সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পাতাল রেলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছে। একে সন্ত্রাসী হামলা বলে মনে করছে ব্রিটিশ পুলিশ। তারা এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, লন্ডনের দক্ষিণ পশ্চিমে ফুলহাম এলাকায় পারসনস গ্রিন স্টেশনে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যায়, একটি ব্যাগের ভেতরে থাকা সাদা একটি বালতিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এই বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন যাত্রীর মুখমণ্ডলে ক্ষত হয়েছে।
ওই বিস্ফোরণের পরপর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়সহ প্রবাসীদের মাঝে নিরাপত্তাহীন পরিবেশ তৈরি হয়।
এরইমধ্যে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদের কাছে আমরা পরাজিত হব না’।
হামলাকারীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এদিকে, পারসনস গ্রিন স্টেশনে ট্রেনের একটি কামরায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে তথাকথিত জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার মার্ক রাওলি লোকজনকে ‘সতর্ক’ থাকার পরামর্শ দিয়ে তাদের ‘আতঙ্কিত হওয়া’ উচিত নয় বলে উল্লেখ করেছেন। তবে এ ঘটনার পর যুক্তরাজ্যে সন্ত্রাসী হামলার হুমকি সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, যে কোনো সময় আবারও যুক্তরাজ্যে সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু রেলে সন্ত্রাসী হামলা নয় বরং বারবার বিভিন্ন পদ্ধতিতে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের থাবায় রক্তাক্ত হচ্ছে যুক্তরাজ্য। চলতি বছরেও দেশটিতে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে। এসব হামলায় প্রায় অর্ধশত প্রাণহানি হয়েছে।
গতকালের হামলার আগে ২২ মে ম্যানচেস্টারে কনসার্টে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ২২ জন নিহত হন। ওই হামলার দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। তার আগে গত ২২ মার্চ একই কায়দায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বাইরে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল। ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজে পদচারীদের গাড়ি চাপা দেওয়ার পর পার্লামেন্টের নিরাপত্তারক্ষীর ওপর ছুরি হামলা চালান। ওই ঘটনায় ৫ জন নিহত হন।
স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানান, এ ধরনের ঘটনায় বৃটেনে বাস করা গোটা মুসলিম কমিউনিটি বিশেষত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। অনেকেই আকর্ষিক হামলার ভয়ে অফিস, রাস্তা কিংবা শপিংমল এমনকি প্রার্থনালয়ে যেতেও দ্বিধা বোধ করছেন।
অভিজ্ঞ মহলের মতে, যুক্তরাজ্যে এ ধরনের ঘটনা কোন সংখ্যালঘু হামলা নয়। বরং বলা যায় মুসলিম বিদ্বেষের সঙ্গে এর বিশেষ যোগসূত্র রয়েছে। হেইট ক্রাইমের ফলে যেমন মসজিদ কিংবা ইসলামি পোষাক পরিহিতদের এসিড সস্ত্রাসের শিকার হতে হচ্ছে। একইভাবে সন্ত্রাসী হামলার উৎস উগ্রবাদী মুসলিম সম্প্রদায়।
এর আগে ৫ ডিসেম্বর ২০১৫ তে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত এক ব্যক্তি লন্ডনের পাতাল রেলস্টেশনে দু’জনকে ছুরিকাঘাত করেন। এর মধ্যে একজন গুরুতর আহত হন। সিরিয়ায় আইএসের ওপর যুক্তরাজ্যের প্রথম বিমান হামলার দুদিন পর এ ঘটনা ঘটে। হামলাকারী ব্যক্তি সোমালিয়া বংশোদ্ভূত মুহেদিন মিরেকে (৩০) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এদিকে, লন্ডন ও ম্যানচেস্টারের মত শহরে মুসলিম নামধারী উগ্রপন্থিদের সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধের কারণে নিরীহ মুসলিমদের নানাভাবে টার্গেট করে এসিড হামলা চালানো হচ্ছে। সেখানে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন নারী ও তরুণীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিকে মুসলিম উগ্রপন্থিদের কারনে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা অন্যদিকে, হেইট ক্রাইমের ফলে এসিড সন্ত্রাসের ঘটনা দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতিতে সামাল দিতে উদ্বিগ্ন যুক্তরাজ্যে। তবে ঘটনার নেপথ্যে যারাই থাকুক না কেন, উগ্রপন্থার সাথে ধর্মপ্রাণ মানুষের কোন সম্পর্ক নেই। এ কথা মনে রেখে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের এ ধরনের হামলা থেকে বিরত থাকা উচিত বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
No comments:
Post a Comment