বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান কিংবা সংস্কৃতি সকল ক্ষেত্রেই এগিয়ে রাশিয়া। গৌরবাজ্জ্বল ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, বৈচিত্রময় প্রকৃতি আর বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা থাকায় নানা প্রান্ত থেকে প্রতিবছর কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর সমাগম ঘটে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বৃত্তিসহ এদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরীর সুবিধা দিচ্ছে রাশিয়া। এ মাসে (মার্চে) বাংলাদেশের এইচএসসি ও স্নাতক শিক্ষার্থীদের সরকারি শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে রাশিয়া। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে পড়ার আবেদন করা যাবে ২০ মার্চের মধ্যে। এছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর জন্য নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পোস্ট গ্রাজুয়েশনের জন্য বছরে ২০টি বিশেষ স্কলারশিপ দিচ্ছে রুশ ও বাংলাদেশ সরকার।
কেন পড়তে যাবেন
রুশ গণমৈত্রী ইউনিভার্সিটি, মস্কো স্ট্যাটস ইউনিভার্সিটি, কাজান ইউনিভার্সিটি, ডুবান ইউনিভার্সিটি, দ্যা রাশিয়ান স্টেট হিউমিনিটি ইউনিভার্সিটি, মস্কো ফিজিক্স-টেকনোলজিক্যাল ইনস্টিউটের মত নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে রাশিয়া। স্বনামধন্য এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।
শিক্ষা ব্যবস্থা ও ভর্তি সেশন
রাশিয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্য শাখা নিয়ে পড়া যায়। করা যাবে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডিসহ বিভিন্ন ধরনের কোর্স। স্নাতক বা গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি ৪ বছর মেয়াদী, স্নাতকোত্তর বা পোস্ট গ্রাজুয়েশন ২ থেকে ৩ বছর মেয়াদী, ডক্টরেট ডিগ্রি ৩ বছর মেয়াদী ও স্পেশালাইজড ডিপ্লোমার মেয়াদ ২-৩ বছর। রাশিয়ার শিক্ষাবর্ষ দুই সেমিস্টারে বিভক্ত। প্রথমটি শুরু হয় সেপ্টেম্বর মাসে এবং দ্বিতীয়টি শুরু হয় ফেব্রুয়ারি মাসে। তবে এই দুই সেমিস্টারের মাঝে ২ মাসের ছুটিও রয়েছে।
কি বিষয়ে পড়বেন
অ্যাগ্রোনমি, হিউম্যানিটিরিয়ান অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল, পিওর সায়েন্স, ইকোনমিকস, ইকোলজিক্যাল সায়েন্স, ফিলোজিক্যাল সায়েন্স, রাশিয়ান ল্যংগুয়েজ অ্যান্ড লিটারেচার, সোসিও-ইকনোমিকস, গণিত, কম্পিউটার সায়েন্স, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আঞ্চলিক বিশ্লেষন, আন্তর্জাতিক আইন, পলিটিক্যাল সায়েন্স, রাষ্ট্রীয় পরিচালনা, আইন, সমাজবিজ্ঞান, জার্নালিজম ও পাবলিক রিলেশন।
পড়াশোনার মাধ্যম
পড়াশোনা মূলত রুশ ভাষায় পরিচালিত হয়। বর্তমানে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় রুশ ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় কোর্স চালু করেছে। তবে রাশিয়ার বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব ভাষাকেই উচ্চশিক্ষার জন্য প্রাধান্য দেয়। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের সেখানে প্রথম বছর রুশ ভাষা শিখতে হবে। এক্ষেত্রে, বাংলাদেশে রাশিয়ান সেন্টার অব সাইন্স অ্যান্ড কালচার থেকে তিন বা ছয় মাসের রুশ ভাষার কোর্স করে যাওয়া ভালো। রাশিয়ান ভাষা শিখতে চাইলে রাশিয়ান ল্যঙ্গুয়েজ কোর্সের ওপর ভর্তি চলছে। ক্লাস শুরু হবে ৬ এপ্রিল ২০১৭। সকাল কিংবা বিকাল দুইটা শিফটেই ক্লাস করার সুযোগ আছে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া আবেদনপত্রের পূরণকরা কপি, সব পরীক্ষা ও কোর্সের সার্টিফিকেটের রাশিয়ান ভাষায় ট্রান্সক্রিপট, স্কুল-কলেজের ছাড়পত্র, পাসপোর্টের ফটোকপি ও ভিসা ফি পরিশোধের রশিদ, আবেদন ফি প্রদানের প্রমাণপত্র ও স্পন্সরশিপ সার্টিফিকেট।
ভর্তি আবেদন ও ভিসা প্রক্রিয়া
পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজগুলোতে ভর্তির যোগ্যতা, টিউশন ফি বা শিক্ষা খরচের বিষয়টি শুরুতে বিবেচনায় আনতে হবে। সব ঠিক থাকলে পছন্দের বিশ্বদ্যিালয়ে যোগাযোগ করতে হবে। সেখানকার সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে শিক্ষার্থীকে- আবেদনপত্র, সার্টিফিকেট এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংক্রান্ত সব তথ্য জানাবে। আবেদনটি রাশিয়ার সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গ্রহণ করার পর সব কাগজপত্র নিয়ে ঢাকায় রুশ দূতাবাসে যোগাযোগ করতে হবে।
খরচপাতি
রাশিয়ায় পড়াশোনার খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। এখানে বিষয় ভেদে পড়াশোনার খরচ আলাদা। যেমন- বিজ্ঞান বিভাগের জন্য টিউশন ফি ২৬০০ ডলার থেকে ৮২৫০ ডলার, কলা বিভাগের জন্য ২৮০০ ডলার থেকে ৮০০০ ডলার এবং বাণিজ্য বিভাগের জন্য ৪০০০ থেকে ৭০০০ ডলার পর্যন্ত হয়। তবে রাজধানী মস্কোর বাইরে টিউশন ফি আরও কম। টিউশন ফি প্রতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে জমা দিতে হবে। বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে আবাসন ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয় ও এলাকা ভেদে এ খরচ প্রতি বছর ৪৫০ থেেক ২৫০০ মার্কিন ডলার ।
কাজের সুযোগ
রাশিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়া প্রায় সব বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্যই সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ বা বৃত্তির সুযোগ রয়েছে। একারণে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি অন্য কোনো কাজ করার অনুমতি পায় না। তবে রাশিয়ার শহরগুলোর বাইরে অন্য জায়গায় কিছু কাজের সুযোগ রয়েছে। তবে তা খুবই কম।
স্কলারশিপ
এ মাসে (মার্চে) বাংলাদেশি এইচএসসি ও স্নাতক শিক্ষার্থীদের সরকারি শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে রাশিয়া। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে পড়ার আবেদন করা যাবে ২০ মার্চের মধ্যে। আর এ তথ্য জানা যাবে বাংলাদেশে তাদের দূতাবাসে। আর যে কোনো তথ্যের জন্য শনি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কথা বলে যাবে সেখানে গিয়ে। অথবা যোগাযোগ করা যাবে চীফ অ্যাডুকেশন অফিসার বজলুল হাসান সাইদ এর সঙ্গে (০১৮১৭২৯৪৫৯৫)। এছাড়াও ১৬ মার্চ ১৬ সালে রাশিয়ায় উচ্চ শিক্ষা শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। রাশিয়ান কালচারাল সেন্টার লাইব্রেরি, ৪২, ভাষা সৈনিক এম এ মতিন রোড, ধানমন্ডিতে বিকাল ৪টায়।
সব পরীক্ষায় ৮০ শতাংশ নম্বর পেলে তবেই বৃত্তির জন্য আবেদন করা যায় রাশিয়াতে। রুশ ভাষা কোর্সে ভর্তি হয়ে রাশিয়ান বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্রের মাধ্যমে বৃত্তির জন্য আবেদন করা যায়। এছাড়াও বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও বৃত্তির জন্য আবেদন করা যাবে।
রাশিয়া সরকার প্রতি বছর বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রির জন্য ২০ থেকে ২৫টি, মাস্টার্সে ৫৬টি এবং পিএইচডিতে ২-৩টি স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর জন্য, নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পোস্ট গ্রাজুয়েশনের জন্য ২০টি স্কলারশিপ দেয়া হচ্ছে। এখানে পড়ালেখা শেষে রূপপুর প্রকল্পেই কাজ করতে হবে তাদের। রাশিয়াতে স্কলারশিপের জন্য আইএলটিএস, জিআরই বা টোফেল লাগেনা। কারণ এখানে রাশিয়ান ভাষাতেই পড়াশোনা করতে হয়।
স্কলারশিপ দেওয়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম
Irkutsk state Technical University (ISTU) www.istu.edu
Kovrov State Academy of Technology www.kc.ru
Peoples Friendship university Russia www.pfu.edu.ru
St. Petersborg State University www.spbu.ru
No comments:
Post a Comment