে। এরা অধিকাংশই এখন ভোটারবিহীন সরকারের মন্ত্রী-এমপি। শাসকদলের এমপিদের হাতে গুলিবিদ্ধ হচ্ছে শিশুরাও, এদের হাতে মায়ের পেটের শিশুরাও নিরাপদ থাকতে পারেনি। শাসকদলের অস্ত্রের ঝনঝনানীতে সারাদেশ আজ প্রকম্পিত। হত্যাকান্ড নিয়ে যখন প্রধানমন্ত্রীর মুখে মৃদুমন্দ হাসি ফুটে উঠে, সেই হাসি কী হায়েনার হাসি নয় ?
সরকার জঙ্গীবাদ দমনের নামে জনগণের ওপর বেপরোয়া ক্র্যাকডাউন চালানোর পরও উগ্রবাদীদের তৎপরতা তো কোন অংশেই কমেনি বলে দাবি করে তিনি বলেন, রাজধানীর সবুজবাগে ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের প্রধানকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। এর আগে যে নামে রামকৃষ্ণ মিশনের ধর্মগুরুকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল, সেই এ বি সিদ্দিকীর নাম ব্যবহার করে এবারও বৌদ্ধ মহাবিহারের প্রধানকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। জঙ্গীদের অপতৎপরতার বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই প্রমানিত হয়-জঙ্গীরা সরকারেরই সৃষ্টি।
তিনি জানান, রাজধানীর সবুজবাগে বৌদ্ধ মহাবিহারের প্রধানকে হত্যার হুমকিতে বিএনপি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে, সরকারের রহস্যজনক ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং অবিলম্বে উক্ত বৌদ্ধ মহাবিহারের প্রধানকে যথাযথ নিরাপত্তা বিধানের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment