আমাদের শরীরের নানা বর্জ্য পদার্থ, অব্যবহৃত খাদ্য এবং বাড়তি পানি নিষ্কাশনে সাহায্য করে কিডনি । দেহের নানা বর্জ্য পদার্থের ক্ষতিকর টক্সিন থেকে আমাদের শরীরকে মুক্ত রাখার জন্য কিডনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । আর একারণেই আমাদের দেহের সুস্থতার জন্য কিডনির সুস্থতা অনেক বেশি জরুরী ।
কিন্তু আমরা বেশিভাগ সময়েই কিডনির দিকে ঠিক মতো নিজ্র দিতে ভুলে যাই । আর শুধুমাত্র এই কারণে প্রতিবছর অনেক মানুষ কিডনির সমস্যায় পড়ে থাকেন । এবং কিডনির সমস্যায় মৃত্যুর হারই বেশি । কিডনির প্রতি আমাদের ঠিকমতো নজর না দিয়ে কিডনির রোগে আক্রান্তের জন্য দায়ী আমরা নিজেরাই । প্রতিনিয়ত আমরা এমন কিছু অনিয়ম করে থাকি যার প্রভাব সরাসরি পড়ে আমাদের কিডনির ওপর । কিন্তু আমাদের নিজের ভালোর জন্য আমাদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন । চলুন তবে কিডনির ক্ষতির জন্য দায়ী অনিয়মগুলো জেনে নিই এবং সতর্কতার সাথে এই অনিয়মগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি ।
মদ্যপান করাঃ মদ্যপান কিডনির জন্য সব চাইতে বেশি ক্ষতিকর । অ্যালকোহল কিডনি আমাদের দেহ থেকে সঠিক নিয়মে নিস্কাশন করতে পারে না । ফলে এটি কিডনির মধ্যে থেকেই কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে কিডনি নষ্ট করে দেয় । অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে লিভার সিরোসিসের মতো মারাত্মক রোগে আক্তান্ত হন অনেকেই । এই রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি । তাই মদ্যপান থেকে দূরে থাকুন ।
পর্যাপ্ত পানি পান না করাঃ কিডনির সুরক্ষার জন্য সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পানি । আমরা অনেকেই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করি না । এতে ক্ষতি হয় কিডনির । বাসা থেকে বাইরে বের হলেই অনেকের পানি পানের কথা মনে থাকে না । কিন্তু এতে কিডনির ওপর অনেক বেশি পরিমাণে চাপ পড়ে এবং কিডনি তার সাধারণ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে । একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দিনে ৬-৮ গ্লাস পানি পান করা অত্যন্ত জরুরী । তাই সাথে সব সময় পানির বোতল রাখুন ।
অতিরিক্ত লবণ খাওয়াঃ অনেকের বাড়তি লবণ খাওয়ার বাজে অভ্যাস রয়েছে । খেতে বসে প্লেটে আলাদা করে লবণ নিয়ে খান অনেকেই । কিন্তু এই অনিয়মটির কারণে অনেক বেশি ক্ষতি হচ্ছে কিডনির । কিডনি অতিরিক্ত সোডিয়াম আমাদের দেহ থেকে নিষ্কাশন করতে পারে না । ফলে বাড়তি লবনের সোডিয়ামটুকু রয়ে যায় কিডনিতেই । এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় কিডনি । এমনকি কিডনি ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে ।
মাংস বেশি খাওয়াঃ অনেকের একটি বড় বাজে অভ্যাস রয়েছে যা হলো মাংসের প্রতি আসক্ততা । অনেকেই শাকসবজি ও মাছ বাদ দিয়ে শুধু মাংসের উপর নির্ভরশীল থাকেন । এই অনিয়মটিও কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর । কিডনির সুরক্ষার জন্য মাছ ও শাকসবজি অনেক বেশি জরুরী । অতিরিক্ত মাংস খাওয়া কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় । তাই খাদ্যাভ্যাসটা ঠিক করুন ।
অতিরিক্ত ব্যথানাশক ঔষধ খাওয়াঃ অনেকেই সামান্য ব্যথা পেলেই ব্যথানাশক ঔষধ খেয়ে থাকেন । বিশেষ করে মাথাব্যথার কারণে অনেকেই এই কাজটি করে থাকেন । কিন্তু এটি কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর একটি কাজ । অতিরিক্ত মাত্রায় এই ধরণের ব্যথানাশক ঔষধ কিডনির কোষগুলোর মারাত্মক ক্ষতি করে । এতে পুরোপুরি ড্যামেজ হয়ে যায় কিডনি । তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ভুলেও কোনো ব্যথানাশক ঔষধ খাবেন না ।
পস্রাব আটকে রাখাঃ ঘরের বাইরে বেরুলে অনেকেই এই কাজটি করে থাকেন । মনে করেন খনিক্তা সমত পস্রাব আটকে রাখলে তেমন কোন ক্ষতি হবে না । আপাত দৃষ্টিতে এর ক্ষতির মাত্রা ধরা না পরলেও এটি কিডনিকে নষ্ট করে দেয় খুব দ্রুত । পস্রাব আটকে রাখলে কিডনির ওপর অনেক বেশি চাপ পরে এবং কিডনি সাধারণ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে । তাই ভুলেও এই কাজটি করতে যাবেন না । বাসায় ফেরার জন্য অপেক্ষা না করে অন্য উপায় খুঁজে নিন । এতে করে কিডনি থাকবে ।
No comments:
Post a Comment