আফ্রিকার ছোট্ট একটি দেশ সোয়াজিল্যান্ড। আফ্রিকা মহাদেশের মাত্র ৪ টি জেলা নিয়ে গড়ে উঠেছে এ দেশটি। ২০০৯ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী দেশটির জনসংখ্যা মাত্র ১১ লাখ ৮৫ হাজার, আয়তন ১৭,৩৬৪ বর্গকিলোমিটার। সোয়াজিল্যান্ডের রাজধানী এমবাবেন। উত্তর থেকে দক্ষিণে ২০০ কিলোমিটার, পূর্ব থেকে পশ্চিম ১৩০ কিলোমিটার এই এলাকা নিয়ে সোয়াজিল্যান্ডের অবস্থান। দক্ষিণ আফ্রিকা আর মোজাম্বিকের গা ঘেঁষা এই দেশের অধিবাসীরা মূলত সোয়াজিরাই নামে পরিচিত।
সোয়াজিল্যান্ডে অনেক এশিয়ান বাস করে। প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশিসহ পাকিস্তানি, ভারতীয় প্রবাসীরা বসবাস করে ছোট্ট এ দেশটিতে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশি ও ভারতীয় প্রবাসীর সংখ্যাই বেশি সেখানে। আর স্থানীয় জনগণ বাংলাদেশিদের অনেক শ্রদ্ধা করে। তার প্রধান কারণ হলো সেয়াজিল্যান্ডের সংবিধান লিখেছেন একজন বাংলাদেশি। বাংলাদেশের প্রখ্যাত ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম এইদেশের সংবিধানের খসড়া প্রস্তুত করতে সাহায্য করেছেন। ১৯৬৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে সোয়াজিল্যান্ড। দেশটিতে গেলে বোঝার কোনো উপায় নেই যে এটি নতুন কোনো দেশ। সবসময় মনে হবে বুঝি কোন একটি গ্রামে এসে পরেছেন। সোয়াজিল্যান্ডের বেশির ভাগ আধিবাসী কালো।
বর্তমানে দেশেটিতে অনেক কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। ক্ষুদ্রাকায় দেশটিতে বাস করা বাংলাদেশিদের বেশিরভাগই বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করছে। অনেক বাংলাদেশি আবার ব্যাবসার পাশাপাশি কৃষি কাজের সাথে যুক্ত রয়েছে। কারণ সোয়াজিল্যান্ডের আধিবাসীরা কৃষি কাজে খুব একটা দক্ষ নয়। যার সুযোগ নিয়েছে বাংলাদেশি ও কিছু ভারতীয়। তবে ভারতীয়দের বেশিরভাগ ব্যবসা বাণিজ্য করে। কিন্তু বাংলাদেশিরা ব্যবসার পাশাপাশি কৃষি কাজ করেও অনেক আয় করছে।
সোয়াজিল্যান্ডের পাশের দেশ জাম্বিয়া ও মোজাম্বিক। জাম্বিয়াসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে কৃষি পণ্য রপ্তানি করছে সোয়াজিল্যান্ড। আর সেই কাজে শতভাগ জড়িত বাংলাদেশি। সোয়াজিল্যান্ডের আবহাওয়াও অনেক ভাল, মানুষের মনের মতই একটু পর পর পরিবর্তন হয়। গরম দেখে গরম এর কাপড় পরে বের হলেও, ঘণ্টাখানেক পরে দেখা যায় অনেক ঠাণ্ডা পড়া শুরু করেছে। তবে গরমে খুব গরম আবার শীতে অনেক ঠাণ্ডা এটা কখনও হয় না। কিন্তু কৃষি কাজের জন্য অনেক উন্নত এ দেশটি।
গরমকালে এখানে আম, লিচু, জাম আর স্থানীয় অনেক ফল পাওয়া যায়। এছাড়া সারাবছর অনেকরকম ফল পাওয়া যায়. রাস্তার পাশে আপেল, আঙুর, কলা, এভোকাডো বিক্রি হয়। বিভিন্ন বাগানে বা রাস্তার পাশে এভোকাডো গাছের নিচে এভোকাডো বিক্রি হয়। সোয়াজিল্যান্ড চিনির জন্য বিখ্যাত, তাই অনেক আখ পাওয়া যায়, যা অনেক শক্ত আর মিষ্টি। বেশিরভাগ প্রবাসী বাংলাদেশির ফলের দোকান রয়েছে এ দেশটিতে। স্থানীয়রা কৃষিতে দক্ষ না হওয়ায় বাংলাদেশিরা দেশটিতে একচেটিয়া কৃষি কাজ করে যাচ্ছে।
সোয়াজিল্যান্ডে বেশিরভাগ প্রবাসী বাংলাদেশি অবৈধভাবে এসেছে। বেশিরভাগ প্রবাসী আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করে পরে এ দেশটিতে গিয়ে বসবাস শুরু করেছে। দেশটির কৃষি চাহিদা অনেক কম হওয়ায় পাশের দেশে অনেক কৃষি পন্য রপ্তানি করছে এখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
তবে আফ্রিকায় বাংলাদেশিরা বৈধভাবে এখনো প্রবেশ করতে পারছে না। যার কারণে আফ্রিকা মহাদেশের অনেকে দেশে কাজ ও ব্যবসার অনেক সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশিরা তা ঠিকমত কাজে লাগাতে পারছে না। এই জন্য আফ্রিকায় বৈধ ভিসা প্রক্রিয়া চালু করার ওপর জোর দেন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি। তারা জানান, ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হলে আফ্রিকার অনেক দেশে বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। একই সাথে বাংলাদেশের জন্য নতুন নতুন শ্রমবাজার উন্মূক্ত হবে বলেও আশাবাসী আফ্রিকার বাংলাদেশি প্রবাসীরা।
No comments:
Post a Comment