এই গ্রহের সম্ভবত সবচেয়ে সাধারণ ও সাদামাটা জুতো- এক টুকরো প্লাস্টিক যা মানুষের পায়ের পাতার সমান এবং তাতে লাগানো দুটো ফিতে যা দিয়ে এটি পায়ের সাথে আটকে থাকে। অর্থাৎ এক জোড়া স্যান্ডেল। ব্রাজিলের এই হাভায়ানাস ব্র্যান্ডের চপ্পল বলতে গেলে সারা বিশ্বের বাজার প্রায় দখল করে নিয়েছে। এই স্যান্ডেল তৈরি করে যে কম্পানি সেটি গত সপ্তাহে বিক্রি হয়ে গেছে এক শ কোটি ডলারে। কিন্তু সেটি অন্য গল্প।
এই কম্পানিটি প্রত্যেক বছর বিক্রি করত গড়ে প্রায় ২০ কোটি জোড়া স্যান্ডেল। দেশের ভেতরে তো বটেই আন্তর্জাতিক বাজারেও এটি হয়ে উঠেছিল আকর্ষণীয় এক পণ্য। ব্রাজিলের প্রায় সর্বত্রই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই চপ্পলের দোকান। তাতে সারি সারি করে সাজানো আছে নানা রংয়ের ও স্টাইলের স্যান্ডেল।
কোনোটাতে স্ট্র্যাপ লাগানো, কোনোটা খুব বেশি উজ্জ্বল, কোনোটা খুব হালকা, কোনোটা আপনার প্রিয় ফুটবল ক্লাবের রংয়ের, আবার কোনোটার হিল হয়তো সাধারণের চেয়েও উঁচু। রাবারের তৈরি এই জুতোটি এখন ব্রাজিলের প্রায় সমার্থক হয়ে উঠেছে। এমনকি কোনো কোনোটার গায়ে ব্রাজিলের পতাকাও আঁকা। কম্পানির টুইটার অ্যাকাউন্টেও বলা হয়েছে, হাভায়ানাসে আছে ব্রাজিলের আনন্দময় জীবনের স্বতঃস্ফূর্ততা।
যুক্তরাজ্য থেকে অস্ট্রেলিয়া, প্যারিস থেকে নিউ ইয়র্ক সর্বত্রই এই স্যান্ডেল বিক্রি হচ্ছে। এটি প্রথমে বাজারে এসেছিল ১৯৬০ এর দশকে। প্রথমে ছিল শ্রমজীবী মানুষের পায়ে আর এখন এটি উঠে এসেছে ধনী-গরিব সবার পায়ে। শুরুর দিকে এটি ছিল শুধু শাদা ও নীল রংয়ের। পরত শুধু শ্রমিকরাই। বিক্রি হতো ভ্যানগাড়িতে। এই স্যান্ডেলের ডিজাইনে প্রথম বৈচিত্র্য আসে ১৯৬৯ সালে, দুর্ঘটনাক্রমে। ভুল করেই দেখা যায় এক ব্যাচ স্যান্ডেল বেরিয়ে আসে সবুজ রংয়ের। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে এটি বাজারে সাড়া ফেলে দেয়।

তখন থেকেই কম্পানিটি নানা রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে শুরু করে। তারপরই শুরু হয় কম্পানিটির রমরমা ব্যবসা। অনেক ফ্যাশন সমালোচক একে ফ্যাশন জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পণ্যের একটি বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এই কম্পানিটির মালিক জে অ্যান্ড এফ গ্রুপ দেখাশোনা করত ধনকুবের বাতিস্তা পরিবারের ধনসম্পদ। সম্প্রতি এই পরিবারের ওপর ওঠে দুর্নীতির অভিযোগ। কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে যায় জে অ্ন্ডযা এফ কম্পানিটিও। তখন জে অ্যান্ড এফ গ্রুপকে প্রচুর অর্থ জরিমানা করা হয়। আর সেই জরিমানা শোধ করতে বিক্রি করে দিতে হয় হাভায়ানাস কম্পানি। এখন নতুন মালিকানায় বিখ্যাত এই স্যান্ডেলের উৎপাদন চলছে।
No comments:
Post a Comment