আদি ঢাকার মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয় পিঠা হল দুধকলি, ক্ষীরসা, তালের পিঠা, ডিমপোয়া, খেজুরপিঠা, চুইপিঠা, পুলি, ছিটাপিঠা, পাটিসাপটা ইত্যাদি। এর মধ্যে অনেক ধরনের পিঠা এখনও সমানভাবে প্রচলিত আছে। পিঠা তৈরিতে প্রধানত চালের গুঁড়া, নানা ধরনের গুড়, নারিকেল, দুধ, মালাই, ক্ষীরসা, বাদাম, পেস্তা, কিশমিশ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
তবে সামাজিক অনুষ্ঠান বা বিয়ে বাড়ির ক্ষেত্রে পিঠার আয়োজনে ভিন্নতা ছিল। এসব অনুষ্ঠানে কুলিপিঠা, মালপোয়া, কাটা সেমাই পিঠা, পোয়াপিঠা, নকশিপিঠা পরিবেশন করা হতো। এসব পিঠা আবার বিভিন্ন কিছুর সাহায্যে নকশা করে বানানো হতো।
তবে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে মানুষের জীবনধারায়। এখন ব্যস্ত জীবনে পিঠা বলতে আমরা শীত ঋতুকেই বুঝি। এই সময়ে ঢাকার রাস্তায় পিঠাওয়ালীদের চিতই পিঠা এবং ভাপা পিঠা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। শীতে সবার কাছে চিতই পিঠার কদর আবার একটু বেশিই বলা চলে। কারণ চিতই পিঠা নানা রকমের ভর্তার সঙ্গে মাখিয়ে খেতে সুস্বাদু লাগে। এসব ভর্তার মধ্যে রয়েছে শুঁটকি, ধনেপাতা, ডালভর্তা, সরিষা ভর্তা ইত্যাদি। এই পিঠাটি সবকিছুর সঙ্গে খাওয়া যায়। অনেকেই ভাপা পিঠার মধ্যে ইলিশ মাছের টুকরা দিয়ে পিঠা বানান। পুরান ঢাকায় ডিমচিতই পিঠা বেশ জনপ্রিয়। কলিজা ভুনা, ঝাল মাংস, বুটের ডালের সঙ্গে চিতই পিঠার জুড়ি নেই। আদিম ঢাকার দুধে-খেজুরের গুড়ের সঙ্গে ভেজানো দুধ চিতই পিঠা ছিল খুবই জনপ্রিয়।
পিঠা বিক্রির জন্য দোকানিরা বিকাল সময়টাকেই বেছে নেন। তাই শীতের সময়ে বিকাল হলেই ঢাকার রাস্তায় আর মোড়ে ভাপা পিঠা বিক্রির ধুম পড়ে যায়। গরম গরম পিঠা ধোঁয়া ওঠা চুলা থেকে নামিয়েই ক্রেতার হাতে তুলে দেন দোকানি। এই পিঠাটি মোগল আমল থেকেই জনপ্রিয়। তবে তখন এটি ছিল আরও ভিন্ন। মোগল আমলে ভাপা পিঠাতে সুগন্ধি গুড়, মালাই, জাফরান, পেস্তা, কিশমিশসহ নানা উপকরণ ব্যবহার করা হতো।
শীতের আরেকটি প্রিয় পিঠার নাম পাটিসাপটা। আদি ঢাকার মানুষের পছন্দের পিঠা এটি। বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে এই পিঠা দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়। পুরান ঢাকার বংশাল, রায়সাহেব বাজারসহ অনেক জায়গাতেই বিকাল হলেই পাটিসাপটা বানাতে দেখা যায়।
একটা সময়ে পিঠা ছিল বাংলার ঐতিহ্য। সময়ের সঙ্গে সেই ঐতিহ্য অনেকটাই হারিয়ে গেছে। কিন্তু শীত এলেই ঢাকার রাস্তায় পিঠা বিক্রির ধুম পড়ে যায়। ফুটপাতে বসা দোকানগুলো স্মরণ করিয়ে দেয় পুরনো সেই ঐতিহ্যের কথা।
No comments:
Post a Comment