আপনি সমবয়সীদের তুলনায় শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন? হাঁটতে গেলে বা দৌড়াদৌড়ি করার সময় সহজে হাঁপিয়ে ওঠেন, সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে গেলে নিঃশ্বাস ঘন হয়ে যায়, একই সঙ্গে বুক ধড়ফড়, বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভব করেন? পেটভরে খাওয়ার পর, বিশেষ করে রাতে বিছানায় শুতে গেলে শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন? মাঝে মধ্যে রাতে শুকনো কাশি অথবা শ্বাসকষ্টের জন্য ঘুম ভেঙে যায়। শরীর ভার ভার মনে হয়, কাজকর্মে অনীহা দেখা দিয়েছে, হাত-পা ও মুখে ফোলা ফোলা ভাব ধরেছে। শারীরিক যোগ্যতা কমার সঙ্গে সঙ্গে যৌনদুর্বলতা দেখা দিয়েছে। ঘন ঘন ঠা-া জ্বর বা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। হজমে গোলমাল দেখা দিয়েছে। খাদ্য গ্রহণে অনীহা বা ক্ষুধামন্দা দেখা দিয়েছে। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেছে। বল প্রয়োগের কাজ করতে গেলে মাথা হালকা অনুভূত হয় অথবা চোখ অন্ধকার হয়ে মাথা ঘোরাতে থাকে।
হৃৎপি- পাম্পের মাধ্যমে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে থাকে। বিশ্রামকালীন আপনার শারীরিক চাহিদা সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকায় শরীরে রক্তপ্রবাহের চাহিদাও সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকে। ফলে হৃৎপি-েরও সর্বনিম্ন পরিমাণে রক্তসঞ্চালন করতে হয়। তবে যখন কোনো ব্যক্তি তার শারীরিক কর্মকা- বাড়িয়ে দেয়, তখন শারীরিক চাহিদা পূরণে হৃৎপি-েরও বেশি পরিমাণ কাজ করতে হয়। বেশি রক্তসঞ্চালনের মাধ্যমে শারীরিক চাহিদা মেটাতে হয়। সর্বোচ্চ কায়িক শ্রম, যেমনÑ ১০০ মিটার রেস বা ক্রিকেট খেলায় দুই উইকেটের মধ্যে দৌড়ানোর সময় হৃৎপি- রক্ত পাম্পের পরিমাণ বহুগুণে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। তাই দেখা যাচ্ছে, আপনি যখন কায়িক শ্রমের মাত্রা বাড়িয়ে দেন, তখন তার সঙ্গে আনুপাতিক হারে আপনার হৃৎপি-ের গতিও বেড়ে যায়।
যখন আপনার হৃৎপি- বেশি কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, তখন আপনার শারীরিক যোগ্যতা কমতে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় হার্টের যোগ্যতা কমতে থাকলেও আপনি তা অনুভব না-ও করতে পারেন। কারণ তখন পর্যন্ত আপনার হৃৎপি- একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ কর্মসম্পাদনে পুরোপুরি সহায়তা করতে সক্ষম হয়। ক্রমে হৃৎপি- আরও দুর্বল হয়ে গেলে প্রথমে আলোচিত উপসর্গগুলো শরীরে পরিলক্ষিত হয়। মানে হৃৎপি- তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে।
অসংখ্য কারণে হার্ট দুর্বল হতে পারে। তবে আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু কারণ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। হাইপ্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপে হৃৎপি-ের কাজের চাপ বাড়ে। অধিক চাপে কাজ করতে করতে এক সময় হার্ট অবসাদগ্রস্ত হয়ে যায়। ফলে হার্ট দুর্বল হতে থাকে। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
ডায়াবেটিস রোগ রক্তনালির প্রভূত ক্ষতিসাধন করে থাকে, বিশেষ করে হৃৎপি-ের রক্তনালির। তাই অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যমান থাকলে হৃৎপি-ে রক্তপ্রবাহের স্বল্পতার জন্য হার্ট দুর্বল হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখাই চিকিৎসা গ্রহণের মূল লক্ষ্য।
রক্তনালিতে কোলেস্টেরল জমা হয়ে হৃৎপি-ে রক্তপ্রবাহের স্বল্পতার জন্য হার্ট দুর্বল হয়ে থাকে। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পরিমিত মাত্রায় কায়িক শ্রম, ক্ষেত্রবিশেষে বাইপাস অপারেশন ও রিং প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করে হার্ট দুর্বলতা থেকে রক্ষা করা যায়।
ইতিপূর্বে যদি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, যার লক্ষণ- সাধারণভাবে বুকে তীব্র ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা, শরীর বেশি ঘেমে যাওয়াসহ নিস্তেজ হয়ে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে থাকে,
যারা হার্টের রক্তনালিতে ইতিপূর্বে এক বা একাধিকবার রিং পরেছেন বা বাইপাস অপারেশন করেছেন কিংবা উভয় পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন, যারা হৃৎপি-ের ভাল্বের সমস্যায় ভুগছেন অথবা কৃত্রিম ভাল্ব প্রতিস্থাপন করেছেন, যারা জন্মগত হৃদরোগে ভুগছেন, যারা বংশগত হৃদরোগে ভুগছেন, অনেকের কোনো ধরনের নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই (অজানা কারণে) হৃৎপি- দুর্বল হতে পারে। আরও কিছু কারণে এমন অবস্থা হতে পারে, যেমনÑ থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা ও রক্তশূন্যতা। সন্তান জন্মদান পরবর্তী অবস্থায় নারীদের মধ্যে হৃৎপি- দুর্বল হওয়ার ঘটনা বেশি ঘটে থাকে।
লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
চেম্বার : শমশের হার্ট কেয়ার, মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাবর রোড, শ্যামলী, ঢাকা
No comments:
Post a Comment