বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের অন্যতম বাজার হতে পারে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো। বর্তমানে এ অঞ্চলগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি নেই বললেই চলে। অথচ এখানে রয়েছে বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিশাল সম্ভাবনা যা এখন ভারত ও চীনের দখলে। এ অঞ্চলের দেশগুলোতে বাণিজ্য সম্প্রসারণে এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ উন্নয়নের কাঙ্খিত লক্ষ্য বাস্তবায়নে অনেকটাই এগিয়ে যাবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যের যে ঘাটতি রয়েছে তাও দূর হবে। আর এজন্য প্রয়োজন বাজারগুলো সম্পর্কে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের আগ্রহী হয়ে উঠা এবং নিয়মিত রপ্তানীযোগ্য পণ্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা।
আলাপচারিতায় সম্ভাবনার এ কথাগুলো বলেন বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ইন-করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট গোলাম মেহরাজ। বহু বছর ধরে আমেরিকায় বসবাসরত গোলাম মেহরাজ বাংলাদেশি আমেরিকান রিপাবলিকান পার্টির চেয়ারম্যান। তিনি রিপাবলিকান পার্টির সঙ্গে প্রায় দুই যুগ ধরে মার্কিন প্রশাসনে কাজ করছেন। ভেতর থেকে দেখেছেন প্রশাসনের নানা খুঁটিনাটি। খুঁজেছেন আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির কারণগুলো। গোলাম মেহরাজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে আরএমজি সেক্টরে প্রায় ৫.৮ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এ ছাড়াও ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্যিক ডিউটি দিয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের রপ্তানি ঘাটতি তৈরি হয়েছে. আর সেটি পূরণসহ ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের।
আমাদের দেশে অনেক পণ্য আছে যার ভালো বাজার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে। বাংলাদেশের পাট, তৈরি পোশাক পণ্য, চামড়াজাত পণ্য ও ওষুধের বিশাল বাজার হতে পারে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারিভাবেও কিছু কাজ করতে হবে। ওই দেশগুলোতে দূতাবাস ও বিজনেস সেন্টার স্থাপন করে বাংলাদেশি পণ্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করলে তা বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর বিদ্যমান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাধা দূর করা সম্ভব হলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হবে। এ দেশগুলোর সঙ্গে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিনিময় ও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ভিসা প্রাপ্তি সহজীকরণ জরুরি।’
এছাড়া যেসব পণ্যের রপ্তানীর সুযোগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে তার মধ্যে রেডিমেড গার্মেন্ট, নিটওয়্যার, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, সিরামিকস, মেলামাইন, ইলেক্ট্রনিক্স, কাগজ, হস্তশিল্প, ওষুধ, চিংড়ি, বেভারেজ ও পানীয়, জাহাজ নির্মাণ শিল্প এগুলোর প্রদর্শনী বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে সম্ভাবনাময় জায়গায় নিয়ে যাবে নিশ্চিতভাবে।
বাংলাদেশের এক সময়ের ‘সোনালী আঁশ’ পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যাপক বাজার সৃষ্টি করা ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে সম্ভব বলে মনে করেন গোলাম মেহরাজ। পেরুতে কৃষিপণ্যের ব্যাপক উৎপাদন এবং এর বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করতে তাদের বিপুল পরিমাণ চটের ব্যাগের প্রয়োজন হয়, যা তারা ভারত থেকে আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশ চাইলে খুব সহজেই পাটজাত পণ্যের বিশাল এই বাজারটি ধরতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ইন-করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট গোলাম মেহরাজ। তাছাড়া দেশটির আইটি সেক্টরেও বাংলাদেশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে জানান তিনি।
ল্যাটিন আমেরিকার অঞ্চলে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাংলাদেশি পণ্যের পরিচিতি তুলে ধরার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে মেহরাজ বলেন, আমাদের এখানে এমন অনেক পণ্য আছে, যেগুলো মানের দিক দিয়ে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর চেয়ে অনেক ভালো। শুধু প্রচারের অভাবে এ পণ্যগুলোর বাজার সৃষ্টি হচ্ছে না।
No comments:
Post a Comment