সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন দেশ থেকে শরণার্থী প্রবেশের ওপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জারি করা নিষেধাজ্ঞা বিস্তৃত পরিসরে বাস্তবায়নে অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট । ওই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের এক আবেদনে সম্মতি দিয়েছেন মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা। নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নিম্ন আদালতের একটি সিদ্ধান্ত আটকে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিলো এই আবেদনে। নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্তে ট্রাম্পের রক্ষণশীল শরণার্থী নীতি সহজীকরণ করা হয়।
মার্কিন বিচার বিভাগের মতে, ওই সিদ্ধান্তের ফলে আগামী মাসের আগে অতিরিক্ত ২৪ হাজার পর্যন্ত শরণার্থী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ পেত। সুপ্রিম কোর্টের এ আদেশ ট্রাম্পকে তাঁর শরণার্থী নীতিতে আংশিক বিজয় এনে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত বছরের অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে এক বিতর্কিত নির্বাহী আদেশে সই করেন। তবে এ আদেশের সাংবিধানিক বৈধতা প্রশ্নে মার্কিন হাইকোর্টে গুরুত্বপূর্ণ এক শুনানির প্রস্তুতি চলছে। ব্যাপক সমালোচনার মুখে ট্রাম্প এ বছরের ৬ মার্চ শরণার্থীদের প্রবেশ নিয়ে যে সংশোধিত নির্বাহী আদেশে সই করেন তাতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছয় দেশ ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের নাগরিকদের ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। একই আদেশে অন্যান্য দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য ১২০ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এই নির্বাহী আদেশ জারির পেছনে যুক্তি হিসেবে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘সন্ত্রাসী’ আক্রমণ ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে। মার্চে ওই নির্বাহী আদেশ জারির আগে গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প একই আদেশের আরও কঠোর সংস্করণ জারি করলে দ্রুত এর বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়। ফলে ফেব্রুয়ারিতে নিম্ন আদালত তা স্থগিত করে দেয়. গত মার্চে ট্রাম্প সংশোধিত নির্বাহী আদেশ জারির পর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন আদালত এর কার্যকারিতার আওতা সীমিত করে। আদালত রুলিং দেয়, ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা মার্কিন সংবিধান ও ফেডারেল অভিবাসন আইনের লঙ্ঘন। হাইকোর্ট এই রুলিং পুনর্বিবেচনা করতে সম্মত হয়েছে।
নিম্ন আদালতের বিচারকেরা গত জুনে দেওয়া রুলিংয়ে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসন এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে পারে না। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার বিতর্কিত নীতি বাস্তবায়নে আরো বেশি কাজের সুযোগ পাবে তা নিঃসন্ধেহে বলা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেসে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির পরিচিত মুখ আতাউল খান রিপন এ বিষয়ে ভয়েস বাংলাকে জানান, ‘এর ফলে বিমান বন্দরে কড়াকড়ি আগের চেয়ে আরো বেড়ে যাবে। এখন থেকে অনেক বেশি যাচাই বাচাই করবে তারা। সামান্যতম সন্দেহ হলে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতেও দিবে না। যাদের ভিসা আগে হয়েছে তাদের আবার যাচাই বাছাই করে ঢুকতে অনুমতি দিবে। এর ফলে অভিবাসী হয়রানির শেষ হবে না অচিরেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘কিছুদিন আগে একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী দেশে গিয়ে ফেরার সময় বিমান বন্দর থেকে তাকে ফেরত পাঠিয়ে দেয় ইমিগ্রেশন। কারণ হিসেবে জানা যায় স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসে নিয়মিত কাজ করত সে। মূলত পড়াশুনা করতে এসে কেন কাজ করত এই অজুহাতে তাকে ফিরে আসতে হয়। এখন ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন বিরোধী যে কোন নীতি বাস্তবায়নে আরো বেশি কঠোর হবে বলে তিনি মনে করেন। ফলে অভিবাসী জীবনে নানা বিড়ম্বনা আরও বেড়ে যাবে ।
No comments:
Post a Comment