এখনও পাট বিশ্বে সবচেয়ে সস্তা, পরিবেশবান্ধব ও বায়ো-ডিগ্রেডেবল প্রাকৃতিক তন্তু। প্রাকৃতিক তন্তু হিসেবে তুলার পরই পাটের অবস্থান। বৈশ্বিক তন্তুর ৯১ শতাংশ জোগান আসে তুলা ও সিনথেটিক তন্তু থেকে। পাট জোগান দেয় ৬ শতাংশ। বিশ্বজুড়ে পরিবেশবান্ধব পাটের প্যাকেট ও বস্তার চাহিদা বেড়ে গেছে। পাট থেকে উন্নতমানের মিহি সুতা আবিষ্কার পাটের সম্ভাবনা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে পাহাড় ঘেরা রাষ্ট্র পেরুও ব্যতিক্রম নয় এক্ষেত্রে। ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ বেশ আগেই স্থান করে নিয়েছে দেশটিতে। বাংলাদেশে তৈরি গার্মেন্টস সামগ্রী (আরএমজি) ও জুতো অনেক আগে থেকেই আসছে পেরুর বাজারে।
এর পাশাপাশি বাংলাদেশের এক সময়ের ‘সোনালী আঁশ’ পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যাপক বাজার সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে পেরুতে। প্রতি বছর প্রায় চার থেকে পাঁচ মিলিয়ন ইউএস ডলারের আরএমজি এবং কয়েক লাখ ডলারের জুতো পেরুতে রফতানি করছে বাংলাদেশ। পেরুতে কৃষিপণ্যের ব্যাপক উৎপাদন এবং এর বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করতে তাদের বিপুল পরিমাণ চটের ব্যাগের প্রয়োজন হয়, যা তারা নিয়মিত আমদানি করে আসছে ভারত থেকে। বাংলাদেশ চাইলে খুব সহজেই পাটজাত পণ্যের বিশাল এই বাজারটি ধরতে পারে বলে মনে করেন রফতানির সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিরা। তাছাড়া দেশটির আইটি সেক্টরেও বাংলাদেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে।
আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অভিজ্ঞ মহল থেকেও বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকারের ‘এক্সপোর্ট বাস্কেট এক্সপানশন অ্যান্ড ডাইভার্সিফিকেশন’ পলিসিকে সফল করতে পেরুর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বাজারটি দ্রুত ধরার এখনই সময়। পেরুসহ বিশ্বব্যাপী পাটজাত পণ্যের এখনো বিশাল বাজার রয়েছে। পাটজাত দ্রব্য পরিবেশবান্ধব বিধায় এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভবিষ্যতে এর ব্যবহার আরো বাড়বে। সুতরাং পাটজাত পণ্যের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল এবং একই সাথে পাট শিল্পের ভবিষ্যৎও উজ্জ্বল।
বিশ্বে মোট কাঁচা পাটের (৩০ লাখ মেট্রিক টন) ৯৬ শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশ (১২ লাখ মেট্রিক টন) ও ভারতে (১৭ লাখ মেট্রিক টন)। কাঁচা পাটের বৈশ্বিক রফতানি বাণিজ্যের ৯৬ শতাংশ বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে। ৬০ শতাংশ পাটপণ্য রফতানি হয় বাংলাদেশ থেকে। বাংলাদেশ বিশ্বের প্রধান পাট সুতা (ইয়ার্ন) রফতানিকারক দেশ। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে ছয় লাখ মেট্রিক টন ইয়ার্ন বিশ্ববাজারে রপ্তানি করেছে। ভারত রফতানি করে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। অভ্যন্তরীণ ও বিশ্ববাজারে পাট সুতার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বজুড়ে মোট ৩৮৫টি পাটশিল্পের মধ্যে বাংলাদেশে ২১৯টি।
বৈশ্বিক সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে ২০২১ সাল নাগাদ কাঁচা পাট ও পাটপণ্যের চাহিদা ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এরই মধ্যে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা পাটপণ্য নিয়ে নতুন নতুন বাজারে প্রবেশ করছে। পাটের নতুন সম্ভাবনা উপলব্ধি করে বাংলাদেশ সরকারও বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে। কাঁচা পাট ও পাটপণ্য আমদানিকারক দেশগুলো মূলত বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কাঁচা পাট ও পাটপণ্যের চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধির ফলে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে পাট পণ্যের বাংলাদেশি বাজার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে রফতানি বাণিজ্যে আবারো পাট বাংলাদেশের সোনালী আঁশ হয়ে উঠবে।
No comments:
Post a Comment