লন্ডনে এখন নতুন এক আতংকের নাম এসিড হামলা। যে কোন সময় যে কেউ এই হামলার শিকার হতে পারে। এমন শঙ্কায় রাস্তায় বের হচ্ছেন না অনেকেই। মাত্র দেড় ঘন্টায় ৫ টি এসিড হামলার ঘটনায় জনমনে বিরাজ করছে চরম আতংক। বিভিন্ন হামলার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে এক শ্বেতাঙ্গ কিশোরকে আটক করেছে পুলিশ। কিছুদিন আগে পূর্ব লন্ডনের হ্যাকনি রোডে মোটর সাইকেল চালানো অবস্থায় জাবেদ হোসেন নামে এক যুবকের উপর একটি প্রাইভেট কার থেকে এলোপাথাড়ি এসিড নিক্ষেপ করা হয় ।ঐ গাড়িতে কালোমুখোশ পরা একজন শ্বেতাঙ্গ ও ২ জন কৃঞ্চাঙ্গ ছিলো বলে জানায় বিভিন্ন সূত্র ।
এসব সূত্র থেকে জানা যায়, মোটরসাইকেলে চড়ে দুই লোক মাত্র ৯০ মিনিটের মধ্যে ৫টি এসিড হামলা চালায়। লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘তদন্ত চলছে। হ্যাকনি সিআইডির কর্মকর্তারা বিষয়টি তদন্ত করছে।’ পুলিশেএ ব্যাপারে সহায়তা করতে প্রত্যক্ষদর্শীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। এই হামলা এমন সময়ে হলো যখন মাত্র কয়েকদিন আগেই এক বৃটিশের বিরুদ্ধে উঠতি মডেল রেশাম করিম ও তার কাজিন জামিল মুখতারকে এসিড নিক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়। রেশাম ও জামিলের ক্ষতের অবস্থা গুরুতর। তারা উভয়েই মুসলিম। হামলার সময় পূর্ব লন্ডনের বেকটনে নিজের জন্মদিন পালন করছিলেন রেশাম। ঐ ঘটনায়, জন টমলিন নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে গুরুতর শারিরীক ক্ষতি করার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এ বছর লন্ডনে গণহারে এসিড হামলার ঘটনাএর আগেও ঘটেছে। ইস্টার মানডেতে লন্ডনের একটি নাইট ক্লাবে জড়ো হওয়া মানুষজনের ওপর এসিড ছোঁড়া হয়। দুই জন এতে অন্ধ হয়ে যায়। বাকিদের চেহারা বিকৃত হয়ে যায়। এসিড হামলা হওয়া চার এলাকা হ্যাকনি, শোরডিচ, স্টোক নিউয়িংটন ও আইলিংটনের আসে পাশের অধিবাসীরা বলছেন, তাদের ‘শান্তিপূর্ণ’ এলাকাগুলোতে এমন হামলা আবারও ঘটতে পারে বলে তারা শঙ্কায় রয়েছেন। ভবিষ্যতে এমন হামলা প্রতিহত করতে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান স্থানীয়রা। লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী কায়েস চৌধুরি বলেন, সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে বৃটেনের মত দেশে এসিড সহজলভ্য হয়ে যওয়া। এটি বৃটেনে বাস করা গোটা মুসলিম কমিউনিটি বিশেষত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা ও চরম নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে। যা বৃটেনে আগে কখনও কল্পনাই করা যেতো না। কায়েস বলেন, ‘এটা সত্যিই ভীতিকর। আমি নিজেও এখন শঙ্কিত। এইসব রাস্তা দিয়েই বাচ্চারা স্কুলে যায়, বাড়ি থেকে বের হয়ে আমরা অফিসে যাই শঙ্কার মধ্যে’।
কায়েস চৌধুরী র মতে,‘ আসলে এটা কোন সংখ্যালঘু হামলা নয়। বরং বলা যায় এসিড হামলা হেট ক্রাইমের সঙ্গে যুক্ত’। তিনি বলেন, গত জুনে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক রেশাম খানের গাড়িতে এসিড নিক্ষেপের ঘটনার মধ্য দিয়ে সামপ্রদায়িক ওই হিংস্রতার বিষয়টি প্রথমবারের মত প্রকাশ্যে আসে। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটে থাকলেও থাকতে পারে তবে খানের ওপর এসিড হামলার ঘটনাটি বৃটেনের মিডিয়ায় প্রথম ব্যাপকভাবে প্রচার পায়। ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সদস্য কায়েস জানান, ওই হামলাটি হয়েছিলো বাংলাদেশি বৃটিশ অধুষ্যিত পুর্ব লন্ডনের রাস্তায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সুপার শপ, রাস্তা, পার্কে আচমকা হামলা বা হামলার চেষ্টার বহু ঘটনা ঘটেছে এবং তাতে অনেকে আহতও হয়েছে। শুরুর দিকে বিষয়টি স্পষ্ট না হলেও এখন বিষয়টি ওপেন-সিক্রেট যে এটি সাম্প্রদায়িক হামলা। কায়েস জানান, লন্ডন ও ম্যানচেস্টারে মুসলিম নামধারী উগ্রপন্থিদের হামলার পর থেকেই প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধের কারণে নিরীহ মুসলিমদের টর্গেট করা হচ্ছে। সেখানে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন নারী ও তরুণীরা।
ব্রিটেন প্রবাসী এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এটি মুসলিম বিদ্বেষী উগ্রপন্থিদের কারনে হচ্ছে। এ পর্যন্ত ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট কেবল শেতাঙ্গই আটক হয়েছে। আর আক্রান্ত হচ্ছে হিজাব পরিহিতরা অথবা অন্যান্য মুসলিমরা। অনেক সময় মসজিদের কাছে এ্সিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ ধরনের হেইট ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে লন্ডনের প্রশাসনও উদ্বিগ্ন। তবে ঘটনার নেপথ্যে যারাই থাকুক না কেন, উগ্রপন্থার সাথে ধর্মপ্রাণ মুসলমান বা ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। আর এ কথা মনে রেখে এ ধরনের হামলা থেকে বিরত থাকা উচিত বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
No comments:
Post a Comment