২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলতি বছরের শুরুতে প্রার্থিতা ঘোষণার পর থেকেই মুসলিম, অভিবাসী ও নারী বিদ্বেষী নানা মন্তব্য করে সমালোচিত তিনি। আমেরিকার নির্বাচনী ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী এ প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী এরইমধ্যে বিশ্ব রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। ব্যবসায়ী পরিবার থেকে উঠে আসা ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন- প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে মার্কিন অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনবেন। দর্শক, চলুন দেখে আসি ট্রাম্পের পারিবারিক, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক জীবন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৪ই জুন নিউ ইয়র্ক সিটির কুইন্সে। বাবা ফ্রেড ট্রাম্প ও মা মেরি ট্রাম্পের পাঁচ সন্তানের চতুর্থ তিনি। অন্য ভাই-বোনদের মতো ট্রাম্পও প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষা নেন। পরে বাবা তাকে নিউ ইয়র্ক মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে অষ্টম গ্রেডে ভর্তি করান। পড়াশোনার ছুটিতে বাবার সঙ্গে ব্যবসার বিভিন্ন প্রকল্পে অংশ নিয়ে ভবিষ্যতে ব্যবসায়ী হয়ে উঠার জানান দেন টাম্প।
পরে ১৯৬৮ সালে ওয়ারটন ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়া থেকে অর্থনীতিতে ব্যাচেলর অব সায়েন্স ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৬ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশগ্রহণের ডাক আসে তাঁর। প্রাথমিকভাবে যোগ্য হলেও ১৯৬৮ সালে দ্বিতীয় বাছাইয়ে গোড়ালির সমস্যার কারণে বাদ পড়েন।
জার্মান বংশোদ্ভূত দাদা ফ্রেডরিক ট্রাম্প প্রুশিয়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে উনিশ শতকের গোড়ার দিকে নিউইয়র্কে স্থায়ী বসতি গড়েন। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ব্যবসার মূলধন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আরও প্রসারিত করেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাবা ফ্রেড ট্রাম্প। পড়াশোনা শেষে ১৯৬৮ সালে ২২ বছর বয়সে বাবার ব্যবসায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৯৭৮ সালেই নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে অন্যতম প্রধান আবাসন ব্যবসায়ী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন তিনি।
আশির দশকে আবাসন খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে থাকেন ট্রাম্প। এসময়েই গড়ে তোলেন ৫৮ তলা বিশিষ্ট ব্যবসাকেন্দ্র- ট্রাম্প টাওয়ার। ৯০ এর দশকে জমজমাট ক্যাসিনো ব্যবসা ও ২০০০ সালের পর দেশ-বিদেশের গলফ কোর্সে বিনিয়োগ- ট্রাম্পকে বিপুল সম্পদের অধিকারী করে। ১৯৯১ সালেসালে ওয়ার্ল্ড রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপ ও ১৯৯৬ সালে মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় পৃষ্ঠপোষকতা করে তাঁর প্রতিষ্ঠান। ২০০৩ সালে টেলিভিশন রিয়েলিটি শো দ্য অ্যপ্রেনটিসের উপস্থাপনা টিভি ব্যক্তিত্ব হিসেবে খ্যাতিমান করেছে ট্রাম্পকে। ২০০৫ সালে নিজের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ও করেন তিনি। ব্যবসায়ী ট্রাম্পের মোট সম্পদের পরিমাণ নিয়ে বিভিন্ন রকম জনশ্রুতি থাকলেও তা সাড়ে ৪শ' কোটি ডলারের কাছাকাছি বলে জানিয়েছে বেশ কিছু গণমাধ্যম।
ব্যবসায়ী জীবনের শুরু থেকেই বিতর্ক ট্রাম্পের পিছু নিয়েছে। অবৈধ ব্যবসায় বিনিয়োগ, বেশ কয়েকবার নারী কেলেঙ্কারি কিংবা কর ফাঁকির মতো অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। মিস ইউনিভার্সকে নিয়ে কটূক্তি কিংবা নারীদের নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করেও বিতর্কিত হয়েছেন তিনি।
১৯৭৭ সালে ফ্যাশন মডেল ইভানা জেনিকোভাকে জীবনসঙ্গী করেন ট্রাম্প। ডোনাল্ড জুনিয়র, ইভানকা ও এরিক নামের তিন সন্তান রয়েছে এ দম্পতির। ১৯৯১ এ ইভানার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ১৯৯৩ সালে মার্লা মেপলসকে বিয়ে করেন ট্রাম্প। মেপলসের ঘরে তার চতুর্থ সন্তান স্টেফানির জন্ম হয়। ১৯৯৯ সালে মেপলসের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ২০০৫ সালে সাবেক মডেল মেলানিয়া কেসাভস- এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এ ধনকুবের। মেলানিয়ার ঘরে ট্রাম্পের পঞ্চম সন্তান ব্যারনের জন্ম হয়। বর্তমানে মেলানিয়ার সঙ্গেই সংসার করছেন তিনি।
রাজনীতির সঙ্গে কখনও কোনো যোগাযোগ না থাকলেও ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন করেন ট্রাম্প। ওবামার জন্মস্থান ও গৃহীত নীতির বিষয়ে বিতর্কের জেরে ২০০৯ সালে রিপাবলিকান দলের দিকে ঝুঁকে পড়েন তিনি। অবশেষে চলতি বছরের শুরুতে ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতা। আমেরিকাকে আবারও শীর্ষে নেয়ার স্লোগান দিয়ে দেশব্যাপী প্রাইমারি ও ককাসে দলের ১৭ মনোনয়ন প্রত্যাশীকে হটিয়ে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করেন ট্রাম্প। রানিংমেট হিসেবে বেছে নেন ইন্ডিয়ানার গভর্নর মাইক পেন্সকে।
নির্বাচনী দৌড়ের বিভিন্ন সময়ে নারী, অভিবাসন ও মুসলিম-বিরোধী বক্তব্য দিয়ে সমালোচিত হয়েছেন ট্রাম্প। নিজের বক্তব্যের বিষয়ে বারবার ভোল পাল্টানো এ প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতিকে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
Wednesday, November 9, 2016
Subscribe to:
Post Comments (Atom)


No comments:
Post a Comment