একে যুগান্তকারী গবেষণা না বলে উপায় নেই। কারণ মৃত মানুষকে রীতিমতো জীবিত করতে পরীক্ষা চালাচ্ছে বিজ্ঞানীরা। মৃতদের মস্তিষ্কের কোষকে বাঁচিয়ে রেখে তাদের বাঁচিয়ে তোলার জন্যে প্রয়োজনীয় পরীক্ষার অনুমতি মিলেছে চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের।
আমেরিকার একটি বায়োটেক প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে। নৈতিকভাবে এ গবেষণায় অনুমতি মিলেছে তাদের। ইতিমধ্যে ২০ জন রোগীও জুটে গেছে তাদের। এদের সবাইকে ক্লিনিক্যালি মৃত্য ঘোষণা করা হয়েছে ট্রমাটিক মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এদের সেন্ট্রাল নার্ভ সিস্টেমকে আবারো জীবিত করে তোলা যায়।
কয়েক ধরনের থেরাপির সমন্বয় ঘটানো হবে এতে। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মস্তিষ্কে স্টেম সেল দেওয়া হবে। এ ছাড়া পেপটাইডের মিশ্রণও প্রয়োগ করা হবে। আছে লেজার চিকিৎসা, যার মাধ্যমে কোমা থেকে সুস্থ করা গেছে মানুষকে।
যে রোগীদের ওপর পরীক্ষা চলবে তাদের মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং লাইফ সাপোর্টে বাঁচিয়ে রাখা হবে। কয়েক মাস ধরে তাদের ওপর চলবে গবেষণা। বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের বিশেষ করে আপার সিগনাল কর্ডকে সক্রিয় রাখার চেষ্টা করবেন। এই অংশটি মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, মস্তিষ্কের স্টেম সেলগুলো থেকে যাবতীয় ইতিহাস মুছে তাদের নতুনভাবে সাজানো যায়।
বায়োকোয়ার্ক ইনকরপোরেটের সিইও ড. ইরা পাস্তুর জানান, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এটাই প্রথম গবেষণা। আমরা সবেমাত্র এ ধরনের পরীক্ষার অনুমতি পেয়েছি। যে রোগীদের পেয়ে গেছি তাদের ওপর প্রথম থেকেই পরীক্ষা শুরু হবে। রোগীদের পরিবারের কোনো আপত্তি রয়েছে কিনা তা নিয়ে তাদের সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে। আশা করছি, গবেষণা শুরুর প্রথম ২-৩ মাসের মধ্যেই অগ্রগতি সাধিত হবে।
দ্য রিঅ্যানিমা প্রজেক্ট নামের গবেষণাটি আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ-এর ইনস্টিটিউশনাল রিভিও বোর্ড কর্তৃক অনুমোদন পেয়েছে।
রোগীদের স্পাইনাল কর্ডে পাম্পের মাধ্যমে পেপটাইড প্রয়োগ করা হবে। টানা ৬ সপ্তাহ ধরে নির্দিষ্ট সময়ে এটি দেওয়া হবে।
ড. পাস্তুর জানান, রোগীকে মৃত অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।
ব্রেইন স্টেম ডেথ তখনই ঘটে যখন তার মস্তিষ্কের স্টেম সেল কোনো কাজ করে না। যখন তা স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে তখনই কাউকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
মস্তিষ্কের মৃত্যু যাদের ঘটে, তাদের বাঁচিয়ে রাখা যায় না। কিন্তু তখনও তাদের দেহে রক্ত চলাচল করে, হজম প্রক্রিয়া চালু থাকে, বর্জ্য বের হয়, হরমোন কাজ করে, ক্ষত নিরাময় হয় ইত্যাদি।
বায়োকোয়ার্কের চিট সায়েন্টিফিক অফিসার ড. সার্জেই পেলিয়ান জানান, এই গবেষণার মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কের মৃত্যুর বিষয়ে ব্যাপক তথ্য পাওয়া যাবে। কোমা বা কনসিয়াসনেসের ক্ষেত্রে এ সকল থেরাপি ভবিষ্যতে আরো বেশি কার্যকর হবে।
কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর মেডিক্যাল এডুকেশনের নিউলজিস্ট ড. ডিন বার্নেট বলেন, মানুষের স্নায়ুতন্ত্র এবং মস্তিষ্কে খুঁটিনাটি বিষয়ে সম্প্রতি নানা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। মস্তিষ্কের মৃত্যু থেকে মানুষকে আবারো জীবিত করার সুযোগ রয়েছে এবং তা করাটাই আমাদের লক্ষ্য। সূত্র : টেলিগ্রাফ
No comments:
Post a Comment