দিন দিন বাড়ছে অবৈধপথে বিদেশে পাড়ি দেওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা। দালালদের খপ্পরে পরে সর্বশান্ত হচ্ছে তারা। অবৈধ পথে বিদেশ পাড়ি দিতে গিয়ে বেশিরভাগই বিভিন্ন দেশে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, তবুও কমছে না এ যাত্রা। উন্নত জীবন আর আর্থিক উন্নতির লক্ষ্যে প্রতিদিন সমুদ্রপথে ভূমধ্যসাগর বা পানামার ডেরিয়েন গ্যাপের মতো ভয়ংকর জঙ্গলও পাড়ি দিতে দ্বিধা করছে না বাংলাদেশিরা। আর তাই নিত্যনতুন রুটে বিদেশ পাড়ির স্বপ্ন নিয়ে প্রতিনিয়ত চরম ঝুঁকি নিচ্ছে হাজার হাজার বাংলাদেশি।
জার্মানি থেকে বাংলাদেশে ফেরত আসা নোয়াখালি জেলার তিন বাংলাদেশি জানিয়েছেন অবৈধ পথে জার্মানি যেতে কি ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাদের। তারা জানান, প্রায় তিন লাখ টাকার বিনিময়ে এক দালালের মাধ্যমে ২০১৫ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ থেকে জার্মানির উদ্দেশ্য রওনা হন। তারা জানান, সিলেটের বিমানবন্দর থেকে তুরস্কে যান তারা। সেখানে গিয়ে ওই দালাল তুরস্কের এক বাংলাদেশি দালালের কাছে বিক্রি করে দেয় তাদের। এ সময় নতুন দালাল জার্মানি নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের কাছ থেকে আবার তিন লাখ করে টাকা নেয়। এই টাকা দিতে অস্বীকার করায় ভয়াবহ নির্যা।তন চলে তাদের উপর।
তিন বাংলাদেশির মধ্যে রশিদ নামে একজন জানান, তুরস্কে তাদের প্রায় ১ মাস থাকতে হয়। কারণ বাংলাদেশ থেকে টাকা না পৌছানো পযর্ন্ত তাদের সেই দেশে আটকে রাখে দালালরা। রশিদ জানান দালালরা তাদের অমানবিক অত্যাচার করতো। ঠিক মতো তিনবেলা খেতে দিতো না। টাকা দিতে দেরি করায় তাদের লাঠি দিয়ে পেটাতো। এমনকি কখনো কখনো তাদের দুই হাত দড়ি দিয়ে টাঙ্গিয়ে রাখতো সারা রাত। রশিদ আরো জানান, তাদের সাথে পাকিস্তানি ও বাংলাদেশের আরো ত্রিশজন ছিলো। যাদেরকে একই ভাবে টাকার জন্য নির্যাতন করতো দালালরা। রশিদ জানান, তারা টাকার ব্যবস্থা করার পরও তাদের বিভিন্ন ভাবে আটকে রাখতো দালালরা। কিছুদিন পর পর পাঁচ-সাতজন করে জার্মানির উদ্দেশ্যে তুরস্ক থেকে গ্রিসে পাঠাতো তাদের। এভাবে প্রায় ১ মাস পর রশিদ সহ তার অন্য বন্ধুরা জার্মানির উদ্দেশ্যে গ্রিসে পৌছায়। গ্রিসে গিয়ে তুরস্কের দালালরা আবার তাদের বিক্রি করে দেয় নতুন দালালের কাছে। এ দালালরা ছিলো নাইজেরিয়ান। তুরস্ক থেকে আসা অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নতুন দালালের কাছ থেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু ভাগ্য খারাপ থাকায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ধরে ফেলে নাইজেরিয়ান দালালচক্রটি।
এরপর টাকার জন্য আবার তাদের উপর অত্যাচার করতে থাকে নতুন দালাল চক্রটি। এবার প্রতিজনের থেকে দুই লাখ টাকা করে দাবি জানায় এ দালাল চক্রটি। রশিদ বলেন, তাদের আর টাকা দেওয়ার সার্মথ্য ছিলোনা। আর এরপরই নতুন দালালরা তাদের জঙ্গলে নিয়ে দিনের পর দিন আটকে রেখে মারধর করে। এসময় তাদের দিনে একবার খেতে দিতো, আবার কখনো কখনো খেতেই দিতো না।
এরপর অনেক কষ্টে আবার বাংলাদেশ থেকে টাকা জোগার করে সেই দালালদের মাধ্যমে জার্মানি পৌছায় তারা। রশিদ বলেন, অবৈধ প্রবাসীরা যে দেশেই যাক না কেনো অবৈধ হওয়ায় তারা কোন ভালো কাজ খুঁজে পায় না। ফলে তাদের পড়তে হয় নতুন সমস্যায়। তাই তিনি জানান, অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন না দেখে কোনো কাজে দক্ষ হয়ে বৈধ পথে বিদেশে যাওয়া উচিত। কারণ বিদেশে দক্ষ শ্রমিকদের জন্য প্রচুর ভালো কাজ আছে। কিন্তু অবৈধ ও অদক্ষ হলে বিদেশে গিয়েও ভালো আয় করা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। রশিদের মত ভুক্তরভাগীদের মতে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত দালালের মাধ্যমে অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়া রোধে কঠোর আইন করা। যেনো কোন বাংলাদেশিকে দালালদের মাধ্যমে বিদেশে যেতে না হয়। একই সাথে জনশক্তি রপ্তানি বাংলাদেশে অর্থনীতির একটি অন্যতম বড় খাত। তাই এ খাতটি যেনো দালাল চক্রের কারণে নষ্ট না হয়ে যায় সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়া প্রবাসীরা।
No comments:
Post a Comment