Social Icons

Thursday, November 10, 2016

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পর পশ্চিম গোলার্ধে অভিবাসীদের নতুন গন্তব্যের নাম ব্রাজিল।







যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পর পশ্চিম গোলার্ধে অভিবাসীদের নতুন গন্তব্যের নাম ব্রাজিল। বিশাল আয়তন, সে অনুপাতে সামান্য জনসংখ্যা, ছড়ানো-ছিটানো প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বিস্ফোরণোন্মুখ অর্থনীতি দেশটিকে অভিবাসীদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলেছে। সামনের দশকগুলোতে যে পাঁচ-সাতটি দেশ বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তির সামনের সারিতে আসন করে নিতে জোর প্রতিযোগিতায় রয়েছে, ব্রাজিল তাদের একটি। ইতিমধ্যে লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশ থেকে লোকজন ব্রাজিলে পাড়ি জমানো শুরু করেছে। সেই ঢেউ বাংলাদেশের মতো উদ্বৃত্ত কর্মীর দেশে এসে লাগবে, এটাই স্বাভাবিক। তাদের কেউ কেউ আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে বা বলিভিয়ায় গিয়ে পরে ব্রাজিলে ঢুকে পড়ছে। আবার কেউ কেউ ব্রাজিলে গিয়েও পরে চিলি, কলম্বিয়া, নিকারাগুয়া, কোস্টারিকা, গুয়াতেমালা হয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার দিকে।
সম্প্রতি ওয়াশিংটনের উপকণ্ঠে এক রেস্টুরেন্টে এমন একজন বাংলাদেশির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল। তিনি ব্রাজিল হয়ে দীর্ঘ তিন মাস বিভিন্ন দেশ অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন। আশা করছেন, ছয় বছর কোনোরকমে কাটিয়ে দিতে পারলে তখন বৈধতার আবেদন করতে পারবেন। দালালের কাছে নগদ ২৩ লাখ টাকা গুনে দিয়ে যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন, সেটা শুনলে কখনও কখনও অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস বলে ভ্রম হয়। উচ্চ মাধ্যমিক পাস সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে বেশ সচেতন এই ব্যক্তিকে প্রশ্ন করেছিলাম, এই অর্থে দেশেই কি কোনো কিছু করা যেত না? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, দেশে যাদের করার তারা তো করছেই। যাদের বাইরে যাওয়ার উপায় আছে, তারা দেশে বসে থাকবে কেন? 

ঠিকই তো! এ আর নতুন কী যে ঘরকুনো খ্যাত বাঙালি বহুদিন ধরেই সুদূরের পিয়াসী। শিথানের কালাপাহাড় আর পৈথানের কালাপানি অতিক্রমের ডর দূর হয়েছে আরও আগে। মূলত উপার্জন ও অংশত শিক্ষার তাগিদে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা বুকে উদ্যম আর বুকপকেটে সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে পাখা মেলছে প্রতিদিন। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র বা মধ্যপ্রাচ্যের মতো প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রগুলো তো বটেই, বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে পড়ছে তাদের পদচিহ্ন। পরিসংখ্যানের ভরসা না করেই বলা যায়, বিশ্বে এখন এমন শহর নেই যেখানে অন্তত একজন বঙ্গসন্তান পাওয়া যাবে না। বাঙালির দুনিয়া দখলের গতি ও প্রকৃতি কেবল বছর বছর রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির শুভ সংবাদে নয়, দুর্ঘটনা দুর্বিপাকের মধ্য দিয়েও পাওয়া যায়। বাংলাদেশি তরুণদের অবৈধ পথে সাগর কিংবা মরুভূমি পাড়ি দেওয়ার চিত্র মর্মান্তিক, সন্দেহ নেই। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে এই সত্যও স্পষ্ট হয় যে, ঘুরকুনো বাঙালি ঘর ছাড়তে শিখেছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন_ বাঙালি যখন মরতে শিখেছে, কেউ তাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। এই আপ্তবাক্য পিছুটান ছিঁড়ে বেরিয়ে পড়া তরুণ-তরুণীদের ক্ষেত্রেও সত্য। যেসব ভিসাহীন বাংলাদেশি নাগরিক ব্রাজিলে গিয়ে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে, এ কথা তাদের ক্ষেত্রেও সত্য। যারা নিজের ঘর ছাড়তে শিখেছে, কোনো ঘরের দরজা তাদের জন্য বেশিদিন বন্ধ থাকার উপায় নেই।

বলা বাহুল্য, বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যে কেবল একটি দেশেই এতসংখ্যক নাগরিক রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করবেন। এ-ও জানা কথা, যে কোনোভাবে ব্রাজিলে থাকতেই তারা ১৬ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নানা কায়দায় ব্রাজিলে ঢুকে পড়ছেন এবং যত প্রকার কৌশল সম্ভব, সবই অবলম্বন করছেন। নেপথ্য কারণ আর কিছুই নয়, সম্ভাব্য কর্মক্ষেত্র হিসেবে ব্রাজিলের আকর্ষণীয় অবস্থান। 

প্রশ্ন হচ্ছে, ব্রাজিলের প্রতি বাংলাদেশি জনশক্তির এই আগ্রহ কি বৈধপথেই মেটানো যায় না? এমন নয় যে ব্রাসিলিয়া সরকার অভিবাসীদের প্রতি বিরূপ। বরং দেশটির অর্থনীতির চাকা ঘূর্ণায়মান রাখতে হলে, সামনের দিনগুলোতে যে ব্যাপক শিল্পায়নের পরিকল্পনা সবুজ দেশটি করছে তা বাস্তবায়ন করতে হলে, বিপুল জনশক্তি আমদানি করতে হবে। 

সাধারণ কোনো কর্মী নিজ দেশে ফিরতে না চাইলে তাকে জোর করে বিমানে তুলে দেওয়া হয়েছে_ ব্রাজিলে এমন নজির বিরল। জাতীয় বিচারমন্ত্রী পল আব্রাহামের বক্তব্যের পর বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ব্রাজিলিয়ান আইনে পাচারের শিকার হওয়া এবং অবৈধভাবে কাজ করতে যে কেউ মানবিক কারণে আবাসন ভিসা তথা থাকার অনুমতি পাবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ বৈধভাবেই সুযোগ নিতে পারে।

 
ব্রাজিল যেতে এখন দালালদের জন প্রতি দিতে হয় ১৪ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা। তার মানে, এদেশে বিপুলসংখ্যক জনশক্তি রয়েছে, যারা সমপরিমাণ কিংবা আরও বেশি অর্থ ব্যয় করে ব্রাজিলে যেতে চান। বৈধ ব্যবস্থায় এই খরচ আরও কমে আসারই কথা।

ব্রাজিলের এই সম্ভাবনা এবং বাংলাদেশি জনশক্তির আগ্রহ ও সক্ষমতার মসৃণ মিলন ঘটাতে পারে আমাদের সরকার। ফুটবলের কারণে দেশটি যদিও এদেশীয় জনসাধারণের কাছে দীর্ঘপরিচিত, বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় ব্রাজিলের পতাকায় আমাদের দিগন্তরেখা ছেয়ে যায়; কূটনৈতিক সম্পর্কের দিক থেকে আমরা বহুদিন পিছিয়ে ছিলাম। খুব সম্প্রতি দুই দেশই পাল্টাপাল্টি দূতাবাস খুলেছে। ফলে এখন জনশক্তি রফতানি-সংক্রান্ত আলোচনা এগিয়ে নেওয়া সহজই হবে। 
আমাদের সরকার মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তির বাজার ধরে রাখার জন্য প্রাণপাত করছে বলা যায়। তার সামান্য মনোযোগ ব্রাজিলের দিকে দিলে, আরও বড় বাজার পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশ থেকে ব্রাজিলের দীর্ঘ ও দুর্গম পথে বাংলাদেশিদের তখন শঙ্কা নয়, হাসিমুখে শুভযাত্রা জানাতে পারব আমরা।

1 comment:

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates