বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে অপরাধের তালিকায় শীর্ষস্থানে থাকায় দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর বাংলাদেশিদের জন্য কুয়েতের শ্রমবাজার বন্ধ ছিল। বর্তমান সরকারের আন্তরিকতায় ও কিছু প্রবাসী বাংলাদেশির সহযোগিতায় কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের প্রক্রিয়া আবার শুরু হয়।
গত কয়েক বছর থেকে বিশেষ অনুমতিতে আবার কুয়েতে শ্রমিক যাওয়া শুরু হয়েছে। বিশেষ অনুমতি, যাকে আরবিতে লামানা বলা হয়, একে কেন্দ্র করে ভিসার মূল্য এখন আকাশচুম্বী করে তুলেছেন কিছু অসাধু ভিসা দালালচক্র। তারা ডাবল ডিউটি, পার্টটাইমের সুবর্ণ সুযোগসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশিদের কুয়েত নিয়ে বিপদে ফেলছেন।
বিশ্বের উন্নত দেশের মধ্যে অন্যতম ধনী দেশ কুয়েত। তেল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের মরুদেশ এই কুয়েতের মুদ্রার মূল্য বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে ১ কুয়েতি দিনার সমান বাংলাদেশের প্রায় ৩০০ টাকা। কুয়েতে দুই লাখের ওপরে বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ।
কুয়েত প্রবাসী জাকির হোসেন জানান, কুয়েতে বিভিন্ন খাতে দক্ষ শ্রমিকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দীর্ঘদিন বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভিসা বন্ধ থাকায় এই চাহিদা বেড়েছে আরো কয়েক গুণ। তবে বাংলাদেশ থেকে পর্যাপ্ত দক্ষ শ্রমিক না যাওয়ায় ধীরে ধীরে কুয়েতের শ্রমবাজারের দখল চলে যাচ্ছে নেপালি ও ভারতীয়দের হাতে।
জাকির বলেন, কুয়েতে হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও ট্যুরিজম খাতে দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে। এই খাতে শ্রমিকদের বেতনও তুলনামূলত অনেক বেশি।
জাকির জানান, ভারত বা নেপাল থেকে আগ্রহী কর্মীরা কোনমতে মাধ্যমিক পড়া শেষ করেই যেকোন ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিয়ে কুয়েত যান। ফলে খুব সহজেই তারা কর্মক্ষেত্রে ভালো করতে পারেন। দিন দিন তাদের চাহিদাও বাড়ছে বলে জানান জাকির।
অন্যদিকে, একই সাথে দক্ষতা না থাকায় কুয়েত আগ্রহ হারাচ্ছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রতি। কুয়েত প্রবাসী জাকিরের মতে, বাংলাদেশের কর্মীরা পরিশ্রমী হলেও নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতার অভাবে অনেক সময় পিছিয়ে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, ভারতের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দক্ষ কর্মীরা কুয়েত গিয়ে ভালো সুযোগ-সুবিধায় কাজ করছে। এমনকি সিকিম রাজ্যের অনেককেই দেখেছি ট্রেনিং নিয়ে তবেই বিদেশ এসেছে। একইভাবে নেপাল থেকেই দক্ষ কর্মীরা কুয়েতে আসছে।
কুয়েত প্রবাসী এই রেস্টুরেন্ট কর্মী আরো বলেন, এখানে ঝুঁকিমুক্তভাবে নিরাপদে ব্যবসা-বাণিজ্য করা যায়। অনেক সম্ভাবনাও রয়েছে। বেশ কিছু বাংলাদেশি তাদের যোগ্যতা আর দক্ষতায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকও হয়েছেন। তবে তার সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। জাকির আরও বলেন, হোটেল ম্যানেজমেন্ট খাতে কাজ করলে দেশের ব্র্যান্ডিং সম্ভব। যেটা অন্য কোন খাতে সহজেই করা যায়না। তিনি বলেন, তারো ট্যুরিজম গাইড হিসেবে, রাধুনী কিংবা হোটেল ম্যানেজমেন্ট এর উপর প্রশিক্ষণ থাকলে উন্নত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কাজ করতে পারবে।
প্রবাসী এই রাধুনী মনে করেন, ট্যুরিজম খাতে দক্ষ জনবল পাঠালে কুয়েতের শ্রমবাজারে পিছিয়ে পরা বাংলাদেশিদের জন্য হয়তো আবারও বিশেষ সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
No comments:
Post a Comment