ভেনিজুয়েলার জাতীয় ব্যাংক থেকে ২০ টন স্বর্ণ রাশিয়ায় পাচার হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভেনিজুয়েলার সরকারবিরোধীরা। গত বুধবার রাশিয়ার একটি বিমান ভেনিজুয়েলার রাজধানী কারাকাস থেকে স্বর্ণ রিজার্ভ থেকে ৮৪ কোটি ডলারের সমপরিমাণ স্বর্ণ নিয়ে আসে বলে জানানো হয় বিরোধী পক্ষগুলো হতে।
ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরোর সরকারের বাইরে বিরোধীগ্রুপ নিয়ন্ত্রিত পার্লামেন্ট এক টুইটে জানায়, তারা ব্যাংক অব ভেনিজুয়েলার থেকে একটি তথ্য পেয়েছেন, যাতে বলা হয়েছে, মস্কো থেকে কারাকাসে আসা একটি বিমান কমপক্ষে ২০ টন স্বর্ণ নিয়ে গেছে। এটি ব্যাংকে থাকা স্বর্ণের মোট পরিমাণের ২০ শতাংশ। টুইটে আরো বলা হয়, আমরা ব্যাংকের কাছে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চেয়েছি। কারণ এ স্বর্ণ ক্যালিক্সটো অর্তেগার (ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী) নয়, এ স্বর্ণ ভেনিজুয়েলার জনগণের।
তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ গত বুধবার বলেন, ভেনিজুয়েলা থেকে মস্কোতে স্বর্ণ আনার কোনো পরিকল্পনার ব্যাপারে তাদের জানান নেই।
আরবিসি নিউজ আউটলেটে পেসকভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, রাশিয়া সম্ভাব্য সব পন্থায় ভেনিজুয়েলার রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে সাহায্য করতে প্রস্তুত। তবে মস্কো ভেনিজুয়েলার অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপে আগ্রহী নয়।
গত সোমবার রাশিয়ার পত্রিকা নোভায়া গেজেটাতে বলা হয়, মস্কো থেকে একটি যাত্রীবাহী বিমান খালি অবস্থাতেই কারাকাসে গিয়ে অবতরণ করেছে। রাশিয়ার নর্ডওয়াইন্ড এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭ বিমানটি ৪০০ যাত্রী ভ্রমণ করতে পারেন। ফ্লাইট ডাটা ও রয়টার্সের ছবি থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী মস্কো থেকে সরাসরি যাওয়া বিমানটি কারাকাসের বিমানবন্দরে একটি ব্যক্তিগত কর্নারে পার্ক করা হয়েছিল। ওই তথ্যে আরো জানা গেছে যে, বিমানটি প্রথমবারের মতো এ রুটটি ব্যবহার করেছে।
নোভায়া গ্যাজেটাতে বলা হয়েছে, বিমানটিতে ক্রুদের দুটি দল ছিল। অথচ তাদের কারাকাসে যাওয়ার কথা ছিল না। কারণ রাশিয়ার পর্যটকদের সরকারের পক্ষ থেকেই ভেনিজুয়েলার ভ্রমণ এড়িয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। আবার ভেনিজুয়েলা থেকে লোকজনকে নিয়ে আসার কোনো কথাও রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়নি।
ভেনিজুয়েলার সামাজিক গণমাধ্যম বিষয়টি নিয়ে বেশ সরব। কেউ কেউ মন্তব্য করছে এ বিমানে করে গুপ্তঘাতকদের আনা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছে, মাদুরোকে নিরাপদে নির্বাসনে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এ বিমান এসেছে।
দেশটির অর্থমন্ত্রী সাইমন জেরপা দাবি করেন, কারাকাস এয়ারপোর্টে রাশিয়ার কোনো বিমান নেই।
ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো অভিযোগ করেছেন, তিনি ওয়াশিংটন সমর্থিত একটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার মুখে পড়েছেন। বিরোধীদলীয় নেতা হুয়ান গুইদো এসব কর্মকা-ের নেতৃত্ব দিয়েছেন। গত সপ্তাহে গুইদো নিজেকে প্রেসিডেন্ট দাবি করার প্রায় সাথে সাথেই যুক্তরাষ্ট্র তাকে স্বীকৃতি দেয়। রাশিয়া অভিযোগ করেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ভেনিজুয়েলার সরকারকে উৎখাত করতে চাইছে। একই সাথে ভেনিজুয়েলার গুরুত্বপূর্ণ তেল খাতের ওপর অবরোধ আরোপ করার কারণেও ওয়াশিংটনের সমালোচনা করে রাশিয়া। গত মঙ্গলবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, মাদুরোর সমর্থনে যে কোনো কিছু করবে মস্কো।
গুইদো ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে লন্ডনের ভল্টে থাকা ১৩০ কোটি ডলারের সম্পদ মাদুরোর কাছে পৌঁছাতে তারা বাধা দেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সঙ্কটে থাকা ভেনিজুয়েলার বিভিন্ন দেশে প্রায় ৮০০ কোটি ডলারের সম্পদ রয়েছে।
সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ
No comments:
Post a Comment