Social Icons

Tuesday, July 18, 2017

কোন দেশের টুরিস্টরা সবচেয়ে খারাপ?


প্রতি বছর কোটি কোটি মানুষ বিভিন্ন দেশে ঘুরতে যান। এক দেশ থেকে আর এক দেশে, কখনও কাজে, কখনও ঘুরতে কিংবা স্রেফ অন্যান্য প্রয়োজনেও ঘুরতে যান অনেকে। হোটেল.কম একটি জরিপ চালিয়েছে এটা বোঝার জন্য, কোন দেশের টুরিস্টদের বদনাম সবচেয়ে বেশি। এই জরিপ চালানো হয় হোটেল স্টাফদের মাঝে।
 
এই জরিপ থেকে উঠে আসে বেশ মজার কিছু তথ্য। আপনি হয়ত এতক্ষণে ভাবছেন, এই তালিকায় নিশ্চয়ই বাংলাদেশ আছে। জেনে অবাক হবেন, আমরা সেই তালিকায় নেই। আছে এমন কিছু দেশ, যাদের আমরা বেশ ভদ্র সভ্য বলেই জানি এবং মানি!
 
আসুন, এক এক করে জেনে নেয়া যাক, কয়েকটি দেশের মানুষের কথা, যাদের দেখলে হোটেল কর্তৃপক্ষ হোটেলে তোলার বিষয়ে একটু অস্বস্তি বোধ করেন!
 
ব্রিটিশ: ব্রিটিশরা যে ভদ্র জাতি এটা সবাই জানে। তারা ভদ্র ভাবে চলাফেরা করেন এবং সৌজন্য আলাপে তাদের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু কয়েক পেগ মদ পেটে পড়লেই তারা হয়ে ওঠেন একেকটি অতিরিক্ত ফুর্তিবাজ মানুষ, এবং তারা এই জন্য অন্যদের বিরক্ত করতেও ছাড়েন না। কেউ কেউ হোটেল রুম থেকে নিচের সুইমিং পুলে লাফিয়ে পড়ার বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছেন!
 
কিছু ব্রিটিশ টুরিস্ট আবার কৌশলে হোটেল কর্তৃপক্ষকে বোকা বানিয়ে নিজেদের থাকা খাওয়া তো ফ্রি করিয়েই নেন, অনেক সময় তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্যও করেন। ভুয়া ফুড পয়জনিং এর অভিনয় করে তারা এই কাজটি করেন। হোটেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে শেষে তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হন!
 
জার্মান: অসম্ভব রকম খুঁতখুঁতে আর রগচটা বলে দুর্নাম আছে জার্মানদের। এক হোটেল ম্যানেজারের মতে, ঘুরতে গেলে সবকিছুই দেখে, খালি প্রকৃতি আর পরিবেশ বাদ দিয়ে। তাদের জন্য নিয়ম হল নিয়ম। হোটেল ব্রোশিওরে যে সুন্দর বারান্দা-ওয়ালা পরিপাটি রুম দেখানো হয়েছে, ঠিক সেই ঘরটাই চাই তাদের, না হলে ক্ষতিপূরণ বা ডিসকাউন্ট দাবি করে বসবে তারা। ঘরে যদি ব্যালকনি না থাকে, সেটা দিয়ে যদি সুন্দর বাতাস না আসে, এই কারণ দেখিয়েও তারা ক্ষতিপূরণ চেয়েছে বলে জানা যায়!
 
এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল পর্যন্ত যে যাতায়াত, সেটার বিবরণে যদি বলা থাকে যে, কোল্ড টাওয়েল, সফট ড্রিংক এবং স্ন্যাকস থাকবে, তারা ঠিক অক্ষরে অক্ষরে সেটাই দাবি করবে, না পেলে হাঙ্গামাও করবে।
 
আমেরিকান: হোটেল ব্যবসায় তাদের সুনাম আছে, তবে সেটা হোস্ট হিসেবে। গেস্ট হিসেবে তারাও বদনাম কম কামায়নি। তাদের একটা স্বভাব আছে যে সবকিছু তাদের দৃষ্টিভঙ্গির হতে হবে। তারা প্রায়ই স্থানীয় সংস্কৃতি এবং আচার বিচারের বিষয়ে একদমই উদাসীন হয়ে নিজেদের পছন্দ চাপিয়ে দিতে চায় বলে জানা যায়। তারা ভিনদেশে গিয়ে নিজেদের রেসিপির খাবার, নিজেদের পরিবেশ আশা করে প্রায়ই। তবে ইদানীংকালে তাদের এই স্বভাব কমেছে বলে জানা যায়।
 
পয়সা ছুড়ে দেবার পরে কর্মীরা এঞ্জিন বন্ধ করে সেটার অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছেন। ছবি: সংগৃহীত।
 
চায়নিজ: তাদের লিস্টটাও কম যায় না। এয়ারপোর্টে চেঁচামেচি, হাতাহাতি, ইংরেজি না বোঝা ও বলতে না পারা এবং আশা করা যে বাকি সবাই তাদের সাথে চায়নিজে কথা বলবে এসব মোটামুটি সাধারণ ঘটনা। পানিতে কয়েন ছুড়ে মারা তাদের সংস্কৃতির অংশ সেটা আমরা জানি, তাই বলে জেট ইঞ্জিনের ভেতরে কয়েন ছুড়ে মারাটাও একটু বেশি বেশি হয়ে যায় না!
 
তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে, ২০১৬ সালে বারো কোটি চায়নিজ বিভিন্ন দেশে গিয়েছে। এদের মাঝে বাজে ঘটনা ঘটানোর মত মানুষ এর পরিমাণ কমই, তবে বিশাল সংখ্যার কারণে এই কম শতাংশই অনেক বেশি হয়ে দেখা যায়।
 
রাশিয়ান: হোটেলের ফার্নিচার ভাংচুর করার দুর্নাম আছে রাশিয়ানদের। তারা প্রায় সময়ই প্রচুর পরিমাণে মদ খেয়ে থাকে আর এর ফলে তাদের মেজাজ হয়ে থাকে সবসময়ই টং। এছাড়াও আমরা কাউকে কেয়ার করি না, নিজেদের মত চলি এরকম মানসিকতাও তাদেরকে বিভিন্ন সময় স্থানীয়দের মাঝে সমস্যায় ফেলে। তাদের এই মানসিকতা এতটাই বিস্তার লাভ করেছে, রাশিয়ান ফরেন মিনিস্ট্রি বাধ্য হয়ে একটা ব্রোশিওর বানিয়েছে যেটা প্রত্যেক রাশিয়ানকে দেশ ত্যাগের সময় দেয়া হয়। তাতে বলা থাকে কোন কোন দেশে কোন কোন ব্যবহারবিধি গ্রহণযোগ্য নয়। এর মাঝে একটা লাইন হল, কেনিয়ানদের কালো বাদর বলে খোঁচানো যাবে না!
 
এর বাইরে ধরতে গেলে বলা যায়, আর্জেন্টাইনদের দুর্নাম রয়েছে হোটেল থেকে দামী জিনিসপত্র সরিয়ে রাখার, ইসরাইলিদের দুর্নাম আছে বাজে ব্যবহার, অধৈর্য, গালাগালি এবং যে কোন বিষয়ে হাড়কিপটের মত আচরণ করা ইত্যাদি। এছাড়াও প্যালেস্টাইন বিষয়ক কর্মকাণ্ডের কারণে সারা বিশ্বে তাদের বিষয়ে একটু বাজে দৃষ্টিভঙ্গিও আছে। অনেক হোটেলে আন-অফিসিয়ালভাবে নো-ইজরাইলই পলিসি রয়েছে। 
 
ঐতিহাসিক স্থাপনায় এরকম কর্মকান্ড জায়গাগুলোর ক্ষতি করতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
 
এসবের বাইরে, বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনায় গিয়ে হই হল্লা করা, স্থাপনার ক্ষতি করা, মানুষকে বিরক্ত করা এসব দোষ কমবেশি সব দেেশর মানুষদেরই আছে।
 
তবে সবকিছুর পরেও, আমরা খুশি যে এই তালিকায় বাংলাদেশের নাম আসেনি। দিনে দিনে বাংলাদেশিদের মাঝেও দেশের বাইরে ঘুরতে যাবার প্রবণতা বাড়ছে। আমরা আশা করতেই পারি যে আমরা যখন বাইরে যাব, সভ্য এবং ভদ্র আচরণের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান ভাল জায়গাতেই রাখতে পারব। সারা পৃথিবীর মানুষ জানে ও মানে যে আমরা আতিথেয়তায় অত্যন্ত আন্তরিক। আমরা এটা বার বারই প্রমাণ করতে পেরেছি যে আন্তরিকভাবে কাউকে সমাদর করতে চাইলে অর্থাভাব কোন সমস্যা নয়।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates