ইতালিয়ান শহর রোম যেকোন ভ্রমণকারীর জন্য স্বর্গ। রোমের প্রতিটি স্থানের সাথে জড়িয়ে আছে সভ্যতার ইতিহাস। অন্তত ১,০০০ বছর ধরে রোম ছিল ইউরোপের সবচেয়ে বৃহৎ, সমৃদ্ধ এবং গুরুত্বপূর্ণ শহর। আজকের রোম তার প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিচিত্র এবং জীবন্ত এই শহরে দেখার আছে অনেক কিছু। তার মধ্য থেকে কয়েকটি সবচেয়ে পর্যটকপ্রিয় জায়গার কথা জেনে নেব আজ।
বোরঘেস গ্যালারী-
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শিল্পকর্মের সংগ্রহশালা। রোম ভ্রমণকারীদের মধ্যে জনপ্রিয় একটি জায়গা এটি। গ্যালারীটি অর্ধেক ভিলা, অর্ধেক যাদুঘর। বিখ্যাত সব শিল্পকর্মে ঠাসা এর কক্ষগুলো। এর মধ্যে আছে কানোভার ভেনাস ভিক্ট্রিক্স, বার্নিনির ভাস্কর্য ডেভিড, এপোলো এবং ড্যাফনি, কারাভাজ্জিও’র Boy with a Basket of Fruit এবং ডেভিড ও গোলিয়াথ।
নোট- টিকেট আগেই সংগ্রহ করতে হবে। টিকেটে প্রবেশ এবং প্রস্থান সময় লেখা থাকবে, তাই অবশ্যই আপনার নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট আগে পৌছাতে হবে। সোমবার যাদুঘর বন্ধ থাকে।
ত্রেভি ফাউন্টেন-
ইতালীর একটি অবশ্য দর্শনীয় জায়গা ত্রেভি ফাউন্টেন। ১৭ শতকের মধ্যবর্তী সময়ের পৌরাণিক চরিত্রখচিত বারোক নকশা করা স্থাপত্যের একটি চমৎকার নিদর্শন এটি। সমুদ্রের দেবতা নেপচুন উঠে এসেছে পুকুরের মধ্য থেকে আর তার দুই পাশে বিশ্বাসভাজন ট্রাইটনেরা। রোমান ধারণা অনুযায়ী বাম কাঁধের উপর ঘুরিয়ে ডান হাতের সাহায্যে এক, দুই, তিনটি পয়সা আপনি যদি এই ত্রেভিতে ছুঁড়ে দিতে পারেন তাহলে নিশ্চিতরূপে ১)আপনি আবার রোমে আসবেন, ২)আপনি একজন আকর্ষণীয় রোমানের প্রেমে পড়বেন এবং ৩)সেই রোমানের সাথে আপনার বিয়ে হবে।
রাতেই এর সৌন্দর্য্য সবচেয়ে বেশি ফুটে ওঠে। কারণ রঙ্গিন বাতির আলো ফাউন্টেনের পানির ধারার সাথে মিশে পৌরাণিক আবহ তৈরি করে।
ক্যাসল সেন্ট’এঞ্জেলো-
হাড্রিয়ান সাম্রাজ্যের একটি নিদর্শন ক্যাসল সেন্ট’এঞ্জেলো। এটি তৈরি করা হয়েছিল ১৩৫ এবং ১৩৯ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি। পরবর্তীতে এর উপরে একটি দূর্গ তৈরি করা হয়, ফলে এটি মধ্যযুগীয় পোপদের উপাসনালয় এবং আবাসস্থল হয়ে ওঠে একই সাথে। ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এটি একটি কারাগার ছিল। কিন্তু এখন এটি একটি যাদুঘর। এটি রোমের অন্যতম জনপ্রিয় একটি ট্যুরিস্ট আকর্ষণ। সিনেমা প্রেমীরা একে “Angels and Demons” সিনেমার একটি জনপ্রিয় চিহ্ন হিসেবে আখ্যায়িত করে।
রোমান ফোরাম-
এটি পেলেটাইন এবং ক্যাপিটোলাইন পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত ছোট্ট একটি ভ্যালি। শতবছর ধরে এটি যেন ছিল প্রাচীন রোমের মধ্যমণি। এটি ছিল মিছিল এবং নির্বাচনী বক্তৃতার স্থান, ছিল বানিজ্যিক লেনদেনের কেন্দ্রভূমি। বর্তমানে ফোরামটির শুধু ধ্বংসাবশেষ অবশিষ্ট আছে। একটি ম্যাপ নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখতে পারবেন এক সময়ের রমরমা ব্যস্ত এলাকাটি কেমন ছিল। পেলেটাইন হিল থেকে পুরো শহরটিকে দেখে নিতে পারেন এক নজরে।
প্যান্থীয়ন-
ঈশ্বরকে সমর্পিত করা রোমের এই মন্দিরটি ২৭ খ্রিষ্টাপূর্বাব্দে নির্মিত এবং পরে আবার ২য় শতাব্দীতে বিনির্মাণ করা হয়। তখন এর সাথে পৌত্তলিক দেবতাদের স্থলে যুক্ত করা হয় খ্রিষ্টান ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য। রেনেসাঁর পর প্যান্থীয়নে নতুন করে যোগ হয় শহরের বিভিন্ন শিল্পীদের কবর। প্যান্থীয়ণের অনন্য স্থাপত্যশৈলী পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ।
ভ্যাটিকান সিটি-
রোমে অবস্থিত হওয়ার পরও ভ্যাটিকান সিটি ১৯২৯ সাল থেকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। দেশটির আলাদা পতাকা, মূদ্রা এবং স্ট্যাম্প রয়েছে। এমনকি আলাদা সেনাবাহিনীও আছে যারা দেশটির এবং এর ৮০০ জন সার্বক্ষণিক আবাসিক নাগরিকের সুরক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে। এখানে দেখার জন্য সবচেয়ে বিশেষ হচ্ছে ১৭ শতাব্দীর বারনিনির নকশা করা সেন্ট পিটার্স স্কয়ার। এখানে প্রবেশের পোশাকের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। কাঁধ এবং হাঁটু ঢাকা পোশাকেই আপনি ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন এবং দেখতে পারবেন ভেতরে মাইকেলাঞ্জালোর Pieta, একটি চমৎকার সুন্দর এবং দুঃখী ভাস্কর্য্য। এরপর ছাদে উঠে গেলে একনজরে দেখতে পাবেন সম্পূর্ণ স্কয়ারটি। এছাড়া দেখতে পাবেন ভ্যাটিকানের দেয়াল, ভ্যাটিকানের মিউজিয়াম যেখানে সংরক্ষিত আছে ইতালির বিভিন্ন মাস্টারপিস চিত্রকর্ম, তার মধ্যে মাইকেলাঞ্জালোর ‘ceiling at the Sistine Chapel’ অন্যতম।
No comments:
Post a Comment