অনেকেরই স্বপ্নের ঠিকানা বিদেশ। আর এ স্বপ্নের ঠিকানার খোঁজে প্রতিদিন প্রচুর বাংলাদেশি পাড়ি দিচ্ছে অজানা দেশের উদ্দেশ্যে। কিন্তু বিদেশের বিভিন্ন দেশে গিয়ে অনেক খারাপ অবস্থার সম্মুখিন হতে হচ্ছে তাদের। কারণ বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দায় ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে প্রবাসীদের নিয়ে অনেক চাপের মুখে পড়ছে এ দেশগুলো। এসব কারণে বর্তমানে বিতাড়নের হুমকির মুখে দিন কাটাচ্ছেন ৩৪ দেশে বসবাসরত দেড় লাখ বাংলাদেশি।
পরিসংখ্যান বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো থেকে ৯৩ হাজার ও সৌদি আরব থেকে ৫০ হাজার বাংলাদেশি ফিরবে। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশসহ বাকি ৩২টি দেশ থেকে সাত হাজার বাংলাদেশি দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এসব প্রবাসী এখন চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরাতে সহসাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সই করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এ চুক্তি সই হওয়ার পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের দেশে ফিরতে হবে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে সব মিলিয়ে ৫০ হাজার বাংলাদেশি ফিরতে পারেন। কারণ গত জুনে সৌদি সরকারের বিশেষ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে ৪৫ হাজার বাংলাদেশি তাদের ট্রাভেল ডকুমেন্ট অর্থাৎ পাসপোর্ট যোগাড় করেছেন। এর আগে ২০১৩ সালে একই ধরনের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে বৈধ হওয়ার সময় বেঁধে দেয় সৌদি সরকার। ওই সময় সৌদিস্থ বাংলাদেশ মিশন থেকে আট লাখ বাংলাদেশি কনস্যুলার সেবা গ্রহণ করেন। ৩১ হাজার বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসে। এদিকে বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে সৌদির বিভিন্ন জেলখানায় ৮০০ বাংলাদেশি আটক রয়েছে। এসব বাংলাদেশি মানবেতর জীবনযাপন করছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জননিরাপত্তা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ বাংলাদেশিদের তালিকা এরই মধ্যে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এবং দি ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট অফ কান্ট্রিজ অফ দি মিডল ইস্ট বাংলাদেশ সরকারের কাছে দিয়েছে। তাদেরকে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধও করেছে তারা।
এদিকে গত কয়েক মাস আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বলা হয়, অবৈধদের ফিরিয়ে আনা না হলে বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের ভিসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এরপরই বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) স্বাক্ষর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইউরোপে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের এখনই খুব শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে আরো অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনো বাকি। ইইউ আন্তর্জাতিক রীতি ও মানবাধিকারের বাইরে কিছুই না করার বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
অন্যদিকে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনা এবং জীবিকায় অংশগ্রহণ কিভাবে নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে উভয় পক্ষে আলাপ-আলোচনা চলছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রবাসীদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে তাদের দক্ষতা কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে ব্যবস্থা হাতে নিবে বাংলাদেশ সরকার। তারা জানিয়েছে, এরই মধ্যে ভারত, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, গাম্বিয়া ও নাইজেরিয়াসহ ৩৪টি দেশ থেকে ১২ হাজার ২০৬ জন ফিরে এসেছে। সুরক্ষা সেবা বিভাগ স্পেশাল ব্রাঞ্চের মাধ্যমে এসব বাংলাদেশির জাতীয়তা যাচাই করেছে। নতুন করে কাউকে ফেরত আনলেও জাতীয়তা যাচাই করা হবে বলেও জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
No comments:
Post a Comment