Social Icons

Wednesday, October 26, 2016

প্রকাশ্যে মেয়েদের গণধর্ষণ করাই রীতি এই বীভৎস ‘উৎসব’-এর

এই উৎসব চলাকালীন নিগৃহীত হয়েছেন অজস্র মহিলা।‘নিগ্রহ’ বলতে প্রকাশ্যে মহিলাদের শারীরিকভাবে আঘাত করা, বিবস্ত্র করা, গোপনাঙ্গ স্পর্শ করা, এবং সুযোগ পেলে তাঁদের চরম সর্বনাশ করা।

পৃথিবীতে যে সমস্ত আদিম বর্বরোচিত প্রথা আজও প্রচলিত রয়েছে, তার মধ্যে এটি একটি। মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত এই প্রথা অনুষ্ঠিত হয় একটি ‘উৎসব’ বা ‘খেলা’র আদলে। এবং এই খেলার লক্ষ্য হল— প্রকাশ্যে মহিলাদের গণধর্ষণ।
‘তাহাররুশ’ নামের এই খেলা প্রচলিত রয়েছে মূলত ইজিপ্টে। এছাড়া মধ্য প্রাচ্যের কোনও কোনও দেশেও প্রচলন রয়েছে এই বীভৎস প্রথার। নির্ভরযোগ্য সূত্রের মত— বর্তমানে ওই অঞ্চলে অন্তত হাজারের উপর এমন মহিলা রয়েছেন যাঁরা ‘তাহাররুশ’ চলাকালীন নিগৃহীত হয়েছেন। ‘নিগ্রহ’ বলতে প্রকাশ্যে মহিলাদের শারীরিকভাবে আঘাত করা, বিবস্ত্র করা, গোপনাঙ্গ স্পর্শ করা, এবং সুযোগ  পেলে তাঁদের চরম সর্বনাশ করা। সর্বদাই এই নিগ্রহ ঘটে ভিড়ের মধ্যে, এবং নিগ্রহকারীদের সংখ্যা হয় অজস্র। ফলে না যায় সেই সমস্ত লাঞ্ছনাকারীদের চিহ্নিত করা, না যায় তাদের কোনও শাস্তি সুনিশ্চিত করা।
বিগত বছর দশেক কিংবা তারও বেশি সময় ধরে ইজিপ্টে চলছে এই নারকীয় উৎসব। রমাদান উদযাপনের সময়েই আয়োজন করা হয় তাহাররুশ জামা-ই-এর। এই খেলার সময়ে উপস্থিত খেলোয়াড়রা (যাদের সকলেই পুরুষ) নিজেদের মধ্যে একটির ভিতর আর একটি অর্থাৎ সমকেন্দ্রিক তিনটি মানববৃত্ত তৈরি করে। বৃত্ত তিনটির কেন্দ্রে এনে ফেলা হয় এক বা একাধিক পথচারী মহিলাকে। প্রথম বৃত্তটিতে দাঁড়ানো পুরুষদের লক্ষ্য হয় একেবারে কেন্দ্রে থাকা মহিলাদের কাছে পৌঁছনো, এবং তাঁদের শারীরিকভাবে ভোগ করা। দ্বিতীয় বৃত্তে দাঁড়ানো পুরুষরা চেষ্টা করে প্রথম বৃত্তে থাকা খেলোয়া়ড়দের সরিয়ে তাদের জায়গা নিতে। এর ফলে প্রবল ঠেলাঠেলির সৃষ্টি হয়। আর তৃতীয় বৃত্তে থাকা খেলোয়াড়দের কাজ হল, ভিতরে ঘটে চলা সমস্ত ঘটনাকে পথচারীদের চোখ থেকে আড়াল করে রাখা। এর মধ্যেই কিছু খেলোয়াড় আবার আক্রান্ত মহিলাদের রক্ষা করার ভান করে। আদপে তাদেরও লক্ষ্য থাকে আক্রান্ত মেয়েটিকে ভোগ করে নেওয়া। তাছাড়া ওই উত্তুঙ্গ জনগণকে ওই হাতে গোনা কয়েকজন ‘রক্ষাকারী’র পক্ষে যে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়, তা বলাই বাহুল্য।
এই বর্বরোচিত খেলার খবর বহুকাল যাবৎ ইজিপ্ট আর মধ্য প্রাচ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে গিয়েছিল। বিষয়টি বৃহত্তর দুনিয়ার কাছে প্রথম প্রকাশ্যে আসে যখন আমেরিকান সংবাদসংস্থা সিবিএস-এর রিপোর্টার লারা লোগান তাহাররুশে নিগৃহীত হন। ইজিপ্টের রাষ্ট্রপতি হোসনি মুবারকের পতনের পরে লারা গিয়েছিলেন ইজিপ্টে রিপোর্টিং করতে। ইজিপ্টের তাহরির স্কোয়্যারে তাহাররুশে উন্মত্ত জনগণ ঘিরে ধরে লারাকে। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে যৌন অত্যাচার চলে তাঁর উপর। কয়েক মাস পরে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই জানান তাঁর এই লাঞ্ছনার কথা।
লারা লোগান
২০১৬-র শুরুর দিকে তাহাররুশের মতো ঘটনা লক্ষ করা যায় জার্মানি-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও। উন্মত্ত জনগণের হাতে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত হন ইউরোপের প্রায় হাজারখানেক মহিলা। সেইসব দেশের প্রশাসন জানায়, মধ্য-প্রাচ্য থেকে আগত উদ্বাস্তুরাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। অর্থাৎ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ছিল, উদ্বাস্তুদের হাত ধরে তাহাররুশ সংস্কৃতির আগমন ঘটে গিয়েছে ইউরোপেও। এর পরেই এই বীভৎস খেলার উৎস অনুসন্ধান করতে গিয়ে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য মেলে।
জার্মানিতে আক্রান্ত এক তরুণী

এই একবিংশ শতকেও তাহাররুশের মতো বর্বরোচিত একটি উৎসব যে নির্বিচারে প্রতি বছর পালিত হয়ে চলেছে, তা মানবতার লজ্জা। বর্তমান মানবসমাজ একদিকে নারীর সম্মান রক্ষার জিগির তোলে, অন্যদিকে সেই নারীরই সম্মানহানিকে উৎসবের আকার দেয়। এই অমানবিকতা বন্ধ হোক— এটাই একমাত্র কাম্য।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates