মিয়ানমারের মতো শ্রীলঙ্কায়ও কিছু উগ্রবাদী সমর্থক বৌদ্ধ ভিক্ষু মুসলিমসহ অন্য ধর্ম বিশ্বাসীদের দেশটি থেকে বিতাড়নের পক্ষে। ইতিমধ্যে এসব ভিক্ষু মুসলমানদের ঘর-বাড়িসহ দোকানপাট জ্বালিয়ে দিয়েছে। আর এ কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন সেখানকার উগ্র মতবাদী ভিক্ষু জ্ঞানাসারা থেরো। তার সাথে যোগ দিয়েছেন মিয়ানমারের উগ্র ভিক্ষু অশিন উইরাথু। ইতিমধ্যে তারা একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছেন। যেখানে মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কাসহ এশিয়ার অপর দেশগুলোতে বৌদ্ধদের নিরাপত্তা বিধানে সম্ভাব্য সবকিছু করার কথা বলা হয়েছে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির রিপোর্টার চার্লস হেভিল্যান্ড কলম্বো থেকে যে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন তাতে জ্ঞানাসারা থেরোর উগ্রবাদী মনোভাবের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্টে তিনি লেখেন, শ্রীলঙ্কায় বধু বালা সেনা বা বুদ্ধিষ্ট পাওয়ার ফোর্স (বিবিএস) নামে একটি কট্টর সংগঠন খোলা হয়েছে। সংগঠনটির কর্মকর্তা জ্ঞানাসারা রাগান্বিত স্বরে বিবিসিকে বলেন, “এই দেশ সিংহলীদের। তারা এখানকার সভ্যতা, সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে। সাদা চামড়ার লোকেরাই যত সমস্যার সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, ব্রিটিশরা এই দেশকে ধ্বংস করে গেছে। এখন বহিরাগতরাই বিশেষ করে তামিল এবং মুসলমানরা যত সমস্যার সৃষ্টি করছে। পুরো দেশ সিংহলীজদের নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাব।
বিবিসির রিপোর্টে আরো বলা হয়, ১৯৫৯ সালে শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে সরকার তাদের ঘাটাতে সাহস পেত না। ওই বছরই ভিক্ষুরা দেশটির প্রধানমন্ত্রী বন্দরনায়েককে খুন করে। উগ্রবাদী সংগঠন বিবিএস সবসময় মুসলিম বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। তারা শ্রীলঙ্কার আইন অমান্য করে মুসলমানদের বাড়িঘরে আগুন দেয়াসহ লুটতরাজ চালায়। শুধু তাই নয়, কলম্বোর একটি ল’ কলেজের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায় সেখানে মুসলমানদের নাম রয়েছে। বিবিএস’র সদস্যরা এর প্রতিবাদে ওই কলেজের বাইরে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিবিএসএর মুখপাত্র দিলানথা বলেন, বিবিএস কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন নয়। এটি কারো বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের উষ্কানি দিচ্ছে না। কিন্তু আমরা কিছু জিনিসের বিপক্ষে। বিশেষ করে ইসলামিক স্টেট (আইএস) ইতিমধ্যে পুরো এশিয়া অঞ্চলকে ইসলামিক রাষ্ট্র বানানোর যে ঘোষণা দিয়েছে আমরা তার বিরুদ্ধে।
বিবিসির রিপোর্টারকে দিলানথা বারবার বলেন, মুসলমানরা হচ্ছে উগ্রপন্থী। শুধু মুসলমানরা নয় কট্টরপন্থী ভিক্ষুরা সেখানকার সাধারণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী লোকজনের উপরও হামলা চালিয়েছে। ওয়াথারেকা বিজিথা থেরো নামের একজন ভিক্ষু বৌদ্ধ এবং মুসলমানদের মধ্যে সৌহার্দ্য স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ করছিলেন। এই অপরাধে তাকেও নির্যাতন করা হয়। সপ্তাহখানেক পরে তিনি একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে বিবিএসএর কর্মীরা হামলা চালায়। ভিক্ষু জ্ঞানাসারা তাকে অপমান করেন এবং ভবিষ্যতে এসব করা হলে বিজিথাকে তুলে নিয়ে নদীতে ফেলে দেয়ার হুমকি দেন।
বিবিসির রিপোর্টে বলা হয়, শ্রীলঙ্কার ভিক্ষুদের উগ্রবাদী সংগঠন বিবিএসকে বিভিন্ন সরকার আশকারা দিয়েছে।
Wednesday, September 20, 2017
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment