Social Icons

Wednesday, September 21, 2016

ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি ---- পরমাণু অস্ত্র নিয়ে চলছে হিসাব নিকাশ

ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। পাকিস্তানে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে যে ভারতের সেনাবাহিনী পাকিস্তানের সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় ক্রমশই সরে আসছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপর পাকিস্তানে হামলা চালাতে চাপ বাড়ছে। ভারত পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারবে কিনা এবং পারলেও পাকিস্তানের পদক্ষেপ কী হবে তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। পাকিস্তান ইতোমধ্যেই তাদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। শোনা যাচ্ছে দুই দেশের পরমাণু অস্ত্রের প্রস্তুতির কথাও। সীমান্তে দুই দেশের বাহিনীকে সতর্ক প্রহরায় রাখা হয়েছে। পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফও ভারতকে সতর্ক করেছেন। ভারত এখনো সামরিক হামলা না চালালেও কূটনীতিকভাবে পাকিস্তানকে পরাস্ত করতে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। কয়েকটি দেশ ভারতকে সমর্থন দিয়েছে। দুই দেশের উত্তেজনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেও যাচ্ছে। দুই দেশই তাদের বক্তব্য তুলে ধরছে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সামনে। ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
 
ভারতের প্রস্তুতি
 
ভারতের একটি সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানে হামলার জন্য প্রাথমিক কাজ শেষ করেছে ভারত। পাকিস্তানের কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে এই হামলা চালাবে ভারত। ‘কোল্ড স্টার্ট ডকট্রিন’ এর অধীনে এই হামলা চালানো হবে। ভারত তিন ধাপে হামলার পরিকল্পনা করছে। ইতোমধ্যে ভারত হামলার জন্য সামরিক বিমান এবং বিমান বাহিনীকে বিমান ঘাঁটিতে নিয়ে যেতে শুরু করেছে। আমাদের নয়াদিল্লি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ভারত পাকিস্তান সীমান্তে নজরদারি আরো বাড়িয়েছে।
 
ভারত শাসিত কাশ্মিরের উরিতে সেনা ঘাটিতে গত রবিবার রাতে জঙ্গি হামলায় ১৮ জন সৈন্য নিহত হওয়ার পর ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং পাকিস্তানকে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বলে আখ্যায়িত করেন।  এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিলো বলে মনে করছেন ভারতের অনেক সেনা কর্মকর্তা বা নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
 
ভারত কীভাবে এর জবাব দেবে তা ঠিক করার জন্য দিল্লিতে সিনিয়র মন্ত্রীদের সঙ্গে এক বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভারত তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, পাকিস্তান-ভিত্তিক জয়েশ-এ-মুহম্মদ নামের একটি জঙ্গি গোষ্ঠী এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী গতকাল মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে কাশ্মির নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারেন বলে জানা গেছে। বলা হচ্ছে যে এই বৈঠক থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটিও কাশ্মির পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবে বলে কথা রয়েছে। রবিবার হামলার পরই ভারতের ডিজিএমও জানিয়েছিলেন, ভারত পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরপর সেনাবাহিনী থেকে পাকিস্তানের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রতি আহবান জানানো হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং তার যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সফর বাতিল করেন। পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্করও তার বিদেশ সফর কাটছাট করেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর এবং স্বরাষ্ট্র সচিব কাশ্মিরের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে তিনি বিস্তারিত প্রধানমন্ত্রী মোদীকে জানান। উরি সেনা ঘাটিতে হামলার পর নিহত চার জঙ্গির কাছ থেকে উদ্ধার করা বিভিন্ন অস্ত্র এবং সরঞ্জামে পাকিস্তানের নাম খোদাই করা ছিল বলে ভারতের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
 
ভারত সামরিক প্রস্তুতির পাশাপাশি কূটনীতিকভাবে পাকিস্তান একঘরে করতে প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং প্রতিদ্বন্দ্বী চীনও উরিতে হামলার পর ভারতকে সমর্থন দিয়েছে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়া পাকিস্তানের আসন্ন সামরিক মহড়া বাতিল করেছে। তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সেটি অস্বীকার করা হয়েছে।
 
মোদীর ওপর চাপ বাড়ছে
 
প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা নিয়ে গত মে মাসে একটি সমীক্ষা চালায় পিউ রিসার্চ সেন্টার। এতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা একটু হ্রাস পেলেও মোটামুটি একই আছে। কিন্তু তার পাকিস্তান নীতির প্রতি বিরূপ বেশিরভাগ মানুষ। ৮১ শতাংশ ভারতীয়র কাছে মোদীর কাজ সন্তোষজনক। এক বছর আগে এই সংখ্যাটা ছিল ৮৭ শতাংশ। যেভাবে মোদী দেশের অর্থনৈতিক ইস্যু সামলাচ্ছেন তার প্রশংসা করেছেন দেশবাসী। ২০১৪ সালে মাত্র ৫৫ শতাংশ দেশবাসী মনে করতেন মোদী অর্থনীতি ভালই সামলাচ্ছেন। এখন সেই কথা মনে করছেন ৮০ শতাংশ। সন্ত্রাসবাদ প্রশ্নে মোদীর কাজে সন্তুষ্ট ৬১ শতাংশ। বিশ্বের কাছে ভারতের গ্রহণযোগ্যতা ১০ বছর আগের তুলনায় এখন বেড়েছে বলে মনে করেন ৬৮শতাংশ। কিন্তু তিনি যেভাবে পাকিস্তান ইস্যু সামলাচ্ছেন সেটা সমর্থন করেন না সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ। মাত্র ২২ শতাংশ মানুষ মোদীর পাকিস্তান নীতিকে সমর্থন করেছেন। মে মাসে না হয়ে এই সমীক্ষা যদি এখন উরি-পরবর্তী সময়ে করা হত তাহলে মোদীর সমর্থন যে আরো কত কমতো তা নিয়েই এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আর এই জরিপটি ভারতীয় গণমাধ্যমে গুরুত্ব পেয়েছে উরিতে হামলার পর।
 
পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা করতে বিল মার্কিন কংগ্রেসে
 
পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্র’ ঘোষণা করার জন্য বিল পেশ হল মার্কিন কংগ্রেসে। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক, দু’দলের মধ্যেই এই বিলের প্রতি সমর্থন রয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে বিলটি পেশ হয়েছে। কংগ্রেসের সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত সাবকমিটির চেয়ারম্যান তথা রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান টেড পো নিজে বিলটি পেশ করেছেন। বিলের অন্যতম সমর্থক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান তথা সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত সাবকমিটির প্রভাবশালী সদস্যা ডানা রোরাবাশার। ‘পাকিস্তান স্টেট স্পনসর অব টেররিজম ডেজিগনেশন আইন’ নামে ওই বিল পেশ করার পর টেড পো বলেছেন, ‘পাকিস্তানকে সাহায্য করা বন্ধ করতে হবে কারণ তারা বেইমানি করছে এবং পাকিস্তান আসলে যে ধরনের রাষ্ট্র, তাদের সেই তকমাই দিতে হবে— সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্র।’ পো আরও বলেছেন, ‘পাকিস্তান সহযোগী হিসেবে বিশ্বাসযোগ্য তো নয়ই, তা ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান আমেরিকার শত্রুদের সাহায্য করে আসছে এবং প্ররোচনা দিচ্ছে।’ মার্কিন কংগ্রেসের সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত সাবকমিটির চেয়ারম্যানের কথায়, ‘ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দেওয়া থেকে শুরু করে হাক্কানি নেটওয়ার্কের সঙ্গে দহরম মহরম, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইতে পাকিস্তান কোন পক্ষে তা বুঝে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে। এটা স্পষ্ট যে পাকিস্তান মোটেই আমেরিকার পক্ষে নয়।’
 
পাকিস্তানের প্রস্তুতি
 
ভারত পাকিস্তানে যেকোনো মুহূর্তে হামলা চালাতে পারে এমন একটি আশংকাও তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তান প্রথমে হামলা চালাবে না। তবে ভারতের হামলা প্রতিরোধে সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। পাকিস্তান ভারতকে সীমান্তের রেড লাইন পার হতে দেবে না।
 
মার্কিন পরমাণু বিশেষজ্ঞ হ্যানস ক্রিসটেনসেন টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, পাকিস্তান যদি ভারতের সঙ্গে সামরিক দিক দিয়ে কোনভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবে না। আর সেক্ষেত্রে ভারতীয় বাহিনী সমস্যায় পড়তে পারে, যদি না তাদের কোন প্রস্তুতি না থাকে।
 
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে এনিয়ে বেশ সতর্ক অবস্থা অবলম্বন করা হচ্ছে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা পিআইএ’র মুখপাত্র ডেনিয়েল গিলানি জানিয়েছেন, বুধবার সকাল থেকে গিলগিট, স্কার্দু ও চিত্রাল এলাকায় ‘বিমান পথ বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। ভারত পাকিস্তানে আক্রমণ করতে পারে এমন আশংকায় এসব ফ্লাইট বন্ধ রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইসলামাবাদ ও পেশোয়ারের মধ্যকার মূল মহাসড়কের কিছু অংশও বন্ধ রাখা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, সংস্কারের জন্য মহাসড়ক বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এই মহাসড়ক যুদ্ধবিমানের ওঠানামায় ব্যবহার করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে পরমাণু অস্ত্র হ্রাসের পদক্ষেপ নিতে বললেও পাকিস্তান তা সরাসরি প্রত্যাখান করেছে বলে গনমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। পাকিস্তানের জাতসিংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল রাহিল শরিফের সাথে আলাপ করেছেন। তারা উভয়ই প্রস্তুতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করছেন কাশ্মির ইস্যুর সমাধানে। 

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates