দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পশ্চিমের দেশ ইকুয়েডর। প্রশান্ত মহাসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত এ দেশটিতে বহু জাতির মানুষের বসবাস। এক সময় পেট্রোলিয়াম শিল্পে অনেক উন্নত ছিলো দেশটি।যার কারণে ভিসা ছাড়াই বিশ্বের অনেক দেশকে ভ্রমনের সুযোগ দিত ইকুয়েডর। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দায় বর্তমানে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক খারাপ। এ কারণে বিশ্বের কয়েকটি দেশর ভ্রমণ ভিসা বাতিল করেছে দেশটির সরকার। যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ।
ইকুয়েডর সরকার যে ‘খোলা দরজা নীতি’ (ওপেন ডোর পলিসি) গ্রহণ করেছিল, তা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশিদের। মানব পাচার রোধে সম্প্রতি ইকুয়েডর সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে ইকুয়েডরের একটি স্থানীয় গণমাধ্যম। তবে বাংলাদেশ ছাড়াও আরো আটটি দেশ (আফগানিস্তান, ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, নেপাল, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান) এ কালো তালিকায় রয়েছে। এর ফলে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ‘ভিসামুক্ত’ এ দেশে যেতে হলে কালো তালিকাভুক্ত ৯টি দেশের নাগরিকদের এখন ভিসা নিতে হবে।
বাংলাদেশে ইকুয়েডর প্রজাতন্ত্রের কোনো দূতাবাস না থাকায় দেশটিতে যেতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের সমস্যা আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এ পদক্ষেপের পর থেকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইকুয়েডর দূতাবাসের ওয়েবসাইটে ওই দেশের সরকারের ভিসা বিষয়ক সাম্প্রতিক এ সিদ্ধান্তের খবর প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ইকুয়েডর দূতাবাসের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ইকুয়েডর সরকারের মাইগ্রেশন ও কনস্যুলার অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি লিওনার্দো ক্যারিওন বলেছেন, ৯টি দেশ থেকে আসা অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই ইকুয়েডরকে ট্রানজিট করে তৃতীয় কোনো দেশে যাওয়া ঠেকাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন এ সিদ্ধান্তের পরও দেশগুলোর সঙ্গে ইকুয়েডরের সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকবে বলে লিওনার্দো ক্যারিওন মনে করেন।
নিওনার্দো ক্যারিওন আর বলেন, ভিসা ছাড়া প্রবেশাধিকারের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে ইকুয়েডরে মানব পাচার দিনদিন বেড়ে চলেছে। এ ছাড়া ইকুয়েডরে যাওয়া অভিবাসীরা শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য আবেদনের পাশাপাশি অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেছে অনেক অভিবাসী। যাদের মধ্যে কালো তালিকাভুক্ত দেশে অভিবাসীর সংখ্যা সর্বোচ্চ। তাই ইকুয়েডরের খোলা দরজা নীতির সুবিধা সব দেশকে দেওয়ার ব্যাপারে ভুক্তভোগী দেশগুলোর আপত্তি ছিল। এটিই ইকুয়েডর সরকারকে বাংলাদেশসহ মোট ৯টি দেশকে খোলা দরজা নীতির বাইরে রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহী করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ইকুয়েডরের ভিসা বাধ্যতামূলক করা প্রসঙ্গে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি দেশেরই নিজেদের ভিসা ব্যবস্থা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। তবে অনেক সময় বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না। এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর প্রকাশিত মানব পাচারবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে আখ্যায়িত করার পর মানব পাচার ঠেকাতে বাস্তবসম্মত কর্ম পরিকল্পনা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ।
ইকুয়েডর সরকারের এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক সুবান কুমার চৌধুরি বলেন, বিভিন্ন দেশে তাদের প্রয়োজনে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়া বা মানব পাচার ঠেকাতে সরকারকে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। এটি করতে পারলে বাংলাদেশের সর্ম্পকে অন্যান্য দেশের এ ধরনের নেতিবাচক মনোভাব দূর হবে।
এছাড়াও তিনি আরও বলেন, ইকুয়েডরে কালো তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ দেওয়াতে হলে অবশ্যই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। যাতে করে ইকুয়েডর তাদের কালো তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ দেয়। তবে এ কাজ অনেক দ্রুত করতে হবে বলেও মনে করেন সুবান কুমার চৌধুরি। তিনি বলেন, এমনটি চলতে থাকলে অন্যান্য অনেক দেশে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ব্যাবস্থা বন্ধ হতে পারে। সেদিকে সরকারের সজাগ দৃষ্টিও আশা করেন তিনি।
No comments:
Post a Comment