দাম্পত্য জীবনে বিচ্ছেদ কখনোই কারো কাছে কাম্য নয়। কিন্ত এমন ঘটনা অহরহ ঘটেই থাকে। তাই বলে কোনো ঘটনাই গুরুত্বহীন নয়। প্রত্যেকের জীবনে এটা একটা বড় দুর্ঘটনা। তাই বিচ্ছেদের চূড়ান্ত মুহূর্তের আগ দিয়ে প্রত্যেকের জীবনে তার বন্ধু-স্বজনদের সহযোগিতা ও সহমর্মিতার প্রয়োজন পড়ে। যারা বিচ্ছেদ নিচ্ছেন তাদেরকে এমন কিছু বলা উচিত না যা মানসিক অবস্থা আরো অবনতির দিকে নিয়ে যাবে। টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, তাদের কি ধরনের কথা বলা উচিত না।
১. 'তোমাদের সুখী বলেই মনে হতো' : মনোবিজ্ঞানী টিফানি গ্যারেট জানান, এমন কথায় যিনি ডিভোর্স নিতে উৎসুক, তিনিও দ্বিধায় ভুগবেন। এমনিতেই বিচ্ছেদ নিয়ে নানা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগতে থাকবেন দুজন। এর মধ্যে চেনা মানুষদের কাছ থেকে আরো জটিল মন্তব্য আসলে অবস্থা বেগতিক হবে। আসলে কোনো বিয়েই শতভাগ মনঃপুত হয় না। কিন্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা অধরাই থেকে যায়। এ বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। কিন্ত বিচ্ছেদের কারণ তাদের বিয়েটা সুখকর হয়নি বা এ ধরনের মন্তব্য না করাই ভালো।
২. 'খুবই দুঃখজনক ঘটনা' : পরিচিত কেউ ডিভোর্স নিচ্ছেন শুনলেই মানুষে প্রথম প্রতিক্রিয়া এমনটাই হয়। বিষাদের এই ঘটনায় দুজন নতুন জীবনের কথা ভেবে হলেও আশাবাদী থাকতে পারে। কাজেই বিষয়টি উপলব্ধি না করে প্রথমেই একে দুঃখজনক ঘটনা বলে মন্তব্য করা অনুচিত। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরামর্শদাতা সাইট ইউনাইটেড ডট নেট-এর প্রতিষ্ঠাতা এলিস পিটাসের মতে, বিচ্ছেদের খবরটি যখন পরিচিতিজনদের মধ্যে ছড়িয়ে যায়, তখন দম্পতিরা দারুণ মনোকষ্টে ভোগেন। তাই মন্তব্য না করে বরং ঘটনা শুনে কিছু সুবুদ্ধি দেওয়ার চেষ্টা করুন।
৩. 'অসংখ্য মানুষের জীবনে এমনটা ঘটে' : বিচ্ছেদ নেওয়ার সিদ্ধান্ত একটা বাস্তবতা। কাজেই একে সাধারণ কথা দিয়ে স্বাভাবিক করার প্রয়োজন পড়ে না। এ ধরনের মন্তব্যে মনে হয়, এটা কোনো ব্যাপারই না। অর্থাৎ, তাদের কষ্ট বা যাতনা তেমন কিছু নয়। যে অনুভূতি থেকে দুজন মানুষের বিচ্ছেদ ঘটছে, তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত কাছের মানুষদের। তাই একে সাদামাটা ঘটনা হিসাবে উপস্থাপন না করে কিভাবে সহায়তা করা যায় তা জানার চেষ্টা করুন।
৪. 'ওকে একটা শিক্ষা দেওয়া উচিত' : ক্ষোভ বা মনের মিল না থাকা ডিভোর্সের অন্যতম কারণ। কিন্ত যারা ডিভোর্স নিচ্ছেন তাদের প্রতি এমন মন্তব্য ছুঁড়ে ক্ষোভ উস্কে দেওয়া উচিত নয়। বিচ্ছেদের মধ্যভাগে দুই পক্ষেরই স্থিত থাকাটা জরুরি। আর তা নিশ্চিত করতে স্বজনদেরই পাশা থাকা বাঞ্ছনীয়। একের প্রতি অপরের রাগ বাড়িয়ে দেওয়া বা প্রতিশোধ পরায়ণ করে তোলা শুভাকাঙ্ক্ষীর কাজ হতে পারে না।
৫. 'সন্তানদের জন্যে কি ভালো হবে?' : এ সময় বাবা-মা সন্তানকে নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা করেন। সন্তানের বিষয়টি তাদের মাথায় থাকে। তারপরও ডিভোর্স হয়তো জরুরি হয়ে পড়ে। এর মধ্যে যদি পরিচিত অভিজ্ঞজন হিসাবে আপনার সৎ পরামর্শ দেওয়ার থাকে, তবে তা দিন। কিন্ত সন্তানের দোহাই দিয়ে সিদ্ধান্তটাকে ভুল বলে রায় দিতে পারেন না। বরং বিচ্ছেদ যখন নিশ্চিত, তখন সন্তানের ভালো কোন উপায়ে হতে পারে সে বিষয়ে পরামর্শ দিন।
৬. 'তোমাদের তো অনেক দিনের সংসার' : দীর্ঘ দিনের সংসার ভেঙে যাওয়া নিঃসন্দেহে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। তাই বলে বহু দিন পর দুটো মানুষের বিচ্ছেদ ঘটতে পারা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। সংসার জীবনের যেকোনো সময় এমনটা হতে পারে। কারো এমন মন্তব্য সিদ্ধান্তগ্রহণকারীকে মানসিকভাবে আরো বিপর্যস্ত করে তুলবে। তার মনে হতে পারে, তাহলে আরো কিছু সময় কি দেখবো? এতে হয়তো ওই মুহূর্তের ভাঙন আটকে গেলো। কিন্ত এটা সমাধান নয়। যদি কিছুই না বলার থাকে তবে দুজনের জন্যে সুখ কামনা করুন।
Tuesday, January 5, 2016
Subscribe to:
Post Comments (Atom)


No comments:
Post a Comment