১৯৭১’ র ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় মরিশাস। বর্তমানে বাংলাদেশ ও মরিশাস নিজেদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছে। বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯২ সালে প্রথম ১২ জন কর্মী কাজ নিয়ে মরিশাসে যায়।
২০০৫ সালে বাংলাদেশ মানবসম্পদ রপ্তানিখাতে মরিশাসের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। এরপর ২০১৩ সালে তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে পাঁচ-সদস্যের একটি দল মরিশাসে গিয়ে তাদের সাথে বাণিজ্যিক চুক্তি করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আলোচনা করে এসেছিলেন। ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত আফ্রিকা মহাদেশের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাস। বর্তমানে সেখানে প্রায় ১৫,০০০ প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করছে।
পর্যটন খাতে সমৃদ্ধ এই দেশটির উন্নয়নের পেছনে রয়েছে প্রবাসী কর্মীদের কঠোর পরিশ্রম। পরিসংখ্যান বলছে দেশটিতে নিযুক্ত ২৫ হাজার বিদেশি কর্মীর মধ্যে প্রায় ১৫ হাজারই বাংলাদেশি। এর মধ্যে আবার অধিকাংশই নারী কর্মী। মরিশাসে প্রবাসী বাংলাদেশি নারীরা বলছেন, বাংলাদেশি নারী কর্মীরা সেখানে মাছ প্রক্রিয়াকরণ ও বস্ত্র খাতে কাজ করে থাকেন। ওইসব কারখানা এবং সেখানে কাজের পরিবেশ যথেষ্ট উন্নত ও স্বাস্থ্যসম্মত। ফলে কাজ করতে তেমন কোন কষ্ট পোহাতে হয়না শ্রমিকদের। অন্যদিকে, মরিশাসে নির্মাণ ও বেকারি খাতে কাজ করে অধিকাংশ বাংলাদেশি পুরুষ কর্মী। স্থানীয়দের মতে, মরিশাসে বাংলাদেশিরা বেকারি খাতে ভালো করছে। ফলে সেখানে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য বিশেষ চাহিদা তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।
মরিশাস প্রবাসী বাংলাদেশি গোলাম আহমেদ জানান,বাংলাদেশি বস্ত্র ও হস্ত নির্মিত সামগ্রীর ব্যাপক কদর রয়েছে মরিশাসের বাজারে। ফলে বাংলাদেশ থেকে যারা গার্মেন্টস খাতে দক্ষতা নিয়ে মরিশাসে যায় তারা খুব সহজেই ভালে করতে পারে। ফলে সংশ্লিষ্ট খাতে অভিজ্ঞ কর্মী পাঠানো গেলে মরিশাস বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার হতে পারে। গোলাম আহমেদ আরও বলেন, মরিশাসে বাংলাদেশি নারী কর্মীর সংখ্যা অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। তারা সেখানে ভালোভাবে নিরাপত্তার সাথে কাজ করছে। মরিশাস প্রবাসী এই বাংলাদেশি মনে করেন, যেসব দেশে বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয় সেসব দেশে ঝুঁকি নিয়ে নারী কর্মী পাঠানো বন্ধ করা উচিত। পাশাপাশি মরিশাসের মত যেসব দেশে নারী কর্মীরা ভালো আছেন সেখানে নারী কর্মী রপ্তানির নতুন ও সম্ভাবনাময় পরিকল্পনা হাতে নেয়া উচিত সরকারের।
এর আগে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক খোরশেদ আলম চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমে বলেছিলেন, ভবিষ্যতে মরিশাসে বাংলাদেশি কর্মী যাওয়ার সংখ্যা আরও বাড়বে। তিনি জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশি কর্মীদের দক্ষতার প্রশংসা করেছে মরিশাস। এ কারণেই তারা বস্ত্র খাত, তথ্যপ্রযুক্তি, বেকারিসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মন্দার কারণে গত বছর দেশটি কয়েক হাজার বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেও পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সফরের পর সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়। মন্দা কেটে যাওয়ার পর সম্প্রতি তারা বাংলাদেশ থেকে আবারও কর্মী নেওয়া শুরু করেছে। ধারনা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের শ্রমবাজারে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাস।
No comments:
Post a Comment