একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে রপ্তানি কমেছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৪শ’ কোটি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আলোচ্য সময়ে দেশটিতে পোশাক রপ্তানি কমেছে ১২ শতাংশ। অথচ ইউরোপের ২৭টি দেশে সম্মিলিতভাবে রপ্তানি বেড়েছে ১১ শতাংশের বেশি। রপ্তানি বেড়েছে নতুন বাজারের দেশগুলোতেও। কিন্তু একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমে যাওয়ায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের মধ্যেও। একই সময়ে বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাজার কানাডাতেও রপ্তানি কমেছে সাড়ে ১১ শতাংশ। তারা মনে করছেন, আগামী মাসগুলোতে রপ্তানি এভাবে কমতে থাকলে তা দেশের পুরো রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ঠিক কী কারণে দেশ দুটোতে রপ্তানি কমেছে, তারা এখন তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, বিশ্বব্যাপী পোশাকের চাহিদা কমতির দিকে। অন্যদিকে দামও কমছে। এর প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাকের রপ্তানি কমছে বলে মনে করছি। এছাড়া আলোচ্য সময়ে দুটি ঈদ থাকায় রপ্তানি কমেছে। তবে এর বাইরেও আর কোন কারণ রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানি কমলে ওই প্রভাব সব বাজারেই পড়ার কথা। অথচ কমেছে কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বাজারে। এর প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করা দরকার। কেননা আগামী মাসগুলোতেও সেখানে এ হারে রপ্তানি কমতে থাকলে তা পুরো রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
অবশ্য রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র ভাইস চেয়ারম্যান মাফরূহা সুলতানাও যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেন নি। তিনি মনে করেন, বছরের শুরুর দিকে রপ্তানি কিছুটা কম থাকে। এছাড়া কোন দেশের চাহিদার বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। সেই বিবেচনায় এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, দুটি ঈদে লম্বা ছুটি ছিল। সমপ্রতি চট্টগ্রাম বন্দরে কিছু অসুবিধা (ট্রেইলার ধর্মঘট) ছিল। আবার ইউরোপের মুদ্রার মান কমেছে। এটি সার্বিকভাবে রপ্তানিতে কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, আমরা তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, অর্ডার বাতিল হওয়ার মত পরিস্থিতি নেই। আগামী মাসগুলোর জন্য স্বাভাবিক অর্ডার রয়েছে। তারা উদ্বিগ্ন নন। সার্বিকভাবে এখনো রপ্তানি প্রবৃদ্ধি রয়েছে ৪ শতাংশের বেশি।
ইপিবি’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১২৬ কোটি ৩২ লাখ মার্কিন ডলার। পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছিল ১৪৩ কোটি ৬২ লাখ ডলারের পোশাক। অন্যদিকে কানাডার বাজারে গত তিন মাসে সাড়ে ২২ কোটি ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি হলেও পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল সাড়ে ২৫ কোটি ডলার। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ওভেন পোশাকেই চাইতে নিটওয়্যার পোশাক রপ্তানি কমার হার ছিল বেশি। আলোচ্য সময়ে দেশটিতে ওভেন পোশাক রপ্তানি সাড়ে ৯ শতাংশ কমলেও নিটওয়্যার রপ্তানি কমেছে ১৮ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম সুইডেন। এছাড়া নতুন বাজারের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, ব্রাজিল, তুরস্ক, ভারত, চিলি, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ কয়েকটি দেশ।
No comments:
Post a Comment