Social Icons

Saturday, September 16, 2017

অবৈধ পথে ইউরোপ যাত্রা: লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের মানবেতর জীবন

সম্প্রতি শতাধিক বাংলাদেশিকে লিবিয়ায় অপহরণ করে কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবির সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তিন বিকাশ এজেন্টসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এসব সদস্যরা সরাসরি লিবিয়ায় অপহরণ চক্রের সাথে কাজ করতো। ইউরোপের অভিবাসন  প্রত্যাশী অসহায় বাংলাদেশিদের অপহরণ করে দেশ থেকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায়ে এজেন্ট হিসেবে কাজ করতো এরা।
পরিসংখ্যান বলছে, লিবিয়ায় প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার বাংলাদেশি চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে জীবনযাপন করছে। প্রতি সপ্তাহে ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে তিন থেকে চারটি অপহরণের খবর আসে। এরপর দূতাবাস মধ্যস্থতা করে তাদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করে। তবে পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ যে দূতাবাসের কর্মকর্তাদেরও একাধিকবার অপহরণ করার পরে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে। দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, দেশটির ত্রিপোলি o বেনগাজিতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি থাকে। কিন্তু সেখানে সরকার ব্যবস্থা অত্যন্ত ভঙ্গুর। পুলিশ বা আর্মি প্রশাসন কাজ করে না বললেই চলে।
দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশ, ইউরোপের সব দূতাবাস, জাতিসংঘ, রেডক্রসসহ সব বৈশ্বিক সংস্থার অফিস লিবিয়াতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এশিয়ার মধ্যে শুধু বাংলাদেশ ত্রিপোলিতে তার পূর্ণ দূতাবাস খোলা রেখেছে। এমনকি এখানে রাষ্ট্রদূত ও চার কর্মকর্তাসহ ১৯ জন কর্মরত আছেন। এর বিপরীতে ভারতীয় দূতাবাসে একজন কর্মকর্তা শুধু বাসা থেকে কাজ করেন। পাকিস্তানের একজন কর্মকর্তা মাঝে মাঝে ত্রিপোলিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, লিবিয়াতে বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় আছে বাংলাদেশিরা। অথচ দেশটির অর্থনীতির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ও বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। দুই বছর আগে ১২০০ দিনার দিলে ১ হাজার ডলার পাওয়া যেত কিন্তু বর্তমানে ৩ হাজার ৮০০ দিনারে ১০০০ ডলার পাওয়া যায়। এখানে সাধারণভাবে বাংলাদেশিদের বেতন ৫৫০ থেকে ৬০০ দিনার । বৈধ চ্যানেলে তাদের টাকা পাঠানোর কোনও সুযোগ নেই।
লিবিয়া প্রবাসী সাকের আলী জানান, এখানে নিয়মিত পুলিশ বাহিনী নেই। অপহরণ হলে কারো সাথে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করে সুরাহা করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের একটি বড় অংশ বেনগাজিতে থাকে যেখানকার পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। এর আগে সেখানে চারজন বাংলাদেশিকে ব্রাশ ফায়ার করে মেরে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় লিবিয়ানদের দাবি, চরম দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে দিনযাপন করলেও দেশে ফেরত যেতে আগ্রহী নন বাংলাদেশিরা। এমনকি দূতাবাস টিকিটের টাকা দিলেও দেশে ফিরতে চাননা কেউই। কারণ চার-পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে এসেছেন তারা। এ অবস্থায় দেশে ফেরত গেলে ঋণের বোঝা টানতে হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অত্যন্ত বিপজ্জনক যাত্রা জেনেও ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অনেক বাংলাদেশি ইউরোপ যাত্রা করেন। এভাবে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকে মাঝপথে মারা যাচ্ছেন।
বাংলাদেশে একটি চক্র পুরো প্রক্রিয়ার সাথে প্রতিনিয়ত কাজ চালাচ্ছে। তাছাড়া লিবিয়ার বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় যারা সেখানে যাচ্ছে তারা আসলে চাকরির জন্য যাচ্ছেনা। উল্লেখ্য, নতুন করে বাংলাদেশি শ্রমিক প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে লিবিয়া। দেশটি গৃহযুদ্ধের মধ্যে রয়েছে। দেশটি বলছে, কাজ নিয়ে লিবিয়ায় আসার পর অনেকেই নৌকায় করে ভূমধ্যসগার পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর গৃহযুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়া সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপমুখী মানবপাচারের অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। লিবিয়া উপকূল থেকে সাগর পথে ইতালি হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে অবৈধ অভিবাসীদের।
লিবিয়া সরকারের মুখপাত্র হাতেম উরাইবি বলেছেন, বাংলাদেশি শ্রমিকদের লিবিয়ায় ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারা লিবিয়ার কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে আসে। কিন্তু তারপর অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করে। অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে লিবিয়া সরকারের উদ্যোগের অংশ হিসাবেই এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates