Social Icons

Sunday, March 19, 2017

রাজনৈতিক অস্থিরতা ব্রাজিলের অর্থনৈতিক গতিপথের স্বাভাবিকতা নস্যাৎ করে দিতে পারে।

মোঃ সাইফুল ইসলাম -


আটলান্টিক মহাসাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র। জনসংখ্যা ও আয়তনে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম রাষ্ট্র ব্রাজিল আমেরিকা মহাদেশের একমাত্র পর্তুগিজভাষী দেশ। চিলি ইকুয়েডর ব্যতীত দক্ষিণ আমেরিকার সব দেশের সঙ্গে দেশটির সীমানা আছে। ১৫০০ সালের দিকে পর্তুগিজ অভিযাত্রী পেদ্রো ব্রাজিলে পৌঁছার পর থেকে ১৮১৫ সাল অবধি দেশটি আমেরিকা মহাদেশের একমাত্র পর্তুগিজ উপনিবেশ হিসেবে শাসিত হয়। ১৮২২ সালে ব্রাজিলে পর্তুগিজ শাসনের অবসান হয়। ১৮২৪ সালে দেশটির প্রথম সংবিধান পাস হয়। এর দীর্ঘদিন পর ১৮৮৯ সালে ব্রাজিল একটি সংযুক্ত প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

রাষ্ট্রপতিশাসিত সংযুক্ত প্রজাতন্ত্র ব্রাজিল বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। অন্যদিকে বিশ্বে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ব্রাজিল ব্রিকসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এছাড়া জাতিসংঘ, জি-২০, লাতিন ইউনিয়ন, অর্গানাইজেশন অব ইবেরো আমেরিকান স্টেটস ও ইউনিয়ন অব সাউথ আমেরিকান নেশন্সের সদস্য হিসেবে ব্রাজিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সর্বদাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একটি ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট, ২৬টি প্রদেশ, ৫৫৬৪টি মিউনিসিপ্যালিটি নিয়ে গঠিত ব্রাজিলের লোকসংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি। তিনটি টাইম জোনে বিভক্ত ব্রাজিলের আয়তন ৫,২৯০, ৮৯৯ বর্গমাইল। ফুটবল আর সাম্বা নৃত্যের জন্য বিখ্যাত ব্রাজিলের বর্তমান সংবিধান গৃহীত হয় ১৯৮৮ সালে। ১৯৯২ সালে দেশটির ইতিহাসে প্রথম একজন প্রেসিডেন্টকে ইম্পিচ করা হয়।

ব্রাজিলের বর্তমান নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মিশেল টিমার। 

দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র ব্রাজিলে গত কয়েক বছর থেকেই রাজনৈতিক উত্তাপ লক্ষ করা যাচ্ছিল। সমাজতন্ত্রী সরকারের গৃহীত রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সংস্কারমূলক কর্মকা- বিরোধীদের ক্ষুব্ধ করে। ফলে ব্রাজিলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ- উৎকণ্ঠা ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোও সক্রিয় হয় ব্রাজিল ইস্যুতে। আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততায় ব্রাজিলে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন খুব গোপনেই ঘনীভূত হয়। অবশ্য এর আগে মার্কসবাদী ওয়ার্কার্স পার্টির টানা শাসন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রনীতির গতিপথের পরিবর্তন ঘটায়। বিকল্প বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রনীতির এই পরিবর্তন বৈশ্বিক পর্যায়ে বিরাট প্রভাব বিস্তার করে।

সামরিক অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসে ব্রাজিলের অন্তর্ভুক্তি বিশ্বব্যবস্থার চলমান ধারায় স্পষ্টভাবে ব্যাঘাত ঘটায়। ফলে ব্রাজিলের রাষ্ট্রক্ষমতার পালাবদল ঘটাতে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিতেই পেট্রোব্রাস দুর্নীতিকে বেছে নেওয়া হয়। যে প্রক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট তার অধঃস্তন শীর্ষ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে অভিশংসনের মুখোমুখি হন। দিলমা রউসেফ এবং তার পূর্বসূরি লুলা দা সিলভার টানা শাসন তাদের পররাষ্ট্রনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্রমেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়। ফলে ব্রাজিলে পরিবর্তনের বহুমাত্রিক পরিক্রমায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ধন বরাবরই লক্ষ করা গেছে। এক্ষেত্রে আদশ্যিক বিরোধিতাই গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর বলে বিবেচনা করা যায়। বস্তুত বিকল্প অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসে ব্রাজিলের নেতৃস্থানীয় ভূমিকার অবসান করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে ওয়ার্কার্স পার্টিকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব হলে মার্কিন মনোবাসনা পূরণ হওয়ার প্রেক্ষাপট জোরালো হবে। সব মিলিয়ে সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের ধারাবাহিক প্রত্যক্ষ বিরোধের সূক্ষ্মতম উপস্থিতি ব্রাজিলের রাজনৈতিক সংকটে প্রবলভাবে বিদ্যমান।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত এলাকার মধ্যে অর্থাৎ ল্যাটিন আমেরিকায় বামপন্থিরা গত কয়েক বছর থেকে ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে আছে। মূলত কিউবা ভেনেজুয়েলার নেতৃত্বে আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে সংহতি জোরদারে রূপ নেয়। কলম্বিয়া ব্যতীত প্রায় প্রতিটি ল্যাটিন দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খবরদারিমূলক পররাষ্ট্রনীতিকে অগ্রাহ্য করতে আঞ্চলিক ঐক্যের ডাক দেয়। ব্রাজিলের ক্ষমতাসীন বামপন্থি সরকার ল্যাতিন আমেরিকায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের অন্যতম রূপকার। যে কারণে ধারণা করা হয় যে, দিলমা রউসেফকে হেনস্তা করার এই পদক্ষেপ একটি পরিকল্পিত নীল নকশা।

যদিও ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দলের কোয়ালিশনে ফাটল দিলমাকে চ্যালেঞ্জে ফেলে দেয়। বিশেষত সম্প্রতিক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল টিমের ভূমিকায় স্পষ্টভাবে ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যায়। এই বিতর্কিত দুর্নীতিগ্রস্ত ভাইস প্রেসিডেন্টকে দিলমার স্থলাভিষিক্ত করতে মরিয়া সিনেটের বিশেষ কমিটি। যে কারণে দিলমা রউসেফ এবং তার দলের নেতা-কর্মীরা বিরোধীদের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন। তাদের বক্তব্য এই অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। ওয়ার্কার্স পার্টির এই অবস্থানকে সমর্থন করেছেন দেশটির শীর্ষ আইন কর্মকর্তাও। ব্রাজিলের  অ্যাটর্নি জেনারেল অভিশংসন প্রক্রিয়াকে গণতন্ত্রের জন্য সহিংসতা বলে মন্তব্য করেছেন। পক্ষান্তরে অভিযুক্ত প্রেসিডেন্ট দিলমা রউসেফ অভিশংসন প্রক্রিয়াকে গণতান্ত্রিক সরকারের বিরোধী বেসামরিক ক্যু বলে আখ্যায়িত করেন। ব্রাজিলের এ ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা দেশটির ভবিষ্যৎকে সংকটের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। এই সংকট উত্তরণে ব্রাজিলের জনগণের সামনের দিনগুলো আরও সংঘাতময় হবে বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।


  এ ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশটির অর্থনৈতিক গতিপথের স্বাভাবিকতা নস্যাৎ করে দিতে পারে। আন্তর্জাতিক খেলাধুলার সবচেয়ে বড় এবং জমজমাট আসর বিশ্ব অলিম্পিকের আয়োজক ব্রাজিল।   তাই সব মিলিয়ে এটি প্রায় পরিষ্কার যে, দিলমা রউসেফের অভিশংসন নিয়ে দেশটির জনগণের বিভক্তি আরও খারাপ পরিস্থিতির পূর্ব লক্ষণ, যা দুই পক্ষের বিরোধে আরও উত্তাপ ছড়াবে। অন্যদিকে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সৃষ্ট সংকট প্রজাতন্ত্রের জনগণের জন্য চরম দুর্ভাগ্যের ইংগিত। দুর্নীতিতে স্পষ্টভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তির রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহণ জাতীয় নৈতিকতার চরম অবক্ষয় বলেই বিবেচিত হবে। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates