উচ্চশিক্ষা গ্রহণে প্রতিবছর ইউরোপ এবং আমেরিকার উড়াল দিচ্ছে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর সংখ্যক শিক্ষার্থী। বিদেশের মাটিতে পছন্দের এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্কলারশীপ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে এসব শিক্ষার্থীর অনেকেই। কিন্তু সেই সুযোগ কেউ পেয়ে যাচ্ছে অতি সহজে, আবার কারো কারো তা হয়ে উঠছে শত প্রচেষ্টার পাহাড়। কিন্তু তাই বলে কি থেমে যাবেন? মোটেও না।
বিশ্ব র্যাংকিংয়ের তালিকায় থাকা ইউরোপ-আমেরিকার পরেই আছে দ. এশিয়ার দেশ শ্রীলংকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। যেখানে আপনি একই ধরণের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে পড়াশুনা করতে পারবেন। পাবেন বাড়তি সুবিধাও। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দেশটিতে প্রতি বছর ছুটে আসছে বহু সংখ্যক শিক্ষার্থী। তাই উচ্চশিক্ষায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছেও দেশটি হতে পারে নতুন গন্তব্য। সংস্কৃতি, আবহাওয়া, জলবায়ুতে বাংলাদেশের সাথে বেশ মিল রয়েছে দারুণভাবে। এছাড়া টিউশন ফি, সেশন চার্জ,আবাসন ফি রয়েছে মধ্যবিত্তদের ধরাছোয়ার ভিতরে।
শ্রীলংকায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে হাইকমিশনার জানান, ২০২০ সালের মধ্যে শ্রীলংকাকে উচ্চশিক্ষার আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগোচ্ছে দেশটির সরকার।
বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু এবং এখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে শ্রীলংকার অনেকটা মিল রয়েছে উল্লেখ করে ইয়াসোজা গুনাসেকেরা বলেন, দুদেশের শিক্ষার্থীরা সহজে নিজেদের দেশের মতো করে পরিবেশ মানিয়ে নিতে পারবে। এ ছাড়া শ্রীলংকায় বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপ কিংবা এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মতো ভিসা সংক্রান্ত কোনো জটিলতা নেই। অন-অ্যারাইভাল ভিসা রীতি প্রচলিত আছে। বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যে মুদ্রা বিনিময়ের হারেও বেশি তফাত নেই। শ্রীলংকান সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে ইউরোপীয় সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ বিনিময়ের সুযোগ রয়েছে। পছন্দের বিষয়ে উচ্চশিক্ষা-গবেষণার জন্য শ্রীলংকা থেকে ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সহজে স্থানান্তর হতে পারে শিক্ষার্থীরা।
চলতি বছরে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফরকালে দুই দেশের মধ্যে উচ্চশিক্ষা কমিশনের একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এতে তাদের শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশে বাড়তি সুবিধা চাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশিদের জন্য শ্রীলংকায় বিশ্ব র্যাংকিংভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও প্রতিবছর শ্রীলংকান অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য বাংলাদেশে আসছে। বিশেষ করে এদেশে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশি আসছে তারা।
শিক্ষা, গবেষণা, জ্ঞান স্থানান্তর এবং আন্তর্জাতিক মানদন্ডে টাইমস উচ্চশিক্ষা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিংয়ে ২০১৬-১৭ প্রতিবেদনে শ্রীলংকান সরকারি ও বেসরকারি বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব পারাদেনিয়া, ইউনিভার্সিটি অব মোরাতুওয়া, ইউনিভার্সিটি অব শ্রী জয়ওয়ার্দিনপুরা, ইউনিভার্সিটি অব রুহুনা, ইউনিভার্সিটি অব কেলানিয়া অন্যতম।
দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সাক্ষরতার হার এবং সর্বোপরি এশিয়ার সর্বোচ্চ সাক্ষরতার হারের মধ্যে একটি শ্রীলংকা একটি। শ্রীলংকার সংবিধানে ‘শিক্ষা’কে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দেশটির জনসংখ্যার সাক্ষরতার হারও ৯২ শতাংশ। তাই দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে বাড়তি সুবিধা।
উল্লেখ্য, ইউনেস্কোর তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশ থেকে বিদেশে শিক্ষার্থীদের গমন বেড়েছে। এক বছরেই তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ শতাংশের বেশি। ২০১৫ সালে মোট ৩৩ হাজার ১৩৯ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যান। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ১১২ জন। দুই বছরের হিসাবে দেখা যায়, ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে ৩৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমিয়েছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মালয়েশিয়ায় ৬ হাজার ৫৩৪ জন, এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ৫ হাজার ৪৪১ জন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬৪৪ জন। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এমনকি ভারতেও যাচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী।
No comments:
Post a Comment