মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে হস্তক্ষেপ করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখেছেন ড. মোহাম্মদ ইউনূসসহ ১২ জন নোবেল বিজয়ী ও ১৫ জন বিশিষ্ট বৈশ্বিক ব্যক্তিত্ব। নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ও সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে লেখা চিঠিতে তারা বলেন, আপনাদের এই মুহূর্তের দৃঢ়সংকল্প ও সাহসী সিদ্ধান্তের উপর মানব ইতিহাসের ভবিষ্যত গতিপথ অনেকটাই নির্ভর করছে।
চিঠিতে বলা হয়, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক আক্রমণে শত শত রোহিঙ্গা জনগণ নিহত হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। বহু গ্রাম সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, বেসামরিক মানুষদের নির্বিচারে আটক করা হচ্ছে এবং শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। আতংকের বিষয়, মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে এই এলাকায় প্রায় একবারেই প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছেনা, যার ফলে দারিদ্র পীড়িত এই এলাকায় মানবিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। স্থানীয় সরকার সূত্রগুলোর মতে, গত দুই সপ্তাহে তিন লক্ষেরও বেশী মানুষ তাদের জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মৃত্যুর মুখে নারী, পুরুষ ও শিশুদের এই ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি ও অভিবাসন থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতি প্রতিদিন আরো খারাপ হচ্ছে।
সমস্যা সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ কামনা করে চিঠি বলা হয়, আমরা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জাতি সংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সম্ভাব্য সকল হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানাচ্ছি, যাতে নিরীহ বেসামরিক মানুষদের উপর নির্বিচার সামরিক আক্রমণ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়, যার ফলে এই অসহায় মানুষগুলোকে নিজ দেশ ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যেতে এবং রাষ্ট্রহীন মানুষে পরিণত হতে না হয়।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার ২০১৬ সালে গঠিত ‘রাখাইন অ্যাডভাইজরী কমিশন’ এর সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয় চিঠিতে।
চিঠিতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এই ক্রমাগত সহিংসতা বন্ধ করতে জাতি সংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কর্মপন্থায় সাহসী পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি। মিয়ানমার সরকারকে জানিয়ে দেয়া দরকার যে, সে দেশের জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও অর্থায়ন রোহিংগাদের প্রতি মিয়ানমার সরকারের নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক পরিবর্তনের উপর নির্ভরশীল। অপপ্রচার, ঘৃণা ও সহিংসার উস্কানি বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র পরিচালিত সহিংসতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে, বৈষম্যমূলক বিভিন্ন নীতি ও আইন বাতিল করতে হবে এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশগুলো অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশ্ববাসী জাতি সংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবিক সমস্যা সমাধানে তার ভূমিকা পালন করেছে - এটা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা হচ্ছেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০০৬ জয়ী, মেইরিড মাগুইর, নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৭৬ জয়ী, বেটি উইলিয়ামস, নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৭৬ জয়ী, আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৮৪ জয়ী, অসকার আরিয়াস সানচেজ, নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৮৭ জয়ী , জোডি উইলিয়ামস, নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৯৭ জয়ী, শিরিন এবাদী নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০০৩ জয়ী, লেইমাহ বোয়ি, নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০১১ জয়ী, তাওয়াক্কল কারমান
নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০১১ জয়ী, মালালা ইউসাফজাই, নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০১৪ জয়ী, স্যার রিচার্ড জে. রবার্টস, চিকিৎসা শাস্ত্রে ১৯৯৩ সালে নোবেল পুরস্কার জয়ী, এলিজাবেথ ব্ল্যাকবার্ন চিকিৎসা শাস্ত্রে ২০০৯ সালে নোবেল পুরস্কার জয়ী।
সাইয়েদ হামিদ আলবার, মালয়েশিয়ার প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, এমা বোনিনো, ইতালির প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন, ব্যবসায়ী নেতা ও সমাজসেবী, গ্রো হারলেম ব্রান্ডটল্যান্ড, নরওয়ের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, মো ইব্রাহীম, উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী
কেরি কেনেডী, মানবাধিকার কর্মী, আলা মুরাবিত, লিবীয় নারী অধিকার প্রবক্তা, নারায়ণ মুর্তি, ব্যবসায়ী নেতা, কাসিত পিরোমিয়া, থাইল্যান্ডের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সুরিন পিটসুয়ান, আসিয়ানের প্রাক্তন মহাসচিব, পল পোলম্যান, ব্যবসায়ী নেতা, এসডিজি সমর্থক, ম্যারি রবিনসন, আয়ারল্যান্ডের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, জেফরে ডি. সাচ, পরিচালক, জাতি সংঘ সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশান্স নেটওয়ার্ক, ফরেস্ট হুইটেকার অভিনেতা, এসডিজি সমর্থক
জোকেন জাইটজ, ব্যবসায়ী নেতা ও সমাজসেবী।
No comments:
Post a Comment