আওয়ামী লীগ সরকার মানুষ হত্যা করে দেশে রাজতন্ত্র কায়েম করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘বহু চেষ্টা করেছেন। এর আগেও একবার চেষ্টা করেছেন একদলীয় শাসন কায়েম করার। এখন আবার করছেন। মানুষ গুম করে, খুন করে রাজতন্ত্র কয়েম করার যে চেষ্টা আপনারা করছেন, তা কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না।’
মঙ্গলবার বিকেলে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিশাল এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে ঢাকা মহানগর বিএনপি এই সমাবেশের আহ্বান করে।
গত বছর ৫ জানুয়ারি থেকে টানা তিন মাসের অবরোধ-হরতালের পর এই প্রথম খালেদা জিয়ার প্রথম বড় কোনো জনসভায় অংশ নিচ্ছেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে জোটের জনসভায় তিনি বক্তব্য দিয়েছিলেন। আর নয়া পল্টনে তার সর্বশেষ জনসভা হয়েছিল ২০১২ সালে।
মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হলেও মঙ্গলবারের সমাবেশে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের বিশাল এলাকা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে 'কৃতজ্ঞতা' প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া।
সমাবেশে বক্তৃতায় খালেদা জিয়া আলোচনায় বসে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা চাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান। গণতন্ত্রের জন্য এক সঙ্গে কাজ করতে।’
তিনি সরকারকে অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তারা জোর করে ক্ষমতায় আছে, তাই তাদেরই এটা করতে হবে।’
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো দিন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়, হবেও না। তাই আলোচনার মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দিলেই এই সরকারের জনপ্রিয়তা বোঝা যাবে।’
তিনি আওয়ামী লীগকে সতর্ক করে বলেন, ‘সঠিক পথে আসুন, গণতন্ত্রের পথে আসুন। এটা না হলে কখন জনগণ জেগে উঠবে তা বলা যায় না।’
বিএনপি চেয়ারপারসন অভিযোগ করেন, বিরোধী দলকে দমনের জন্য সরকার একের পর এক আইন করছে। সংবিধান পরিবর্তন করেছে নিজের স্বার্থে। এই পরিবর্তনে জনগণের ভালোর জন্য কিছু নেই।
তিনি বলেন, কেবল ২০১৪ সালের নির্বাচন নয় ২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনও পাতানো নির্বাচন ছিল। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ ও প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদের সঙ্গে আলোচনা করেছিল।
খালেদা জিয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘তিনি (সিইসি) কি এমন লাটসাহেব হয়েছেন যে দেখা করতে পারেন না।’
তিনি বলেন, ‘আসলে অবৈধ সরকারের এই সিইসি অথর্ব ও মেরুদণ্ডহীন। তার কথা বলারও সাহস নেই। পৌর নির্বাচনের মাধ্যমে তারা তাদের চরিত্র জনগণের সামনে আবার প্রমাণিত করেছে।’
এ সময় বিএনিপ চেয়ারপারসন সারাদেশে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের জুলুম-অত্যাচার বন্ধ করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, আসম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, আব্দুল্লাহ-আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এর আগে এক বছরেরও বেশি সময় পর কোনো জনসভায় ভাষণ দিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিকেলে তিনটার কিছু আগে মঞ্চে ওঠেন। এ সময় নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে তাকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন, নাইটিঙ্গল মোড়, আরামবাগ, ফকিরাপুল, বিজয়নগর এবং এর আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত হন।
সকাল সাড়ে ১০টায় নয়া পল্টনে মঞ্চ নির্মাণের কাজ শেষে দুই পাশ বাঁশ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়, বসানো হয় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা। জনসভাস্থলের রাস্তার দুই পাশে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড় বড় প্রতিকৃতি টানানো হয়।
এছাড়া দলের ‘নিখোঁজ’ নেতা এম ইলিয়াস আলী ও মহানগর নেতা চৌধুরী আলম এবং কারাবন্দি অবস্থায় মারা যাওয়া নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু, আত্মগোপনে থাকা ঢাকা মহানগর বিএনপির আহবায়ক মির্জা আব্বাস ও সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলসহ কারাবন্দি বিভিন্ন নেতার ছবিসহ ব্যানারও দেখা যায়।


No comments:
Post a Comment