Social Icons

Friday, October 28, 2016

হৃদরোগ কি? প্রচলিত চিকিৎসা, নতুন আশা, কিভাবে সম্ভব, নিজের দায়িত্ব নিতে হবে নিজেই উক্ত বিষয় সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানুন !

হৃদযন্ত্রের যেকোনো ধরনের অসুস্থতা হলেও সাধারণভাবে হৃদরোগ বলতে করোনারি আর্টারি ডিজিজকে বোঝায়। এতে হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে কোলেস্টেরল বা চর্বি জমে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। ফলে হৃৎপিণ্ডে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায় এবং বুকে ব্যথাসহ হৃদরোগের নানা উপসর্গ দেখা দেয়। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ, ধূমপান, মেদস্থূলতা এবং টেনশনকে হৃদরোগের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ মনে করা হয়। বিশ্বে প্রতিবছর দেড় কোটিরও বেশি মানুষ হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করে। পাশ্চাত্যে মোট মৃত্যুর শতকরা ৪৫ ভাগই ঘটে হৃদরোগে। আমেরিকায় প্রতি ৫ জনে ১ জনের মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ। পাশ্চাত্যের অন্ধ-অনুকরণ আর ভ্রান্ত জীবনাচরণের কারণে বাংলাদেশসহ প্রাচ্যের দেশগুলোতেও এ রোগের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে হৃদরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে হৃদরোগ মহামারি আকারে দেখা দেবে।
হৃদরোগের প্রচলিত চিকিৎসা:
প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থায় ধমনীতে জমে থাকা চর্বির স্তর পরিষ্কার করার জন্যে ব্লকেজের পরিমাণ অনুসারে ওষুধ, এনজিওপ্লাস্টি কিংবা বাইপাস সার্জারির পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু এর কোনোটি দিয়েই পুনঃব্লকেজ প্রতিরোধ করা যায় না। এনজিওপ্লাস্টি করার ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশেরও বেশি রোগীর ধমনীর ব্লকেজ আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ব্লকেজ-এর চিকিৎসা করা হলেও এর কারণ ও পুনঃব্লকেজ প্রতিরোধের ব্যাপারে রোগীকে খুব ভালোভাবে সচেতন করা হয় না। ফলে অনেক রোগী পুনরায় নতুন ব্লকেজ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এছাড়া হৃদরোগের ক্ষেত্রে অত্যধিক মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা অন্যতম প্রধান অনুঘটক যার কোনো চিকিৎসা হৃদরোগের প্রচলিত চিকিৎসায় অনুপস্থিত। তাই অপারেশনের পর রোগী যখন পুরনো জীবন অভ্যাসে ফিরে যায়, সে আবারও আক্রান্ত হয় ব্লকেজসহ হৃদযন্ত্রের নানা জটিলতায়। জরিপে দেখা গেছে, অপারেশনের পর প্রতি ২০ জনে ১ জন রোগীর পুনরায় হার্ট অ্যাটাক হয় এবং স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় ৪০ জনে ১ জন রোগী। আর দ্বিতীয়বার বাইপাস করানো মানে ঝুঁকির পরিমাণ ১০% থেকে ২০% বেড়ে যাওয়া। অপারেশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং বিপুল ব্যয়ভারের কথা তো বলাই বাহুল্য। হৃদরোগের প্রচলিত চিকিৎসা অর্থাৎ এনজিওপ্লাস্টি বা বাইপাস সার্জারি যে কোনো স্থায়ী সমাধান নয় তা চিকিৎসাবিজ্ঞানের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য পাঠ্য বই- ডেভিডসন’স প্রিন্সিপালস এন্ড প্র্যাকটিস অফ মেডিসিন এর সাম্প্রতিক সংস্করণে খুব স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে।
নতুন আশা নতুন বিশ্বাস:
অথচ খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে এর চেয়ে অনেক ভালো ফল পাওয়া গেছে বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতায়। এতদিন চিকিৎসকরা বিশ্বাস করতেন, আর্টারি একবার ব্লক হওয়া শুরু করলে বাইপাস সার্জারি কিংবা এনজিওপ্লাস্টি ছাড়া কোনো পথ নেই। চিকিৎসকদের এই রক্ষণশীল চিন্তার মর্মমূলে প্রথম আঘাত হানেন ক্যালিফোর্নিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. ডীন অরনিশ। যোগগুরু স্বামী সৎচিদানন্দের যোগ ব্যায়াম, ধ্যান এবং নিরামিষ ভোজনের জীবন দর্শনে প্রভাবিত হয়ে হৃদরোগের ক্ষেত্রে এর ভূমিকা নিয়ে গবেষণায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৮৭ সালে ৪৮ জন রোগীকে ২ ভাগে ভাগ করে ডা. অরনিশ এ গবেষণাটি চালান। এক গ্রুপের ২৮ জনকে এক বছর ধরে কম চর্বিযুক্ত খাবার দেয়া হয়, মেডিটেশন ও যোগ ব্যায়ামের অনুশীলন করানো হয়। সেইসাথে ধূমপান বর্জন এবং রোগীদেরকে মমতা ও সহানুভূতিপূর্ণ মানসিক অবস্থায় রাখার চেষ্টা করা হয়। অন্যদিকে বাকি ২০ জনকে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন নির্দেশিত পথ্যবিধি এবং প্রচলিত চিকিৎসার অধীনে রাখা হয়। এক বছর পর দুই গ্রুপের ওপরই পরীক্ষা চালিয়ে দেখা যায় ১ম গ্রুপের রোগীদের আর্টারিতে ব্লকেজের পরিমাণ তো বাড়েই নি, বরং কমেছে এবং হার্টে রক্ত চলাচল বেড়েছে। অন্যদিকে প্রচলিত চিকিৎসা চালিয়ে গেলেও দ্বিতীয় গ্রুপের প্রায় সবারই ব্লকেজের পরিমাণ বেড়েছে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, যে রোগীরা বেশি দিন ধরে এ প্রক্রিয়া অনুশীলন করেছেন, অন্যদের চেয়ে তারা বেশি উপকার পেয়েছেন। ১৯৯৮ সালে জার্নাল অফ আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-এ গবেষণাটি সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। ডা. ডীন অরনিশের এ গবেষণা আমেরিকায় আলোড়ন সৃষ্টি করে। তার ‘প্রোগ্রাম ফর রিভার্সিং হার্ট ডিজিজ’ বেস্ট সেলার গ্রন্থে রূপান্তরিত হয়। সাপ্তাহিক নিউজ উইক এর জুলাই ২৪, ১৯৯৫ এর প্রচ্ছদ নিবন্ধে বলা হয়, ওমাহার একটি নামকরা বীমা কোম্পানি ২০০ হৃদরোগীকে ড. ডীন অরনিশের হৃদরোগ নিরাময় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। কারণ একটি বাইপাস করাতে যেখানে ৪০ হাজার ডলার খরচ হয় সেখানে অরনিশের বছরব্যাপী প্রোগ্রামে খরচ মাত্র সাড়ে ৫ হাজার ডলার। এতে ২০০ রোগীর মধ্যে ১৯০ জন এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ অব্যহত রাখেন। এক বছরে ১৯০ জনের মধ্যে ১৮৯ জন সুস্থ হয়ে যান। মাত্র ১ জন রোগীর অপারেশনের প্রয়োজন হয়। এ অভাবনীয় সাফল্যের ফলে সারাদেশ থেকে হাসপাতালগুলো ডাক্তারদের বিভিন্ন টিম ডা. অরনিশের কাছে পাঠাচ্ছে এ প্রক্রিয়া শেখানোর ট্রেনিং নিতে। কারণ এ প্রক্রিয়ায় যে শুধু অপারেশনের খরচ বাঁচে তা-ই নয়, বরং অপারেশনের পর রোগীকে যে সারাজীবন ধরে ওষুধ খেতে হয়, সে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও ব্যয় বহন করা থেকেও রোগী মুক্তি পায়। ওষুধ ও সার্জারি ছাড়া হৃদরোগ নিরাময়ে ডা. অরনিশের এ প্রক্রিয়া এত ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে যে, একে আর বিকল্প চিকিৎসা বলা যায় না। বলতে হয় হৃদরোগ চিকিৎসার মূলধারায় এর অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে।
কিভাবে সম্ভব ?
৬০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে সানফ্রান্সিসকোর ডা. মেয়ার ফ্রেডম্যান এবং ডা. রে রোজেনম্যান দীর্ঘ গবেষণার পর দেখান যে, হৃদরোগের সাথে অস্থিরচিত্ততা, বিদ্বেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি বা জীবন পদ্ধতির সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।
মার্কিন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ক্রিচটন দীর্ঘ গবেষণার পর দেখিয়েছেন যে, হৃদরোগের কারণ প্রধানত মানসিক। তিনি বলেছেন, কোলেস্টেরল বা চর্বিজাতীয় পদার্থ জমে করোনারি আর্টারিকে প্রায় ব্লক করে ফেললেই যে হার্ট অ্যাটাক হবে এমন কোনো কথা নেই।
কোরিয়া যুদ্ধের সময় রণক্ষেত্রে নিহত সৈনিকদের অটোপসি করা হতো। ডাক্তাররা সবিস্ময়ে লক্ষ্য করেন, নিহত তরুণ সৈনিকদের শতকরা ৭০ জনেরই আর্টারি চর্বি জমে প্রায় বন্ধ হয়ে এসেছে (অ্যাডভান্সড স্টেজ অফ অ্যাথেরোসক্লেরোসিস) এবং দ্রুত হার্ট অ্যাটাকের পথে এগুচ্ছে। এদের মধ্যে ১৯ বছর বয়স্ক তরুণ সৈনিকও ছিলো। ডা. ক্রিচটন প্রশ্ন তোলেন, যদি শুধু করোনারি আর্টারিতে চর্বি জমাটাই হৃদরোগের কারণ হতো তাহলে তো এই তরুণ সৈনিকদের মৃত্যু গুলির আঘাতে নয়, হৃদরোগেই হতো।
করোনারি আর্টারির ৮৫% বন্ধ অবস্থা নিয়েও একজন ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিয়েছেন; আবার দেখা গেছে একেবারে পরিষ্কার আর্টারি নিয়ে অপর একজন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। রোগ ও অসুস্থতা থেকে মুক্তির জন্যে প্রথম প্রয়োজন এই দৃষ্টিভঙ্গি বা জীবনদৃষ্টির পরিবর্তন। আর দৃষ্টিভঙ্গি বা জীবনদৃষ্টি পরিবর্তনের সবচেয়ে সহজ পথ হলো মেডিটেশন।
নিজের দায়িত্ব নিতে হবে নিজেকেই:
বলা হয়, Patient cure themselves, doctors show the way. নব্য চিকিৎসা ধারার প্রবর্তক ডা. ডীন অরনিশ, ডা. দীপক চোপড়া, ডা. ল্যারী ডসি, ডা. জন রবিন্স, ডা. কার্ল সিমনটন, ডা. বার্নি সীজেল, ডা. ক্রিশ্চিয়ানে নর্থট্রপ, ডা. হার্বার্ট বেনসন, ডা. জোয়ান বরিসেঙ্কো, ডা. এন্ড্রু ওয়েলস, ডা. এডওয়ার্ড টাওব, ডা. মিখাইল স্যামুয়েলস প্রমুখ বডি, মাইন্ড, স্পিরিট সাময়িকীর ১৯৯৭ সালের বিশেষ সংখ্যায় একবিংশ শতকের স্বাস্থ্য প্রচ্ছদ কাহিনীতে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে মত প্রকাশ করেছেন যে, সুস্থ থাকতে হলে নিজের স্বাস্ব্যের দায়িত্ব নিজেকেই গ্রহণ করতে হবে। নিজেকে নিরাময় করার ক্ষমতা প্রতিটি মানুষের সহজাত ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত।এই সহজাত ক্ষমতার সাথে নিজের বিশ্বাসকে সম্পৃক্ত করতে পারলে প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার শতকরা ৯০ ভাগ খরচই অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে। কারণ বাইপাস সার্জারি, এনজিওপ্লাস্টি বা সারাজীবন কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রক ওষুধ সেবনের চাইতে সঠিক জীবনদৃষ্টি গ্রহণ করে জীবনধারা পরিবর্তনের খরচ অনেক কম।
ডা. হার্বার্ট বেনসন বলেন, একজন মানুষ নিজেই শিথিলায়ন, মেডিটেশন, ব্যায়াম ও পুষ্টি সংক্রান্ত জ্ঞান লাভ করতে পারে এবং নিজের জীবনে তা প্রয়োগ করতে পারে। বর্তমানে যেখানে রোগী ওষুধ বা সার্জারির ওপর নির্ভর করছে সেখানে তাদেরকে নিজের ওপর নির্ভর করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates