সুখী জীবনের একটি উৎস অবশ্যই নীরোগ জীবন। সেই বিচারে উত্তর পাকিস্তানের গিলগিট-বালটিস্তানের অন্তর্গত হুনজা প্রদেশে বসবাসকারী মানুষদের সুখীতম বলে বিবেচনা করাই যায়। কারণ, তারা এমন একটি সম্প্রদায় যারা কখনো অসুস্থ হন না। আর তাদের কেউ কখনো ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন বলেও শোনা যায়নি।
হুনজা নারীদের মধ্যে এমনও কেউ কেউ আছেন যারা ৬৫ বছর বয়সেও সন্তানের মা হয়েছেন। প্রবল ঠাণ্ডার মধ্যেও তারা নিয়মিত ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করেন হুনজারা। তাতেও সচরাচর সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হতে দেখা যায় না তাদের।
হুনজা প্রদেশের একটি পাহাড়ি উপত্যকায় ফসলের খেত।
কিন্তু হুনজাদের এই নীরোগ জীবনের রহস্যটা কী? হুনজারা বলেন, উপত্যকায় নিজেরা যা চাষ করেন, কেবল সেই শাকসবজিই খান। জোয়ার, বাজরা, বাদাম নিজেরাই চাষ করে ঘরে তোলেন হুনজারা। এছাড়াও তাদের জীবনযাপনের প্রয়োজনে প্রতিদিন প্রচুর হাঁটতে হয়। সেটিও তাদেরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া হুনজাদের রীতি হলো, প্রতি বছর ফল চাষ শুরু করার আগে ২ থেকে ৪ মাস উপবাস পালন করা। সেই রীতিও তাদের শরীরের উপকার করে বলে মনে করেন ডাক্তররা।
খোবানি সংগ্রহের পর সেগুলো শুকানো ও পরিচর্যায় ব্যস্ত হুনজা নারীরা।
কিন্তু একটি সম্প্রদায় কীভাবে সম্পূর্ণ ক্যানসার-মুক্ত হতে পারে? আসলে হুনজারা প্রচুর পরিমাণে অ্যাপ্রিকোট বা খোবানি নামের ফল খান। তাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় খোবানি থাকেই। এই খোবানিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে বি-১৭ ভিটামিন। এই ভিটামিন ক্যানসার প্রতিরোধে বিশেষ সহায়ক বলে জানান ডাক্তাররা।
হুনজাদের দুই প্রজন্ম, বাবা ও ছেলে
শুধু নীরোগ নয়, হুনজারা দীর্ঘ জীবনেরও অধিকারী। হুনজাদের মধ্যে কেউ কেউ দেড়শো বছরও জীবিত থেকেছেন বলে শোনা যায়। ১৯৮৪ সালে সৈয়দ আবদুল বুন্দু নামের এক হুনজা ভদ্রলোক লন্ডন এয়ারপোর্টে প্লেন থেকে নামেন। এয়ারপোর্টের কর্মচারীরা তার পাসপোর্ট দেখে হতবাক হয়ে যান। কারণ তার পাসপোর্টে জন্মসাল লেখা ছিল ১৮৩২।
সত্যিই আবদুল বুন্দু ১৫২ বছর বয়সে লন্ডন পাড়ি দিয়েছিলেন কি না সে বিষয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে, কিন্তু হুনজারাই যে পৃথিবীর সবচেয়ে নীরোগ স্বাস্থ্যের অধিকারী সেই নিয়ে সন্দেহ নেই।
No comments:
Post a Comment