সারা বিশ্বেই এখন মেয়েদের সম্মানরক্ষা বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে, নারী-অধিকার সম্পর্কে সক্রিয় হয়ে উঠছে বিভিন্ন গণসংগঠন। কিন্তু এই একবিংশ শতকেও এমন চাকরি রয়েছে, যেখানে কোনো মেয়ে প্রবেশ করার আগে ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে নেয়া হয় যে, মেয়েটি কুমারী কি না।
হ্যাঁ, ব্রাজিলের সাও পাওলোতে কোনো মেয়ে যদি শিক্ষকতার পেশায় যুক্ত হতে চান, তাহলে ডাক্তারি সার্টিফিকেটের মাধ্যমে তাকে আগে প্রমাণ করতে হয় যে, তিনি সক্রিয় যৌন জীবন-যাপন করছেন না, এবং তিনি সার্ভাইকাল অর্থাৎ জরায়ুমুখের ক্যানসার কিংবা কোনো যৌন রোগে আক্রান্ত নন।
এই সার্টিফিকেট পেতে হলে নারীদের সরকারের দ্বারা স্বীকৃত কোনো স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হতে হয়। সাধারণত তার পরে সেই ডাক্তার প্যাপ স্মেয়ার টেস্টের মাধ্যমে রোগীর পরীক্ষা করেন। এই পরীক্ষার সময়ে স্পেকুলাম নামক যন্ত্রের মাধ্যমে যোনিমুখকে বিবর্ধিত করে জরায়ুমুখ থেকে কোষের ক্ষুদ্র অংশ পরীক্ষার জন্য কেটে নেয়া হয়। ফলে এই পরীক্ষা নারীদের পক্ষে শুধু যে অবমাননাকর তা-ই নয়, শারীরিকভাবে যন্ত্রণাদায়কও।
ব্রাজিলিয়ান প্রশাসনের দাবি, এই পরীক্ষার মাধ্যমে আসলে যাচাই করতে চাওয়া হয় যে, যিনি শিক্ষকতার কাজে যুক্ত হচ্ছেন, তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ কি না। অর্থাৎ তিনি অন্তত ২০ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে এই চাকরি করে যেতে পারবেন কি না, এবং নিয়মিত স্কুলে বা কলেজে উপস্থিত থাকতে পারবেন কি না। কিন্তু মানবতাবাদী এবং নারীবাদী সংগঠনগুলি এই যুক্তি মানতে নারাজ।
তাদের বক্তব্য, এই পরীক্ষা একটি মেয়ের স্বাধীনতা ও সম্মানে সরাসরি হস্তক্ষেপ। ‘কোনো মেয়ে যৌনজীবনে কতটা সক্রিয়, তা আদৌ তার শারীরিক সুস্থতার পরিচায়ক নয়’, বলছেন সাও পাওলোর নারী-অধিকার আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী আনা পাওলা।
চাকরির জন্য পালনীয় এই অদ্ভুত রীতিকে ‘মধ্যযুগীয়’ বলে দাবি করে এটিকে বন্ধ করার জন্য সরব হয়েছে ব্রাজিলের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
সরকার অবশ্য বিবৃতি প্রকাশ করে সাফাই গাইছে, ‘এই পরীক্ষা মোটেই কোনো বাধ্যতামূলক বিষয় নয়। কোনো মেয়ে চাইলে এই পরীক্ষাকে এড়িয়ে যেতে পারেন।’
‘বাধ্যতামূলক’ যদি নাও হয়, ‘ঐচ্ছিক’ বিষয় হিসেবেই বা এমন অবমাননাকর একটি পরীক্ষা কেন চালু থাকবে এই একবিংশ শতকে, সেই প্রশ্নই তুলছেন ব্রাজিলের মুক্তমনা মানুষেরা।
Tuesday, November 15, 2016
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment