সমাজের একটি সুখী পরিবারকে চোখের পলকে তছনছ করে দিতে পারে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক। কেউ নিজের ইচ্ছায় এই নিষিদ্ধ সম্পর্কে জড়ান, আবার কেউ পরিস্থিতিতে জড়িয়ে পড়েন। আবার জীবনসঙ্গী মনের মতো না হলে কেউ কেউ সচেতনভাবেই পরকীয়া প্রেম করেন।
পরকীয়া প্রেমের কিছু লক্ষণ চট করেই বোঝা যায়। আবার কখনও কখনও দীর্ঘদিনেও তা ধরা যায় না। জেনে নিন আপনার জীবন সঙ্গী কারো সঙ্গে এরকম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে কি না তা বোঝার কিছু উপায়। এককথায় পরকীয়া প্রেম বোঝার সহজ উপায় কি কি, একটু লক্ষ করুন, তত বেশী কঠিন নয়।
ফোন বা ইন্টারনেটে আসক্তি
সঙ্গী যদি পাশে বসেও বা ঘুরতে গেলে ফোন নিয়েই ব্যস্ত থাকেন, মেসেজ বা ইন্টারনেট ব্রাউজিং করেন তাহলে তা অন্য একটি সম্পর্কেরই ইঙ্গিত। এছাড়া দিনের বেশিরভাগ সময়ে তাকে যদি ফোনালাপে ব্যস্ত পাওয়া যায় তাহলেও বিষয়টি লক্ষণীয়। অনেকে বলে থাকেন, প্রয়োজনে মানুষ ফোন বেশি ব্যবহার করতেই পারে। কিন্তু একটি বিষয় মনে রাখা দরকার, কাজের প্রয়োজনে ফোনালাপ এবং কারো সঙ্গে প্রেমময় ফোনালাপের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কেবল ফোন নয়, ফেসবুক কিংবা অন্যান্য যোগাযোগের মাধ্যমের প্রতি আসক্তির মাত্রার ওপরও নজর রাখুন।
আপনার পরিবারের পেছনে কম সময় দিলে
ভালো করে আপনার সঙ্গীর প্রতিদিনকার কাজকর্ম লক্ষ্য করুন। যদি বুঝতে পারেন যে আগের চাইতে কম সময় পাচ্ছেন, তাহলে বোঝার চেষ্টা করুন সেই বাড়তি সময়টা তিনি কীভাবে ব্যয় করছেন। আপনি তাকে সময় দেয়ার কথা বলে দেখুন, একসঙ্গে বসে টিভি দেখার কথা বলুন, তাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান, আত্মীয়-স্বজনদের ও পারিবারিক বন্ধুদের সময় দেয়ার কথা বলুন। তিনি যদি আপনাকে অজুহাত দেখিয়ে না বলেন তাহলে জানার চেষ্টা করুন অজুহাতটি সত্যি কিনা। সঙ্গী যদি অকারণে পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেন, তাহলে ধরে নিতে পারেন তিনি পরকীয়া প্রেম নিয়ে ব্যস্ত।
নতুন কোন নাম
সঙ্গীর মুখে যদি নতুন কোন নাম ঘন ঘন শুনতে পান, তবে একেও পরকীয়ার লক্ষণ হিসেবে নিতে পারেন। সঙ্গীর যে বন্ধুটির কথা আগে কখনো শোনেননি, এমন কারো কথা ঘনঘন শুনলে তাকে জিজ্ঞেস করুন এবং তার মুখের ভাব লক্ষ্য করুন। যদি তিনি প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান কিংবা তার মুখের অভিব্যক্তি বদলে যায় তবে বিষয়টি অবশ্যই চিন্তার।
অকারণে রেগে যাওয়া
খেয়াল করে দেখুন, আগে যে বিষয়গুলো আপনার সঙ্গীর রাগের উদ্রেক করতো না সেসব বিষয়ে কি তিনি রেগে যাচ্ছেন? কিংবা কথায় কথায় আপনাদের দাম্পত্য জীবনকে অভিশাপ হিসেবে অভিহিত করছেন? তার এসব কথার কোন যুক্তি আছে কিনা এইসব ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করুন। বিনা কারণে অযৌক্তিক রাগ করা, সবসময় খিটখিট করা এটাও একটি পরকীয়া প্রেম এর লক্ষনের মধ্যে অন্যতম লক্ষণ।
যৌনসম্পর্কে উদাসীনতা
সঙ্গী যদি আপনার সাথে যৌনসম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন, তাহলে আপনি এটি পরকীয়ার নিশ্চিত লক্ষণ হিসেবে ধরে নিতে পারেন। আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী নন মানে তার চাহিদাটি পূরণ হচ্ছে অন্য কারো মাধ্যমে। এছাড়াও স্রেফ আপনাকে খুশি করতে অভ্যাসবশত যৌন সম্পর্ক করছেন কিনা, সেটিও লক্ষ্য করুন।
হঠাৎ নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে অতিরিক্ত সচেতন হয়ে পড়া
আপনার স্ত্রী যদি হঠাৎ নিজের ত্বক, সাজগোজ, ফিগার কিংবা পোশাকের দিকে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে শুরু করেন, তাহলে আপনি একে পরকীয়ার একটি লক্ষণ হিসেবে ধরে নিতে পারেন। এখানে একটি বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া দরকার যে সঙ্গী আপনার জন্যই নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করছেন কিনা।
স্ত্রীর পরকীয়া প্রেম হাতেনাতে ধরবেন কিভাবে? একটু লক্ষ্য করুন
সম্পর্কে সমস্যা হতেই পারে। হতে পারে তা প্রেমিক কিংবা প্রেমিকার সাথে, হতে পারে বন্ধু কিংবা কলিগের সাথে, হতে পারে স্বামী-স্ত্রী-মা-বাবা কিংবা ভাই-বোনের সাথেও। সম্পর্কের কোনো নিয়ম তো নেই যে সূত্র দিয়ে সমাধান করে ফেললেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সমস্যাগুলো আমরা মনের মাঝে নিয়ে ঘুরি, প্রতিদিন তিল তিল করে কষ্ট পাই। কাউকে মনের কথা বলতে পারি না, বের হয়ে আসে না কোনো সমাধানও। সম্পর্কের ব্যাপারে আপনার সেই না বলা কথাগুলো নিয়েই আমার নিয়মিত ব্লগ- এখানে আপনি পাবেন প্রাত্যাহিক জীবনের নানা ধরণের অসাধারণ প্রয়োজনীয় টিপস্ হতে শুরু করে দাম্পত্য কিংবা পারিবারিক নানা খুঁটিনাটি সমস্যার সমাধান। যত্নে থাকুক আপনার প্রিয় সম্পর্কগুলো, ভালোবাসার সম্পর্কগুলো।
আসুন আসল কথায় :-
আপনি নিশ্চিত যে আপনার স্ত্রী পরকীয়া প্রেম করছেন অন্য কোন পুরুষের সাথে, কিন্তু আপনার কাছে কোন প্রমাণ নেই। কীভাবে তাঁকে হাতেনাতে ধরবেন? কীভাবে প্রমাণ করবেন স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক?
সমাধান:-
সত্যি কথা বলতে কি, মানুষের মন তো, তাকে বেঁধে রাখার কোন উপায় নেই। স্ত্রী যদি আপনাকে ফেলে অন্য কোন পুরুষের প্রেমে মত্ত থাকেন, সেটা আপনার দুর্ভাগ্য। তবে দাম্পত্য কিংবা ভালোবাসায় পরকীয়া হচ্ছে এমন একটি বস্তু, যা কেবল সন্দেহের ভিত্তিতে সত্য ধরে নেয়া ঠিক না। বরং চাই হাতেহাতে প্রমাণ। বলাই বাহুল্য যে, যিনি পরকীয়া করেন তিনি কাজটি খুব লুকিয়েই করেন। আর তাই হাতেনাতে পাকড়াও করাটাও একটু কঠিনই বটে। কিন্তু সন্দেহ নিয়ে চুপচাপ বসে থাকলে আপনার মানসিক অশান্তি বাড়বে ক্রমশ। তাই বিষয়টা প্রমাণ করা জরুরী। আপনার নিজের জন্য তো বটেই, সম্পর্কের ভবিষ্যতের জন্যও। এইসব প্রমানের ওপরে ভিত্তি করেই সম্পর্কের বাকি পথটা তৈরি হবে, এবং আপনি ঠিক করতে পারবেন নিজের করণীয়।
যা করবেন-
প্রথমেই সন্দেহের বশে চিল্লাচিল্লি বা রাগারাগি করে স্ত্রীকে সচেতন করে দেবেন না। তাতে সে আরও সতর্ক হয়ে যাবে আর আপনি কখনো তাঁকে ধরতে পারবেন না। খুব স্বাভাবিক থাকুন, তাঁকে আগে যেমন বিশ্বাস করতেন তেমনই আচরণ করুন। কেউ যেন কিছুই বুঝতে না পারে। কাজটি খুব কষ্টের, কিন্তু এই কষ্টটুকুন করতে হবেই আপনাকে, অর্থাৎ নীরবে সহ্য করা।
এবার ছোট ছোট কিছু বিষয়ে নজর দিন। খেয়াল করে দেখুন, তিনি সংসারের চাইতেও বেশী মনযোগী কোন কাজে? মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকেন খুব! সারাদিন ফেসবুকিং করেন? নাকি বাইরে আড্ডা দেন খুব? চাকরিজীবী হলে তার কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে একটু খোঁজখবর করুন, বাড়ির কোন পুরুষ আত্মীয়ের সাথে “বিশেষ” সম্পর্ক আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখুন। একটু মনযোগ দিয়ে খতিয়ে দেখলেই বিষয়টা বুঝতে পারবেন যে প্রেমিকের সাথে যোগাযোগ মাধ্যম কোনটা কিংবা প্রেমিকটি কে।
এবার আসুন মোবাইলের প্রসঙ্গে। পরকীয়া তিনি যে মাধ্যমেই করে থাকুন না কেন, সেলফোনে যোগাযোগ অবশ্যই হয়। অনেক সময় হতে পারে যে সম্পর্কটি কেবল ফোনেই। সুযোগ পাওয়া মাত্র তার ফোনটি চেক করুন। কাজটি অন্যায়, তবে যুদ্ধ আর ভালোবাসায় সবই ঠিক। ফোনে যা পাবেন, সেগুলোর একটি কপি নিজের ফোনে ট্রান্সফার করুন। ছবি, মেসেজ সব। নম্বরগুলোও টুকে রাখুন।
স্ত্রীর ফোন কিছুতেই হাতের নাগালে পাচ্ছেন না? তিনি সর্বদা নিজের কাছে রাখেন? বা ফোন চেক করার মত পর্যাপ্ত সুযোগ পাচ্ছেন না? এক্ষেত্রে একটি কাজ করুন, ফোনটি সরিয়ে ফেলুন। ঘর থেকে প্রতিদিন তো কত কিছুই হারায়, একটি ফোনও হারাতে পারে। হ্যাঁ, এটাও নৈতিকতা বিরুদ্ধ কাজ। কিন্তু স্ত্রী যা করছেন, সেটাও তো তাই। ফোনটি চেক করা হলে না হয় আবার ঘরের কোথাও ফেলে রাখবেন। খুঁজতে খুঁজতে ঠিকই পেয়ে যাবেন। ফোন থেকে ফেসবুকিং করার অভ্যাস থাকলে এই ফোনের মাধ্যমে তার ফেসবুকেও ঢুকতে পারবেন। এক্ষেত্রে ফেসবুকটাও চেক করুন। যা পাবেন, চেষ্টা করুন তথ্যগুলো সব সংরক্ষণ করতে।
আপনার সন্দেহ হয় স্ত্রী অন্য কারো সাথে ঘুরছেন? তাহলে এবার পালা হাতে নাতে ধরার। আপনি না থাকলে তিনি নিশ্চয়ই সেই লোকের সাথে যোগাযোগ করেন। স্ত্রী কি সারাদিন বাসায় একা থাকেন? তাহলে এক কাজ করুন, মাঝে মাঝেই অপ্রত্যাশিত ভাবে অফিস থেকে বাসায় চলে আসুন। এতেও যদি ধরতে না পারেন, তাহলে কয়েকদিন ট্যুরের নাম করে বাসা থেকে বের হন। অন্য কোন হোটেলে উঠে স্ত্রীর গতিবিধির দিকে নজর রাখুন। একেবারে নিশ্চিত ধরতে পারবেন স্ত্রীর প্রেমিককে।
স্ত্রীকে নিয়ে দূরে কোথাও বেড়াতে যান, এটি সবচাইতে কার্যকরী উপায়। পরকীয়ায় মত্ত থাকলে স্ত্রী কখনোই আপনার সাথে একটানা অনেক দিন ছুটিতে অন্য কোথাও যেতে চাইবেন না। তারপরও তাঁকে নিয়ে যান, কেবল আপনারা দুজন। একাধিক সুযোগ বের হয়ে আসবে তাঁকে হাতেনাতে ধরার।
মনে রাখবেন
স্ত্রীর পরকীয়া প্রেম ধরতে গিয়ে কখনো সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন না। বাড়ির কাজের বুয়া, ড্রাইভার বা অন্য কাউকেও জিজ্ঞেস করবেন না। হ্যাঁ, বাড়িতে যদি আপনার মা কিংবা অন্য কোন আপনজন থাকে, তাঁদের সাহায্য নিতে পারেন। এমন কারো, যাকে আপনি খুব বিশ্বাস করেন। তাঁদেরকে বলুন আপনার মনে কষ্টের কথা। এবং স্ত্রী কী করছেন, না করছেন একটু নজর রাখতে বলুন।
অনেকেই আছেন, যা এত ধুরন্ধর যে কিছুতেই তাঁদের হাতেনাতে ধরা যায় না। যদি আপনি নিশ্চিত জেনে থাকেন যে স্ত্রী পরকীয়া প্রেম করছেনই, তাহলে তাঁকে টাকা পয়সা বা আর্থিক সাপোর্ট দেয়া বন্ধ করে দিন। ফলে ঝগড়া শুরু হবে। আর এই ঝগড়া থেকে ক্রমশ এমন অবস্থা তৈরি হবে যে হয় স্ত্রী নিজেই প্রকাশ করে দেবেন, কিংবা এমন ভুল করে বসবেন যে ধরা পড়ে যান। মনে রাখবেন, অন্যায় কখনো চাপা থাকে না, আর সত্য কোন দিন গোপন থাকে না। তাই আজ না হোক কাল, ধরা তিনি পড়বেনই। তবে এ ব্যাপারে আপনার একটু ধৈর্য্য বেশী কাজে আসবে।
সবচাইতে বড় যে কথা, ভেঙে পড়বেন না। চেষ্টা করুন মনকে শক্ত রাখতে। প্রতারকের জন্য কষ্ট পাওয়ার মানে নেই, এ কথা মনে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যান, সফলতা আসবেই একদিন। ধন্যবাদ সবাইকে ……. ভাললাগলে শেয়ার করুন।
No comments:
Post a Comment