পর্যটক হিসেবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ আগে থেকে ভিসা না নিয়ে ঢুকতে পারে বিশ্বের মাত্র পাঁচটি দেশে। দেশগুলো এশিয়া মহাদেশের। পাঁচ দেশের মধ্যে আবার শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপ—এই চারটিই হচ্ছে নিকটতম প্রতিবেশী, দক্ষিণ এশিয়ার এবং সার্কের সদস্য। বাকি দেশটি ইন্দোনেশিয়া। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ভিসা ছাড়া বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের যাওয়ার যে তালিকা জাতীয় সংসদে দিয়েছেন, তা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ দেশগুলোতে ভিসা দেয় ৩০ দিনের জন্য। এ ছাড়া মালদ্বীপ ৯০ দিনের এবং ভুটান ১৫ দিনের ভিসা দেয় বাংলাদেশি পর্যটকদের। তবে দ্বিপক্ষীয় ভিসা চুক্তির আওতায় কূটনৈতিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্টধারী বাংলাদেশিরা যেতে পারেন মোট ২১টি দেশে। যার বেশির ভাগই এশিয়া মহাদেশের। দেশগুলো হচ্ছে ভারত, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, চীন, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, বেলারুশ, কুয়েত, রাশিয়া, জাপান ও চিলি। এ দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়া ৩০ দিন ও অন্য তিন দেশ সর্বোচ্চ ৯০ দিনের আগমনী ভিসা দেয়। জাপান অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীদের ঢুকতে দেয় না, তবে ৯০ দিনের জন্য ঢুকতে দেয় শুধু কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী বাংলাদেশিদের।
বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাসুদ রেজওয়ান বলেন, ‘ভিসার সঙ্গে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি জড়িত। বাংলাদেশকে আরও বেশি দেশ আগমনী ভিসা দেবে, যদি আমরা আরও উন্নত দেশ হতে পারি।’ বৈশ্বিক ভিসামুক্ত চলাচল স্বাধীনতার ওপর এক যুগ ধরে গবেষণা ও সূচক প্রকাশ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা দ্য হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনারস। বিশ্বের ২০১টি দেশের ওপর পরিচালিত ২০১৭ সালের সূচকে দেশগুলোর ১০৪তম পর্যন্ত মান বা অবস্থান নির্ধারণ করেছে সংস্থাটি। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থার (আইএটিএ) ভ্রমণ তথ্যভান্ডারের সহযোগিতা নিয়ে হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনারস এই সর্বশেষ সূচকটি তৈরি করে। সে অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে কম দামি পাসপোর্টধারী দেশ হচ্ছে আফগানিস্তান। দেশটির অবস্থান সর্বনিম্নতম অর্থাৎ ১০৪তম।
আফগানিস্তানের মানুষ আগমনী ভিসা নিয়ে যেতে পারে মোট ২৪টি দেশে। হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনারসের তথ্য অবশ্য বলছে, বাংলাদেশের মানুষ আগমনী ভিসা নিয়ে যেতে পারে ৩৮টি দেশে। বিনা ভিসায় বাংলাদেশে যাঁরা আসেন, তাঁদের ৩০ দিনের জন্য আগমনী ভিসা দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ১৯টি দেশ এবং ইউরোপের সব দেশের ৫১টি দেশের নাগরিকই বাংলাদেশের কাছে আগমনী ভিসা পায়। অবশ্য তাঁরা যদি সরকারি কাজে, ব্যবসায়, বিনিয়োগ ও পর্যটনের উদ্দেশে বাংলাদেশে আসেন, তবেই তা দেওয়া হয়। সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে তথ্য দিয়েছেন, তার বাইরেও কিছু দেশে ভিসা ছাড়া অর্থাৎ আগমনী ভিসা নিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকেরা যেতে পারেন বলে জানা গেছে। তবে এসব ক্ষেত্রে দেশগুলোর কিছু শর্ত থাকে, যা পূরণ করতে হয়। এ দেশগুলোর সঙ্গে সরকারের কোনো দ্বিপক্ষীয় ভিসা চুক্তি নেই বলেই সংসদে দেওয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তথ্যেও কিছু বলা হয়নি।
কেনিয়ার নাইরোবিতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সম্মেলন কাভার করতে গিয়েছিলেন যেসব সাংবাদিক, তাঁরা আগমনী ভিসা পেয়েছিলেন বলে জানান। ঢাকায় বেসরকারি কিছু ভিসা প্রক্রিয়াকরণ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ‘ভিসা থিং’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, ঢাকায় দূতাবাস নেই এমন ৭০টি দেশের ভিসা প্রক্রিয়াকরণের কাজও করছে তারা।
বাংলাদেশ যেসব দেশ থেকে আগমনী ভিসা পায় বলে সরকার বলছে, তার বাইরেও কিছু দেশ রয়েছে, যারা বাংলাদেশিদের এ ভিসা দিয়ে থাকে। দেশগুলোর বেশির ভাগই অবশ্য আফ্রিকার। এগুলো হচ্ছে জিবুতি, মাদাগাস্কার, মোজাম্বিক, টোগো, উগান্ডা, লেসোথো, ভানুয়াতু, গাম্বিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, হাইতি, বারবাডোস, বাহামা ইত্যাদি। ভিসা থিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস মোত্তাকিন বলেন, ‘সরকারি তালিকাই ঠিক আছে। তবে যাঁদের পাসপোর্ট ভারী অর্থাৎ যাঁরা অনেক দেশে গিয়েছেন, তাঁরা সরকারি তালিকার বাইরেও অনেক দেশে যেতে পারেন। আমরা অনেকের কাগজপত্র প্রক্রিয়াকরণ করেছি এবং এখনো করছি।’
No comments:
Post a Comment