Thursday, October 27, 2016
ব্রাজিল সহ ল্যাটিন আমেরিকায় বাংলাদেশে তৈরি কাপড়ের চাহিদা ভালো।
পোশাকশিল্পের প্রচলিত বা মূল বাজারের বাইরে এবার নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানি সম্প্রসারণ করছে বাংলাদেশ। এতদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও কানাডাতে রপ্তানি হলেও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর তথ্যে নতুন বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি মূল্য ক্রমেই বাড়ছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৪৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানি হয় ৩৬১ কোটি ডলারের। অথচ এর আগের অর্থবছরে ২০১২-১৩-তে নতুন বাজারে রপ্তানি হয় ২৯৫ কোটি ডলারের পোশাক। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্যে জানা যায়, পোশাক রপ্তানির জন্য নতুন বাজারের মধ্যে তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, চীন, কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, আফ্রিকা, ব্রাজিল, মধ্যপ্রাচ্য, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, আর্জেন্টিনা, চিলি, উরুগুয়ে, পর্তুগাল ও ভারতসহ অন্তত ২৫টি দেশকে বিবেচনায় রাখছে সরকার ও সংশ্লিষ্টরা। যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্রেতাবিমুখ হওয়ায় এবং ইউরোপে পোশাক রপ্তানিতে তীব্র প্রতিযোগিতা থাকায় নতুন বাজারের দিকে মনোযোগ দিতে শুরু করেছেন পোশাকশিল্প মালিকরা। অন্যদিকে গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধিও কমে যায়। এক্ষেত্রে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য নতুন বাজারের দিকে ঝুঁকছেন বিক্রেতারা। সরকারও নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানির জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য কানাডা, জাপান, চীন ও ভারত সরকারের সঙ্গে শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানি চুক্তি করেছে। এ ছাড়া উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে নতুন বাজারে ৩ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অন্যান্য দেশের সঙ্গেও শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে জাপানে ২০১১-১২ থেকে ২০১৩-১৪ এ তিন অর্থবছরে যথাক্রমে ৪০, ৪৭ ও ৫৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করা হয়। অন্যদিকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে চীনে ২৪, রাশিয়ায় ২০, ব্রাজিলে ১৭, দক্ষিণ কোরিয়ায় সাড়ে ১৩ কোটি, ভারতে নয় কোটি ও দক্ষিণ আফ্রিকায় পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশের পৌনে পাঁচ কোটি ডলার আয় হয়। এ ছাড়া নতুন বাজার তৈরির অংশ হিসেবে সরকার ছোট গার্মেন্ট মালিকদের দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উল্লেখ্য, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ইপিবি সাফটা সার্টিফিকেট শুধু বিজিএমইএ ও বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সদস্যদের দিয়ে থাকে। এবার ইপিবি ছোট উদ্যোক্তাদেরও এ দেশগুলোতে যেখানে বাংলাদেশি পোশাকের চাহিদা আছে এ সার্টিফিকেট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার ফলে দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশে (বিশেষ করে ভারত, নেপাল, ভুটান) পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক সুবিধা পাওয়া যাবে। ফলে ছোট কারখানাগুলো যেগুলোর অনুমোদন না থাকায় এ দেশগুলোতে এতদিন পোশাক রপ্তানিতে সমস্যা হচ্ছিল তারা এখন এ দেশগুলোতে পোশাক রপ্তানি করতে পারবে। তবে বিজেএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও তারা এ ছোট কারখানাগুলো পণ্যের গুণগত মান যেন নিশ্চিত করতে পারে তার জন্য সংশ্লিষ্টদের মনিটরিং করা উচিত বলে জানান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোশাক খাতের নতুন বাজার সম্প্রসারণে বেশ কিছু বাধা আছে। যেমন- উচ্চ শুল্ক, ব্যাংকিং ও কাস্টমের বিপরীতে সমস্যা ইত্যাদি। এগুলো দূর হলে নতুন বাজারে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। তারা বলছেন বাধাগুলো দূর হলে আগামী এক দশকে পোশাকের মোট রপ্তানিতে নতুন বাজারের অংশ হবে ৬০-৭০ শতাংশ। বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক এই যে, সারা বিশ্বে বেসিক গার্মেন্টের চাহিদা প্রতিবছর বাড়ছে। আর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত পণ্যের ৪০ শতাংশই বেসিক গার্মেন্টেন। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে বিশ্বমন্দায় প্রধান বাজারগুলোতে রপ্তানি কমে যাওয়ার আশঙ্কায় ছোট ছোট নতুন বাজারের দিকে মনোযোগ বাড়ানো হয়। জানা যায়, উদ্যোক্তারা নির্দিষ্ট কয়েকটি বাজারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে এখন নতুন বাজারের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। এ জন্য এসব বাজারের আবহাওয়া ও স্থানীয় ফ্যাশন চাহিদা নিয়ে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে জোর দিচ্ছেন তারা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, প্রচলিত বাজারগুলোর পাশাপাশি আমাদের নতুন বেশ কিছু বাজার তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকায় বাংলাদেশে তৈরি কাপড়ের চাহিদা ভালো। আর রাশিয়াতেও ভালো সম্ভাবনা আছে। তবে সেখানে কিছু ব্যাংকিং সমস্যা আছে। এ জন্য কূটনৈতিক পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা করে সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করা হবে। জানা যায়, পোশাকশিল্পের জন্য নতুন বাজার খুঁজতে প্রতিবছরই বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধি দল পাঠায়। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভাবনাময় বিভিন্ন দেশে দূতাবাস খোলা হচ্ছে।
Labels:
আন্তর্জাতিক,
ব্রাজিল,
লাতিন আমেরিকা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment