২০১৫ সালে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রাপ্তিতে দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের প্রবৃদ্ধি কমলেও বাংলাদেশে বেড়েছে এবং সেটা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশে এফডিআই এসেছে ২২৩ কোটি মার্কিন ডলার। আগেরবছর এসেছিল ১৫৫ কোটি ডলার। অর্থাত্ আগের বছরের তুলনায় এফডিআই বেড়েছে বা প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে জ্বালানি খাতে। এ খাতে এসেছে ৫৭ কোটি ডলার। আর বস্ত্র খাতে এসেছে ৪৪ কোটি ডলার। বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্পর্কিত জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনাইটেড ন্যাশন্স কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আঙ্কটাড) বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন-২০১৫ তে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
গতকাল বিনিয়োগ বোর্ডের সভাকক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. এস এ সামাদের সভাপতিত্বে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম ইসমাইল হোসেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত্ ও জ্বালানি-বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পালসহ আরো অনেকে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একই সঙ্গে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্রের ঘাটতি কোনো সমস্যা নয়। উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সুদক্ষ নেতৃত্বের। যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে। দেশকে উন্নত করতে এ ধরনের নেতৃত্বের প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। আর এফডিআই প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের তুলনা না দেওয়ার বিষয় উল্লেখ করে ড. তৌফিক বলেন, ভারতের মার্কেট সাইজ আমাদের চেয়ে অনেকগুণ বড়। তাদের মাথাপিছু আয়ও বেশি। এসব দেখে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করে। তাই ভারতে বেশি এফডিআই আসাই স্বাভাবিক। ড. তৌফিক আরো বলেন, আমরা কত টাকা এফডিআই পেয়েছি তার সংখ্যাগত হিসাব না করে সার্বিক উন্নয়নকে বিচার করতে হবে। আমাদের সামাজিক খাতের উন্নয়ন ও সার্বিক উন্নয়ন অনেক বেশি হয়েছে। আমাদের তরুণ সমাজের যে উদ্ভাবনী শক্তি রয়েছে তা দিয়েই দেশ এগিয়ে যাবে।
হারুনুর রশিদ বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণে এফডিআই কম হচ্ছে। দুর্নীতির প্রকোপ কমলে এফডিআই আরো বাড়ত। এ ছাড়া তিনি বিনিয়োগের কার্যকর ফলাফল পেতে শ্রমিকদের দক্ষতা ও উত্পাদনশীলতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন। সভাপতির বক্তব্যে ড. এস এ সামাদ বলেন, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি একটি বড় আলোচনার বিষয়। নৈতিকতার দিক থেকে এটি ধিক্কারের বিষয়। তবে দুর্নীতির মাধ্যমে যদি তৃতীয় পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে প্রকল্প বাস্তবায়ন বা কাজের গতি ত্বরান্বিত হয় তবে সেটাকে দুয়েকজন অর্থনীতিবিদ সমর্থন করেন। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে এফডিআই বাড়তে শুরু করেছে। এখন দুই বিলিয়ন ডলার পার হয়ে গেছে। এফডিআই বাড়ার পেছনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ভূমিকা রেখেছে উল্লেখ করে ড. সামাদ বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগের রিটার্নও ভালো। এ হার ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অর্থনীতির সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমাদের দেশেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বর্তমানে কিছুটা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকায় এফডিআই বেড়েছে। তবে এরসঙ্গে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা দরকার। এজন্য অবকাঠামো উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর প্রত্যক্ষ তদারকি বাড়ানো দরকার।
প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে এম ইসমাইল হোসেন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি এফডিআই এসেছে ভারতে। দেশটিতে এসেছে ৪৪ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা আগের বছরের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি। আর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি এফডিআই পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি চীনকে সরিয়ে এবার সর্বোচ্চ ৩৮০ বিলিয়ন ডলার এফডিআই পেয়েছে। এফডিআই প্রাপ্তিতে দ্বিতীয় স্থানে থাকা হংকং পেয়েছে ১৭৫ বিলিয়ন ডলার। তৃতীয় স্থানে থাকা চীন পেয়েছে ১৩৬ বিলিয়ন ডলার। এদিকে ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ বাড়লেও ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ কমবে বলে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
No comments:
Post a Comment