ফেসবুক যেহেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সেহেতু সেখানে সামাজিক শিষ্টাচার রক্ষা করা উচিত। বলা বাহুল্য, আমেরিকা, ইউরোপের সমাজ আর বাংলাদেশের সমাজ এক নয়, কাজেই শিষ্টাচারেও পার্থক্য হবে।
আজকে আমাদের ফেসবুক কেন্দ্রিক নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে কেউ কেউ এর যথার্থ ব্যবহার করতে পারেনি বলে। আপনি কেন ফেসবুক ব্যবহার করছেন সেটা না-বুঝলে মুশকিলেই পড়বেন, হয়তো বিপদেও পড়তে পারেন। ঝামেলা এড়াতে ফেসবুক ব্যবহারের নিয়ম নিয়মাবলী আদবকেতা সহ কিছু সাধারণ টিপস্ অনুসরণ করুন, আমি এগুলোকে শিষ্টাচার বা আদবকেতা বলবো:
- প্রথমতই মনে রাখুন, আপনি ফেসবুকে অনেকের সঙ্গেই সংযুক্ত, তারা সবাই এক ধরনের বন্ধু নয়। আত্মীয়, অফিসের সহকর্মী, স্কুলের বন্ধু, ব্যবসায়িক পার্টনার, অল্প পরিচিত কিংবা নেহাতই অপরিচিত লোকও আপনার ফেসবুকে আছে। কাজেই যে কোনো কিছু পোস্ট করার আগে ভাবুন, যা লিখছেন, বলছেন, দেখাচ্ছেন তা সবার জন্য উপযুক্ত কি-না।
- কমেন্ট করার সময় রসিক হওয়া ভালো, কিন্তু ভদ্রতার সীমা অতিক্রম করা বা আক্রমণাত্মক হওয়ার মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই। এবং দয়া করে ইংরেজি কিংবা বাংলা যে ভাষাতেই কমেন্ট করছেন তা নির্ভূলভাবে করুন। আপনার ভুল বানান ও বাক্য গঠন আপনার ব্যক্তিত্বকে বরবাদ করে দেবে।
- অন্যের ব্যবসায়িক পেজ বা গ্রুপে গিয়ে নিজের ফ্যানপেজ লাইক দিতে বলবেন না। আবার নিজেই নিজের ছবি কিংবা পোস্টে লাইক দিয়ে বসে থাকবেন না।
- ব্যবসা, খেলাধূলা, শিল্পসাহিত্য কিংবা অন্য কোনো পেজে অহেতুক ধর্ম আর রাজনীতি নিয়ে প্যাঁচাল পারবেন না, তাতে ক্যাঁচালই বাড়বে। বিশেষ করে ধর্ম আর রাজনীতি চর্চার জন্য ফেসবুক ব্যবহার করতে সতর্ক হোন। এই দুটো বিষয়েই মানুষের নিজস্ব মতামত আছে। কাজেই অন্যের মতকে অসম্মান করে কিছু লিখবেন না।
- গণহারে যেকোনো ছবি বা পোস্টে লাইক দেবেন না, তাতে আপনার লাইকের গুরুত্ব যেমন কমে, আপনার গুরুত্বও কমে।
- দিব্যি অন্যের স্ট্যাটাস কপি করে মেরে দেবেন না। মার্ক জাকারবার্গ সাহেব ছোট বড়, ধনী গরীব সবার জন্য স্ট্যাটাস দিয়েছেন, আপনি আপনার নিজেরটা দিন। অন্য কারো স্ট্যাটাস পছন্দ হলে কৃতজ্ঞতা সহ শেয়ার করুন।
- সারাদিন স্ট্যাটাস দিতে থাকবেন না। অনেকেই আছেন দিনে পাঁচটা দশটা করে স্ট্যাটাস, ছবি কিংবা কাব্য পোস্ট করতে থাকে। ভাইরে, মানুষকে আপনার লেখা বা ছবি হজম করার সময় দিন। আপনি সারাদিন ফেসবুক ভরে ফেললেন আর লোকজন দেখারই সময় পেলো না তাহলে লাভটা কী হলো। রিসার্চ বলে ছয় ঘণ্টা পর পর স্ট্যাটাস বা নতুন পোস্ট দিলে বেশি মানুষের নজরে আসা যায়। নইলে একটার ভিড়ে আরেকটা হারিয়ে যাবে। নির্দিষ্ট সময় বিরতি দিয়ে পোস্ট করুন।
- অন্যের বদনাম আর যেখানেই গান ফেসবুকে গাইবেন না। তাতে লোকে আপনাকে ভালো গায়ক মনে করবে না। ঈর্ষা, ঘৃণা, প্রতিশোধ ছড়ানোর জায়গা ফেসবুক না। মনে রাখবেন, ভদ্রতা বংশের পরিচয়। সেটা ফেসবুকেও বোঝা যায়। অহেতুক আক্রমণাত্মক হওয়া, অন্যকে ছোট করার চেষ্টা করা- এই সবই নেহাত অভদ্রতা।
- ফেসবুক আপনার দিনলিপি প্রকাশের জায়গা না। কোথায় বেড়াতে গেলেন, কী খেলেন, সকালের টয়লেট কেমন হলো, রাতের ঘুমের ব্যাঘাত- সকল ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ এড়িয়ে চলুন। আপনি যেমন বাস্তব জগতেও সমাজের সব স্থানে সবার সঙ্গে সব কথা শেয়ার করেন না, ব্যক্তিগত বলে কিছু আড়াল রাখেন, ফেসবুকেও তাই করুন। ফেসবুককে দিনলিপি হিসাবে ব্যবহার করা ৫৯% লোকই অপছন্দ করে। আপনি প্রতিদিন কী করছেন, আপনার কাজ কর্ম, শরীর, মন বেলায় বেলায় কেমন আছে – সেটা সবাই পছন্দ করতে না পারে।
- জোরে করে মানুষের প্রিয় হওয়ার চেষ্টা করবেন না। অন্যকে বিরক্ত করে কখনোই ভালো অবস্থানে যাওয়া যায় না। আপনার ছবি, কবিতা বা অন্য কোনো পোস্ট গণহারে ৫০/১০০ জন লোককে ট্যাগ করবেন না। অপ্রাসঙ্গিক হলে তো করবেনই না।
- অন্যের বিরক্তির কারণ হবেন না। ফেসবুকে বাণী চিরন্তনী মারা অনেকটাই নিজেকে জাহির করার সামিল। আমি কতো জ্ঞানী এটা মানুষ শুনতে চায়। জ্ঞান দেয়ার অনেক জায়গাই আছে কিন্তু ফেসবুকে অন্যের কোটেশন মেরে সেই জায়গা ভরাট করলে জায়গার অপচয়। রিসার্চ বলে বাণী চিরন্তনী ৬০% মানুষই বোরিং মনে করে। খাওয়া দাওয়ার ছবি ৪০% লোক বোরিং মনে করে।
- সাম্প্রতিক বিশ্বে বিভিন্ন নেশার সঙ্গে ফেসবুকও নেশা হিসাবে গণ্য হয়েছে। আপনি সিগারেট খান নাকি সিগারেট আপনাকে খায়, তেমনি খেয়াল রাখুন আপনি ফেসবুক ব্যবহার করেন নাকি ফেসবুক আপনাকে ব্যবহার করে! আপনার ফেসবুক আপনার চাকরী দাতা, হবু আত্মীয়, উচ্চপদস্থ, অধনস্ত, অনেকেই দেখছে। কাজেই ভাবিয়া ব্যবহার করুন ফেসবুক। সবচেয়ে সহজ হয়, মুখোমুখি আলাপের মতোই ফেসবুকের আলাপটিকেও প্রাসঙ্গিক রাখুন।
ধন্যবাদ সবাইকে। ভুল মনে করলে ক্ষমাদৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ রইল।
No comments:
Post a Comment