Social Icons

Friday, June 24, 2016

সন্তানের জন্য টানা ৪৩ বছর রোজা রাখছেন এই মা

ঝিনাইদহ থেকে : সন্তানের জন্য ৪৩ বছর রোজা পালন করে এক অনন্য নজীর সৃষ্টি করেছেন এক মমতাময়ী মা ভালবাসার। সেই ১৯৭৫ সাল থেকে ১২ মাস রোজা পালন করে যাচ্ছেন। এই মায়ের নাম সুখিরণ নেছা। সংসার আর ধন সম্পদ বলতে নিজের কিছুই নেই তার। অভাব অনটনের জীবন তার। না খেয়ে থাকলেও কারো কাছে হাত পাতেন না সুখিরণ।

দুঃখ আর কষ্টই তার নিত্য সঙ্গী। এতো অভাব আর দুঃখ কষ্টের মধ্যেও বারো মাস রোজা পালন করেন তিনি। এই রোজা রাখতে তার কোনো কষ্ট নেই। কারণ এই সংযম সাধনাটা হচ্ছে পেটে ধরা সন্তানের মঙ্গল কামনায়।

সন্তানের জন্য রোজা রাখি, তার আবার কষ্ট কিসের? জিজ্ঞেস করতেই স্মিত প্রশান্তিভরা হাসিতে জবাব দিলেন ৬৯ বছরের বৃদ্ধা সুখিরণ ওরফে ভেজিরণ নেছা।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটী ইউনিয়নের বাজারগোপালপুর গ্রামের মৃত আবুল খায়েরের স্ত্রী সুখিরণ বছরের টানা বারো মাসই রোজা রাখেন।

গ্রামের প্রতিবেশী যুবক মঞ্জুর আলম জানান, পরের ক্ষেতের কাঁচামরিচ, মুগ, কলাই তুলে ও চানাচুর ফ্যক্টরিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন সত্তর বছরের এই বৃদ্ধা। সারাদিন রোজা রাখার পরও খাবারের জন্য কারো দ্বারস্থ হন না। একেবারে আত্মসম্মানবোধে টইটম্বুর এই গর্বিত মা। অনেকেই ভাবতেও অবাক হয়ে যান যে এই বৃদ্ধ বয়সেও নিজের রোজগার তিনি নিজেই করেন। নিজেই এখনো ভাত রান্না করে খান।

আরেক প্রতিবেশি মসলেম উদ্দীন জানান, যে সন্তানের জন্য তিনি ১২ মাস রোজা রাখেন, সেই সন্তানের কাছেও তিনি খাবারের জন্য যান না। ১২ মাস রোজা রাখা নিয়ে সুখিরণ নেছা স্মৃতিচারণ করে বলেন, তার বয়স যখন ২৬ বছর, তখন বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম হারিয়ে যান। দীর্ঘদিন খুঁজেও ১১ বছর বয়সী শহিদুলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

শেষে সন্তান ফিরে আসবে এই মানতে তার বাড়িতে প্রতিদিন ছাগল জবাই করে শিরনী দেওয়া হতো। স্থানীয় বাজারগোপালপুর, মামুশিয়া ও চোরকোল গ্রামের মানুষ এই শিরণী খেতে তার বাড়ি আসতো। ওদিকে সন্তানের চিন্তায় ব্যাকুল মা সুখিরণ নেছা প্রায় পাগল হয়ে যান। তিনি মনস্থির করেন তার ছেলে ফিরে আসলে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্য বারো মাস রোজা রাখবেন। গ্রামের মসজিদ ছুঁয়ে সুখিরণ এ প্রতিজ্ঞা করেন। এরপর দেড় মাস পর একদিন তার হারিয়ে যাওয়া সন্তান নিজ বাড়ির আঙিনায় ফিরে এসে “মা” বলে ডাক দেয়। সুখিরণ নেছা নারিছেড়া হারনো ধনকে বুকে ফিরে পেয়ে চূড়ান্ত স্বস্তি-শান্তির স্পর্শ পান। এটা ১৯৭৫ সালের ঘটনা। তারপর থেকেই সুখিরণ স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ তপু মিয়ার পরামর্শে বারো মাস রোজা রাখা শুরু করেন।

প্রতিবেশীরা জানান, ২১ বছর আগে সুখিরণ নেছার স্বামী আবুল খায়ের ইন্তেকাল করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তার সংসারে অভাব অনটন নেমে আসে। স্বচ্ছল সংসারের হানা দেয় অনটন আর দারিদ্র। তিন ছেলে ও তিন মেয়ে লালন পালন করতে মাঠের জমি ও ভিটেমাটি বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পড়েন প্রতিজ্ঞা পালনে অটল সুখিরণ।

প্রতিবেশী আত্তাপ হোসেন বলেন, আমরা ছোট বেলা থেকেই দেখছি সুখিরণ নেছা ১২ মাস রোজা রাখেন। তিনি খুবই দরিদ্র এবং বসবাসের মতো তার কোনো বাড়িঘর নেই। সাপ ব্যাঙের সাথে ভাঙা ঘরে বসবাস করেন। এতো কষ্টের মধ্যেও তিনি রোজা ভাঙেন না। বড় ছেলের অবস্থা ভাল না। কোনো রকম তার সংসার চলে।

যে ছেলের জন্য সুখিরণ নেছা ১২ মাস (৫ দিন ব্যতিত) রোজা রাখেন সেই বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম জানান, আমার জন্য মা কষ্ট করে রোজা রাখেন। আমি রোজা রাখতে নিষেধ করলেও তিনি শোনেন না। অসুখ বিসুখ হলেও তিনি রোজা ভাঙেন না। মায়ের এই অবদানের ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতো পারবো না। আমি যতটুকু পারি সহায়তা করি। তবে তিনি আমাদের মুখাপেখী না।

এলাকার ইউপি সদস্য ও মধুহাটী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান তহুরুল ইসলাম জানান, বৃদ্ধা সুখিরণ ওরফে ভেজিরণ নেছার ১২ মাস রোজা পালনের কথা চিন্তা করে তাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। তবে তার বাড়িঘর নেই। ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য দেশের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিৎ।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates